খবরে আমরাঃ ডিভিশন বেঞ্চে সাময়িক স্বস্তি পেলেন স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তি প্রসাদ সিনহা। শুক্রবার তাঁকে সিবিআই জেরার উপরে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিল বিচারপতি সৌমেন সেন ও বিচারপতি অজয় মুখোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ। তবে সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশ মতো সিবিআই আপাতত এই চতুর্থ শ্রেনীর কর্মী নিয়োগের অভিযোগের তদন্ত করতে পারবে। চলবে অনুসন্ধানও। তবে এখনই সিবিআই এই ঘটনায় কোনও অভিযোগ দায়ের করতে পারবে না। আগামী সোমবার পর্যন্ত এই অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ থাকবে বলে জানিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। বৃহস্পতিবার সিঙ্গল বেঞ্চের সিবিআই জেরার নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে রাতেই প্রধান বিচারপতির বাস ভবনে গিয়ে মামলা দায়ের করার অনুমতি চান শান্তিপ্রসাদ। সেই আবেদনও মঞ্জুরও হয়। যদিও মধ্যরাতে নিজেই সিবিআই অফিসে গিয়ে জেরার মুখোমুখি হন শান্তিপ্রসাদ। এদিন সকালে তাঁর আবেদনটি পৃথক ডিভিশন বেঞ্চে শুনানির জন্য নির্দিষ্ট হয়। তার আগেই সিঙ্গল বেঞ্চে সিবিআই বৃহস্পতিবারের জেরা নিয়ে তাদের মুখবন্ধ খামে রিপোর্ট জমা দেয় সিঙ্গল বেঞ্চে। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া ৯৮ জনেরই চাকরী থেকে বরখাস্তের নির্দেশ দিয়ে জানিয়ে দেন, তারা যাতে স্কুলে না ঢুকতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে জেলা স্কুল পরিদর্শককে। পাশাপাশি এদিনের মধ্যেই উপদেষ্টামন্ডলীর বাকী চারজনকেই জেরা করে আগামী সোমবার রিপোর্ট দিতে হবে সিবিআইকে। সিবিআই চাইলে নিজেই অভিযোগ দায়ের করে তদন্ত করতে পারবে। সিবিআই চাইলে শিক্ষামন্ত্রীর আপ্তসহায়ক, ওএসডি, ডেপুটি ডিরেক্টর বা কোনও রাজনৈতিক প্রভাবশালীকে জেরা করতে পারবে বলে জানিয়ে দেয় সিঙ্গল বেঞ্চ। কিন্তু ডিভিশন বেঞ্চে শান্তিপ্রসাদ দাবী করেন, তাঁর নাম মামলায় নেই বা কোনও অভিযোগও দায়ের হয়নি। তবে কীভাবে সিবিআই জেরা করছে। বিচারপতি সৌমেন সেন প্রশ্ন তোলেন, অভিযোগ দায়ের না করে কীভাবে সিবিআই জেরা করতে পারে। প্রথমে অনুসন্ধান করবে, তারপর তদন্ত শুরুর নিয়ম এফআইআর করে। যদিও অবৈধ নিয়োগকে চ্যালেঞ্জ করা মামলাকারীদের দাবী, শান্তিপ্রসাদ যেহেতু হাজিরা দিয়ে ফেলেছেন তাই এই মামলা গ্রহণযোগ্য নয়। শান্তুপ্রাসাদের দাবী, ডিভিশন বেঞ্চে স্থগিত থাকা মামলার উপরে সিঙ্গল বেঞ্চ নির্দেশ দিচ্ছে শুনানির পরে। ডিভিশন বেঞ্চ প্রশ্ন তোলে, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে তদন্ত চলার মাঝেই কীভাবে সিবিআই তদন্ত করতে পারে।
‘সরাসরি জিজ্ঞাসাবাদ কী ভাবে বলতে পারেন বিচারপতি?’
সিবিআই তদন্ত না বলে সরাসরি জিজ্ঞাসাবাদ কী ভাবে বলতে পারেন বিচারপতি? শুক্রবার সেই প্রশ্ন তুলেছে ডিভিশন বেঞ্চ। আদালতের প্রশ্ন, যেখানে আদালত কমিটি গঠন করে দিয়েছে এই সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ কী ভাবে সম্ভব? ডিভিশন বেঞ্চের দাবি, সিবিআই অসুবিধার মুখে পড়বে কারণ এই মামলায় প্রাক্তন বিচারপতি তদন্তের ভার পেয়েছেন।
মামলাকারীদের আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য, এ দিনের শুনানিতে বলেন, ‘এটা এমন একটি মামলা যেটির সঙ্গে মন্ত্রীরা যুক্ত। শিক্ষা দফতর যুক্ত। প্রাথমিক অনুসন্ধানের কথা বলা হয়েছে। রোজ নতুন মামলা হচ্ছে। সিঙ্গল বেঞ্চের ক্ষমতা আছে এটা করার।’
শান্তি প্রসাদ সিনহাকে কোনও সুযোগ ছাড়াই সরাসরি জিজ্ঞাসাবাদ করতে বলেছেন বিচারপতি। এটা বেআইনি বলে উল্লেখ করেছে ডিভিশন বেঞ্চ। শান্তি প্রসাদকে কিং পিন বলে আদালত অনুমান কেন করছে? সেই প্রশ্নও উঠেছে। গ্রুপ ডি-র আরও একটি মামলা ডিভিশন বেঞ্চে চলছে।
‘হাই পাওয়ার কমিটির সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করার নির্দেশ বহাল’
বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘আপাতত এফআইআর করা যাবে না। পাশাপাশি তিনি আরও জানান, স্কুল শিক্ষা দফতরের হাই পাওয়ার কমিটির সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করার যে নির্দেশ সিঙ্গল বেঞ্চ দিয়েছে, তা এখনও বহাল আছে।’
ফের সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশে স্থগিতাদেশ
গত মাস দুয়েকের মধ্যে নিয়োগ দুর্নীতিতে সিঙ্গল বেঞ্চের দেওয়া চারটি সিবিআই অনুসন্ধানের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে। গত বুধবার সেই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এমনকি তিনি দেশের প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপও দাবি করেন। তাঁর প্রশ্ন ছিল, কার নির্দেশে বারবার সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ে স্থগিতাদেশ দেওয়া হচ্ছে? এরপর বৃহস্পতিবার ফের সিবিআই তদন্তের নির্দেশ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সেই নির্দেশ মেনে, বৃহস্পতিবার রাতেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তি প্রসাদ সিনহাকে। ফের সেই নির্দেশেও স্থগিতাদেশ দিল ডিভিশন বেঞ্চ।