www.machinnamasta.in

ওঁ শ্রীং হ্রীং ক্লী গং গণপতয়ে বর বরদ সর্বজনস্ময়ী বশমানয় ঠঃ ঠঃ

December 4, 2024 8:40 am
maa bagalamukhi

বগলামুখী বা বগলা (দেবনাগরী: बगलामुखी) হলেন হিন্দু দশমহাবিদ্যা দেবমণ্ডলীর অন্তর্গত অন্যতম দেবী। তিনি ভক্তের মানসিক ভ্রান্তি নাশের (অথবা শত্রু নাশের) দেবী। তাঁর অস্ত্র মুগুর। উত্তর ভারতে তিনি পীতাম্বরী নামেও পরিচিত।

বর্ধমানে ভক্তদের মনের ইচ্ছা পূর্ণ করেত এবার তৈরী হচ্ছে মা বগলামুখীর মন্দির। পুলিশলাইন এলাকায় ইউুথ ক্লাব মাঠে তৈরি হচ্ছে এই মন্দির। আজ তারই ভিত্তিপ্রস্তর রাখা হল। তান্ত্রিক-পুরোহিত নারায়ণ শাস্ত্রীর নেতৃত্বে হল মন্দিরের ভিত পুজো। আশা পুজোর আগেই এবার বর্ধমান তথা দক্ষিণবঙ্গে প্রথম মা বগলামুখীর মন্দির ভক্তদের জন্য খুলে যাবে। এই সুযোগে জেনে নিন মা বগলামুখীর বিস্তারিত তথ্য-মন্ত্র-স্তোত্র।

দেবী বগলামুখীর স্বরূপ আলোচনার পূর্বে দশমহাবিদ্যা নিয়ে সামান্য হলেও বক্তব্যের প্রয়োজন আছে। কেন না, এই দশ মহাদেবীরই অন্যতমা হলেন বগলামুখী। মুণ্ডমাল তন্ত্র এই প্রসঙ্গে বলছে যে কালী তারা মহাবিদ্যা ষোড়শী ভুবনেশ্বরী/ভৈরবী ছিন্নমস্তা চ বিদ্যা ধূমাবতী তথা/বগলা সিদ্ধিবিদ্যা চ মাতঙ্গী কমলাত্মিকা/এতা দশ মহাবিদ্যাঃ সিদ্ধবিদ্যা প্রকীর্ত্তিতাঃ। অর্থাৎ এই দশমহাবিদ্যা হলেন যথাক্রমে কালী, তারা, ষোড়শী, ভুবনেশ্বরী, ভৈরবী, ছিন্নমস্তা, ধূমাবতী, বগলা, মাতঙ্গী এবং কমলা। এই ক্রম অনুসারে দশমহাবিদ্যার মধ্যে অষ্টমতমা হলেন বগলা বা বগলামুখী।

তন্ত্র মতে, এই বগলার অর্থ হল যিনি বশীভূত বা সম্মোহিত করতে পারেন। অন্য দিকে, এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মুখ শব্দটি। অর্থাৎ বগলামুখী-ই সেই দেবী যাঁর মুখের দিকে মাত্র একবার দৃষ্টিপাত করলেও অশুভ শক্তিরা সম্মোহিত এবং তার পরের ধাপে নির্জীব হয়ে পড়বে। তন্ত্রে দেবী বগলামুখীকে সাধারণত দ্বিভুজা রূপেই দেখা যায়। এক হাতে তিনি ধারণ করে থাকেন একটি মুষল, অন্য হাতে জিভ টেনে ধরেন অসুরের। তবে কখনও কখনও দেবীকে চতুর্ভুজা রূপেও তন্ত্র বর্ণনা করেছে। সে ক্ষেত্রে চার হাতে দেবী ধারণ করে থাকেন একটি মুষল, একটি খড়্গ, একটি নরকরোটি বা মড়ার মাথা দিয়ে তৈরি পানপাত্র এবং একটি সাঁড়াশি। এই সাঁড়াশি দিয়েই দেবী বগলামুখী জিভ টেনে ধরেন অসুরের।

মা বগলামুখী ধ্যান ও শোস্ত্রমঃ

=============

মধ্যে সুধাব্ধিমণিমণ্ডপরত্নবেদী সিংহাসনোপরিগতাং পরিপীতবর্ণাম্।

পীতাম্বরং কণকমাল্যবিভূষিতাঙ্গীং দেবীং স্মরামি ধৃতমুদ্গর বৈরিজিহ্বাম্।।

জিহ্ববাগ্রমাদায় করেণ দেবীং,বামেন শত্রুন্ পরিপীড়য়ন্তীম্।

গদাভিঘাতেন চ দক্ষিণে ন পীতাম্বরাঢ্যাং দ্বিভুজাং নমামি।

— মুণ্ডমালা তন্ত্র অনুসারে দশমহাবিদ্যা হলেন কালী, তারা, ষোড়শী, ভৈরবী, ভুবনেশ্বরী, ছিন্নমস্তা, ধূমাবতী, বগলা, মাতঙ্গী ও কমলাকামিনী। মা বগলামুখী। ইনি অষ্টম মহাবিদ্যা। ইনি হলুদ পুস্প খুব ভালোবাসেন। এঁনার পূজোয় হলুদ পুস্প, হলুদ সিঁদুর দেওয়া হয়। মা বগলা কে শত্রু নাশের জন্য পূজো করা হয়। আমাদের অন্তরে যে রিপু, স্বার্থপরতা, হিংসা, অহংকার রুপী যে শত্রু আছে – আমরা তার বিনাশের জন্য মায়ের চরণে প্রার্থনা জানাবো। মা যেন সেই শত্রু গুলিকে নিপাত করেন।

