আজ দশ মহাবিদ্যার অন্তিম রূপ দেবী কমলা নিয়ে আলোচনা করবো জানবো তার তার রূপের অন্তরনিহিত তাৎপর্য ও পৌরাণিক ব্যাখ্যা| দশমহাবিদ্যার শেষ বা দশম রূপ ঐশ্বর্য লক্ষ্মী কমলা (Maa Kamala) ।
দেবী কমলে কামিনী বা কমলা দশ মহাবিদ্যার দশম মহাবিদ্যা। ইনি চন্দ্রের (Moon) ঈষ্টদেবী। মা কমলা হলেন ধনসম্পদ, আধ্যাত্মিক সম্পদ, সৌভাগ্য ও সৌন্দর্যের দেবী।সেইসাথে তিনি বরাভয় প্রদায়িনী শুদ্ধ চৈতন্যের দেবী।তাঁকে তান্ত্রিক লক্ষ্মীও (Maa Laxmi) বলা হয়।
কমলা হচ্ছে পদ্মের (Lotus) প্রতিশব্দ। কমলে কামিনী দেবীর যে রুপ কল্পনা করা হয় তাতে দেখা যায় যে, দেবীকে চারটি বড় হাতি স্নান করাচ্ছেন এবং দেবী পন্মের উপর অধিষ্ঠিতা (Ten Mahabidya) । তার চারটি হাত। দেবীর চারটি হাতে দুটি পদ্ম ও বরাভয় মুদ্রা। মাথায় রত্নমুকুট,দেবী পট্টবস্ত্র-পরিহিতা (Spiritual) ।
তাঁর সম্বন্ধে শাস্ত্র বলছে –
“কান্ত্যা কাঞ্চনসন্নিভাং হিমগিরি প্রখ্যৈশ্চতুর্ভি র্গজৈঃ। হস্তোৎক্ষিপ্ত-হিরন্ময়ামৃতঘটরাসিচ্যমানাং শ্রিয়ম্। বিভ্রানাং বরমব্জযুগ্মং অভয়ং হস্তৈঃ কিরীটোজ্জ্বলাং। ক্ষৌমাবদ্ধনিতম্ববিম্বললিতাং বন্দে অরবিন্দস্থিতাম্।”
সর্বসৌভাগ্যদায়িনী এই মহালক্ষ্মী কমলার আবির্ভাব হয় ফাল্গুন মাসের একাদশী তিথি অথবা শুক্রবার বা মঙ্গলবারে যে তিথি হয় সেই তিথিতে। এই কমলা হলেন মা লক্ষ্মীর তান্ত্রিক রূপ।
যদিও মা কমলা বিষ্ণুর ঘরণী রূপেই পরিচিত কিন্তু কমলার ধ্যানমন্ত্রে বিষ্ণুর উল্লেখ বা তাঁর মধ্যে বিষ্ণুর ঘরণী রূপ কিন্তু তাঁর ধ্যানমন্ত্রে পাওয়া যায় না। কমলা রূপে তাঁকে একাই দেখা যায় -এই দশ মহাবিদ্যার দশম মহাবিদ্যা রূপে তিনি স্ত্রী রূপে প্রকাশিত হন নি। এখানে তিনি শুধুই যোগ ও তন্ত্রের সাথে যুক্ত।
দেবী কমলার উৎপত্তি হয় সমুদ্র মন্থনের সময়। দেবী কমলা চতুর্ভূজা। দেবীর ডান হাতে পারিজাত পুষ্প, বাম হাতে বরমুদ্রা, সমুদ্রের মধ্যে দেবী প্রস্ফুটিত পদ্মে আসীন। দুই পাশে দুইটি হাতি শুড় দিয়ে কলসে করে জল নিয়ে দেবীকে স্নান করাচ্ছে। দেবী কমলা হচ্ছেন ইচ্ছাপূরণের দেবী।
