নবরাত্রির পঞ্চম দিনে আরাধনা করা হয় দেবী স্কন্দমাতার। দেবসেনাপতি কার্তিকের অপর নাম স্কন্দ। তিনি দেবী পার্বতীর সন্তান। স্কন্দমাতা রূপে তাই দেবীকে কার্তিকের জননী হিসেবে কল্পনা করা হয়। আশ্বিন এবং চৈত্রের নবরাত্রিতে মহাদেবীকে স্কন্দমাতা রূপে আরাধনা করেন ভক্তরা।
নবরাত্রির নয় দিনের উৎসবে দেবী দুর্গার নয়টি রূপ – শৈলপুত্রী, ব্রহ্মচারিণী, চন্দ্রঘণ্টা, কুশমণ্ডা, স্কন্দমাতা, কাত্যায়নী, কালরাত্রি, মহাগৌরী এবং সিদ্ধিদাত্রীকে উৎসর্গ করা হয়। নবরাত্রির পঞ্চম দিনে মা স্কন্দমাতার পূজা করার নিয়ম রয়েছে। পঞ্জিকা মতে, ২০২৪ সালে স্কন্দমাতার পূজা করা হবে ১৩ এপ্রিল, শনিবার। দেবীকে খুশি করার জন্য প্রায় সবাই এই দিনে সাদা রঙের পোশাক পরেন। এই রঙ বিশুদ্ধতা, শান্তি এবং ধ্যানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
দেবী স্কন্দমাতা (Maa Skandhamata) চতুর্ভুজা। তাঁর ওপরের দুই হাতে থাকে পদ্মফুল। আর, নীচের একহাতে তিনি স্কন্দ বা কার্তিকেয়কে ধরে রাখেন। অন্য হাত থাকে বরযুক্ত মুদ্রা বা আশীর্বাদসূচক ভঙ্গিমায়। দেবী পদ্মাসনা রূপে থাকলেও, তাঁর বাহন সিংহ সঙ্গেই থাকে। দেবীর কোলে থাকে স্কন্দ বা শিশু কার্তিক। যাঁর হাতে থাকে তির-ধনুক। কিন্তু, তাঁর মুখ তথা মাথা ছয়টি। দক্ষিণ ভারতে অবশ্য এই কার্তিকেরই উপাসনা হয়। সেখানে দেবসেনাপতি কার্তিককে বলা হয় মুরুগান। দক্ষিণ ভারতে অনেকে আবার কার্তিককে ডাকে সুব্রহ্মণ্যম নামে।
শিবপুরাণের রুদ্রসংহিতা কুমার খণ্ড অনুযায়ী, মহাপরাক্রমী অসুর তারকাসুরকে বধ বা হত্যা করতেই দেবসেনাপতি কার্তিকেয় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তারকাসুর অত্যন্ত অত্যাচারী হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর অত্যাচারে মুনি-ঋষি থেকে দেবতা, সকলেই অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। শিবের (Siva) যাতে সন্তান না-হয়, সেজন্য তারকাসুর শিব-দুর্গার বিয়েতেও বাধা দিয়েছিলেন। কিন্ত, তাতে লাভ হয়নি। সেই বিয়ে হয়েছিল। যথাসময়ে জন্ম হয়েছিল দেবসেনাপতি কার্তিকেয় বা কার্তিকের।
পুরাণ অনুয়ায়ী, দেবী স্কন্দমাতার আশীর্বাদ অত্যন্ত কার্যকরী। তাঁর আশীর্বাদে ভক্তদের যাবতীয় মনোস্কামনা পূরণ হয়। জীবন শান্তিময় হয়ে ওঠে। দেবী স্কন্দমাতা তেজ, শৌর্য, পরাক্রম, বিদ্যা ও অভয়দানের প্রতীক। সাধকদের একাংশের মতে, তিনি দেহের বিশুদ্ধ চক্রে অধিষ্ঠিতা। নবরাত্রির পঞ্চম দিনে দেবী স্কন্দমাতার আরাধনা করলে বিদ্যার প্রাপ্তি, বল ও শত্রুবিনাশ ঘটে। এই দেবীর আরাধনা করলে সঙ্গে কার্তিকের আরাধনাও হয়ে যায়।