মা বগলামুখী জপমন্ত্র —-

ওঁ হ্লীং বগলামুখি

সর্বদুষ্টানাং বাচং মুখং পদং স্তম্ভয়

জিহ্বাং কীলয়

বুদ্ধিং বিনাশয় হ্লীং ওঁ স্বাহা

@@@###

॥ শ্রীবগলামুখীস্তোত্রম্ ॥

শ্রীগণেশায় নমঃ ।

চলত্কনককুণ্ডলোল্লসিতচারুগণ্ডস্থলীং

লসত্কনকচম্পকদ্যুতিমদিন্দুবিম্বাননাম্ ।

গদাহতবিপক্ষকাং কলিতলোলজিহ্বাংচলাং

স্মরামি বগলামুখীং বিমুখবাঙ্মনস্স্তম্ভিনীম্ ॥ ১॥

পীয়ূষোদধিমধ্যচারুবিলদ্রক্তোত্পলে মণ্ডপে

সত্সিংহাসনমৌলিপাতিতরিপুং প্রেতাসনাধ্যাসিনীম্ ।

স্বর্ণাভাং করপীডিতারিরসনাং ভ্রাম্যদ্গদাং বিভ্রতীমিত্থং

ধ্যায়তি য়ান্তি তস্য সহসা সদ্যোঽথ সর্বাপদঃ ॥ ২॥

দেবি ত্বচ্চরণাম্বুজার্চনকৃতে য়ঃ পীতপুষ্পাঞ্জলীন্ভক্ত্যা

বামকরে নিধায় চ মনুং মন্ত্রী মনোজ্ঞাক্ষরম্ ।

পীঠধ্যানপরোঽথ কুম্ভকবশাদ্বীজং স্মরেত্পার্থিবং

তস্যামিত্রমুখস্য বাচি হৃদয়ে জাড্যং ভবেত্তত্ক্ষণাত্ ॥ ৩॥

বাদী মূকতি রঙ্কতি ক্ষিতিপতির্বৈশ্বানরঃ শীততি ক্রোধী

শাম্যতি দুর্জনঃ সুজনতি ক্ষিপ্রানুগঃ খঞ্জতি ।

গর্বী খর্বতি সর্ববিচ্চ জডতি ত্বন্মন্ত্রিণা য়ন্ত্রিতঃ

শ্রীর্নিত্যে বগলামুখি প্রতিদিনং কল্যাণি তুভ্যং নমঃ ॥ ৪॥

মন্ত্রস্তাবদলং বিপক্ষদলনে স্তোত্রং পবিত্রং চ তে

য়ন্ত্রং বাদিনিয়ন্ত্রণং ত্রিজগতাং জৈত্রং চ চিত্রং চ তে ।

মাতঃ শ্রীবগলেতি নাম ললিতং য়স্যাস্তি জন্তোর্মুখে

ত্বন্নামগ্রহণেন সংসদি মুখে স্তম্ভো ভবেদ্বাদিনাম্ ॥ ৫॥

দুষ্টস্তম্ভনমুগ্রবিঘ্নশমনং দারিদ্র্যবিদ্রাবণং

ভূভৃত্সন্দমনং চলন্মৃগদৃশাং চেতঃসমাকর্ষণম্ ।

সৌভাগ্যৈকনিকেতনং সমদৃশঃ কারুণ্যপূর্ণেক্ষণম্

মৃত্যোর্মারণমাবিরস্তু পুরতো মাতস্ত্বদীয়ং বপুঃ ॥ ৬॥

মাতর্ভঞ্জয় মদ্বিপক্ষবদনং জিহ্বাং চ সঙ্কীলয়

ব্রাহ্মীং মুদ্রয় দৈত্যদেবধিষণামুগ্রাং গতিং স্তংভয় ।

শত্রূংশ্চূর্ণয় দেবি তীক্ষ্ণগদয়া গৌরাঙ্গি পীতাম্বরে

বিঘ্নৌঘং বগলে হর প্রণমতাং কারুণ্যপূর্ণেক্ষণে ॥ ৭॥

মাতর্ভৈরবি ভদ্রকালি বিজয়ে বারাহি বিশ্বাশ্রয়ে

শ্রীবিদ্যে সময়ে মহেশি বগলে কামেশি বামে রমে ।

মাতঙ্গি ত্রিপুরে পরাত্পরতরে স্বর্গাপবর্গপ্রদে

দাসোঽহং শরণাগতঃ করুণয়া বিশ্বেশ্বরি ত্রাহি মাম্ ॥ ৮॥

সংরম্ভে চৌরসঙ্ঘে প্রহরণসময়ে বন্ধনে ব্যাধিমধ্যে

বিদ্যাবাদে বিবাদে প্রকুপিতনৃপতৌ দিব্যকালে নিশায়াম্ ।

বশ্যে বা স্তম্ভনে বা রিপুবধসময়ে নির্জনে বা বনে বা