মূলত জাগতিক সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধি তিনি তাঁর ভক্তদের দেন। কমলাকে গজলক্ষ্মীও বলা হয়।দেবীর এই রূপটি জাগতিক বন্ধনের রূপ। দেবী কমলা ঐশ্বর্য, সুখ, শান্তি, সৌভাগ্য, সৌন্দর্য, প্রীতি ও করুনা প্রদান করেন। পদ্মের উপর তিনি বিরাজমানা এই পদ্ম উর্বরতা,আধ্যাত্মিকতা ও কর্তৃত্বের প্রতীক। যে হাতি দুটি তাঁকে স্নান করাচ্ছে তা বিশালত্ব ও ঐশ্বর্যের প্রতীক।
সাধারনত দেবীর পূজা করা হয় জাগতিক লাভের জন্যে। মা কমলা একাধারে বিশুদ্ধতা,পবিত্রতা, সমৃদ্ধি ও সম্পদ, উর্বরতা ও ফসল, এবং সৌভাগ্যের প্রতীক আবার চন্ডীমঙ্গল গ্রন্থে চণ্ডীর একরূপ কমলে কামিনী।দীর্ঘ সমুদ্র যাত্রায় বনিক ধনপতির ছটি ডিঙা একসময়ে সমুদ্রে ডুবে যায়।
তারপর কোন রকমে একটি ডিঙা আশ্রয় করে ধনপতি কালীদহে পৌঁছেন। সেখানে দেবী চণ্ডী তাকে ‘কমলে-কামিনী’ মূর্তি দেখান। ধনপতি সিংহলে গিয়ে সেখানকার রাজাকে কমলে-কামিনী’র কথা বলেন কিন্তু রাজা তা বিশ্বাস না করে তাকে কারাগারে বন্দি করেন।পরবর্তী ঘটনাবলী হয়তো আপনারা জানেন|
পুরান মতে দেবী কমলা মহর্ষি ভৃগুর কন্যা।সাধারনত গৃহস্তর বাড়িতে দশ মহাবিদ্যার এই বিশেষ রুপ সম্পদ,উন্নতি এবং সৌভাগ্য প্রদানের জন্যে পূজিতা হয় বহু কাল থেকে|বৈদিক জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুসারে শুক্রগ্রহের ইষ্টদেবী কমলা বা কমলেকামিনী তিনিই মহাশক্তি, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্ত্রী তিনিই। তিনিই বিশ্বের সব সম্পদের অধিষ্ঠাত্রী। তিনি সমৃদ্ধির দেবী।কমলা সাধককে ধন-ধান্যে ভরিয়ে রাখেন। কমলার পুজো সমস্ত ধরনের ভয় থেকে মুক্ত রাখে।
ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ অনুযায়ী, মহালক্ষ্মীই সর্বব্যাপী মহাশক্তি।মার্কন্ডেয় পুরাণে মধ্যমচরিত্রের দেবতা অষ্টাদশভুজা মহালক্ষ্মী। তাঁর গাত্রবর্ণ প্রবালের ন্যায় উজ্জ্বল এবং তিনিই স্বয়ং মহিষাসুরমর্দিনী। এই শ্রী শ্রী চন্ডীরই প্রাধানিক রহস্যেও মহালক্ষ্মীকেই ত্রিগুণা পরমেশ্বরীরূপে বন্দনা করা হয়েছে।
কমলা মন্ত্র : ওম হ্রীম অষ্ট মহালক্ষ্ম্যায় নমঃ।
চন্দ্র গ্রহের নিয়ন্ত্র দেবী কমলা। গ্রহ শান্তির জন্য মানুন এই পদ্ধতি—
বীজমন্ত্র- ওঁ ঘৌং স্রৌং সঃ।
জপসংখ্যা- ১১,০০০ বার।
পূজ্য উপকরণ- ধেনু, শ্বেতপুস্প, মিষ্টদ্রব্য, সুগন্ধিদ্রব্য।
ভোগ্যদ্রব্য- ঘৃত পরমান্ন।
দানদ্রব্য- বস্ত্র, রৌপ্য, ঘৃতপূর্ণ কুম্ভ, যুগোপযুক্ত বৃষ।