কাশী তথা বারাণসীতে (Venaras) দেবী স্কন্দমাতার মন্দির রয়েছে। কাশীর নাগকুরার কাছেই রয়েছে দেবী স্কন্দমাতার মন্দির। মন্দিরের গর্ভগৃহটি ছোট হলেও স্কন্দমাতার বিগ্রহের আয়তন যথেষ্ট বড়। আশ্বিন এবং চৈত্রের নবরাত্রির (Navratri 2024) পঞ্চমীর দিন কাশীর এই মন্দিরে ব্যাপক ভক্তসমাগম ঘটে।
মা স্কন্দমাতার মন্ত্র
ওম দেবী স্কন্দমতয়ে নমঃ
ওম দেবী স্কন্দ মাতায়াই
শুভদাস্তু সদা দেবী স্কন্দমাতা যশস্বিনী
মা স্কন্দমাতার প্রার্থনা
সিংহাসনগত নিত্যম পদ্মঞ্চিত করদ্বয়
শুভদাস্তু সদা দেবী স্কন্দমাতা যশস্বিনী
স্কন্দমাতার পুজো পদ্ধতি
মা স্কন্দ মাতার মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পুজো শুরু করুন। পরে গঙ্গা জল বা গোমূত্র দিয়ে প্রতিমা শুদ্ধ করুন। জলে ভরা রূপা, তামা বা মাটির পাত্রে একটি নারকেল রেখে একটি কলস স্থাপন করুন। পুজোর জন্য সংকল্প নিন এবং উপবাস করুন, তারপর সমস্ত প্রতিষ্ঠিত দেবতার সঙ্গে ৫ তম নবরাত্রির দিন মায়ের ষোড়শোপচার পুজো করুন। বৈদিক ও দুর্গা সপ্তসতীর মন্ত্র জপ করুন। তারপর, সমস্ত প্রাসঙ্গিক উপাসনা সামগ্রী সমস্ত মাকে নিবেদন করুন। সবশেষে স্কন্দমাতার আরতি করুন এবং স্কন্দমাতার ব্রতকথা পাঠ করুন ।
স্কন্দমাতার গল্প-
একটি কিংবদন্তী অনুসারে, কথিত আছে যে তারকাসুর নামে এক অসুর ছিল। যার শেষ সম্ভব হয়েছিল একমাত্র শিবের পুত্রের হাতেই। মা পার্বতী তখন তার পুত্র স্কন্দকে (কার্তিকেয়) যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দিতে স্কন্দমাতার রূপ ধারণ করেন। ভগবান কার্তিকেয় স্কন্দমাতার কাছ থেকে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়ে তারাকাসুরকে বধ করেন।
স্কন্দমাতা এই নামেও পরিচিত-
স্কন্দমাতা হলেন হিমালয়ের কন্যা পার্বতী। তিনি মহেশ্বরী এবং গৌরী নামেও পরিচিত। পর্বতরাজ হিমালয়ের কন্যা হওয়ায় তাকে পার্বতী বলা হয়। এছাড়াও, মহাদেবের স্ত্রী হওয়ার কারণে তাকে মহেশ্বরী নাম দেওয়া হয়েছিল এবং তার ফর্সা গায়ের কারণে তাকে গৌরী বলা হয়। মা তার ছেলেকে খুব ভালোবাসে। এই কারণেই একজন মা তার ছেলের নাম ধরে ডাকতে পছন্দ করেন। বিশ্বাস করা হয় যে ভক্তরা যখন মা স্কন্দমাতার গল্প পাঠ করেন বা শোনেন, মা সন্তানের সুখ ও সমৃদ্ধির বর দেন।