গচ্ছংস্তিষ্ঠংস্ত্রিকালং য়দি পঠতি শিবং প্রাপ্নুয়াদাশু ধীরঃ ॥ ৯॥

ত্বং বিদ্যা পরমা ত্রিলোকজননী বিঘ্নৌঘসংছেদিনী

য়োষিত্কর্ষণকারিণী জনমনঃসম্মোহসন্দায়িনী ।

স্তম্ভোত্সারণকারিণী পশুমনঃসম্মোহসন্দায়িনী

জিহ্বাকীলনভৈরবী বিজয়তে ব্রহ্মাদিমন্ত্রো য়থা ॥ ১০॥

বিদ্যা লক্ষ্মীর্নিত্যসৌভাগ্যমায়ুঃ পুত্রৈঃ পৌত্রৈঃ সর্বসাম্রাজ্যসিদ্ধিঃ ।

মানো ভোগো বশ্যমারোগ্যসৌখ্যং প্রাপ্তং তত্তদ্ভূতলেঽস্মিন্নরেণ ॥ ১১॥

ত্বত্কৃতে জপসন্নাহং গদিতং পরমেশ্বরি ।

দুষ্টানাং নিগ্রহার্থায় তদ্গৃহাণ নমোঽস্তু তে ॥ ১২॥

পীতাম্বরাং চ দ্বিভুজাং ত্রিনেত্রাং গাত্রকোমলাম্ ।

শিলামুদ্গরহস্তাং চ স্মরে তাং বগলামুখীম্ ॥ ১৩॥

ব্রহ্মাস্ত্রমিতি বিখ্যাতং ত্রিষু লোকেষু বিশ্রুতম্ ।

গুরুভক্তায় দাতব্যং ন দেয়ং য়স্য কস্যচিত্ ॥ ১৪॥

নিত্যং স্তোত্রমিদং পবিত্রমিহ য়ো দেব্যাঃ পঠত্যাদরাদ্ধৃত্বা

য়ন্ত্রমিদং তথৈব সমরে বাহৌ করে বা গলে ।

রাজানোঽপ্যরয়ো মদান্ধকরিণঃ সর্পা মৃগেন্দ্রাদিকাস্তে

বৈ য়ান্তি বিমোহিতা রিপুগণা লক্ষ্মীঃ স্থিরা সিদ্ধয়ঃ ॥ ১৫॥

॥ ইতি শ্রীরুদ্রয়ামলে তন্ত্রে শ্রীবগলামুখীস্তোত্রং সমাপ্তম্ ॥

দশমহাবিদ্যার অষ্টম মহাবিদ্যা হল বগলামুখী দেবী (Baglamukhi )। বগলামুখী দেবী সিদ্ধবিদ্যা ও পীতাম্বরাবিদ্যা এই নামে প্রসিদ্ধ। বগলামুখী দেবি পীতবস্ত্রা, পীতপুস্পপ্রীয়া, এবং পীতঅলঙ্কারধারিনি। দশমহাবিদ্যার অষ্টম মহাবিদ্যা হল মা বগলামুখী দেবী। বগলামুখীর আরাধনা করলে শত্রুদের বিনাশ, জীবনে সাফল্য এবং বিতর্কে জয়ী লাভ হয়। বগলামুখীর মন্ত্র সাধকের সমস্ত ইচ্ছা পূরণ করতে পারে। বগলামুখী মন্ত্র সমস্ত ধরণের বাধা থেকে মুক্তি দেয়, রোগ এবং দুর্ঘটনার দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা থেকে রক্ষা করে এবং সুরক্ষা দেয়। কথিত আছে যে বগলামুখী মন্ত্রের নিয়মিত জপ অহং বিনাশ করে এবং শত্রুদের বিনাশ করে।

দেবী বগলামুখী হলেন মঙ্গলগ্রহের ইষ্টদেবী এবং দশমহাবিদ্যার শক্তিশালী এবং সহায়ক শক্তি ৷ এক (দশমহাবিদ্যা মানে দশটি মহাক্ষমতা, দেবী দশমহাবিদ্যার মধ্যে নিহিত আছে দুর্গার দশশক্তির বিভিন্ন পরিসংখ্যান) ভারতীয় আধ্যাত্মিক ধর্মীয় দর্শনের সর্বোচ্চ শক্তি হলেন দেবী ৷ দেবী বগলামুখীর ছবি সংগ্রহ না করতে পারেন, তাহলে আপনি দেবী দুর্গার কোন ছবি নিতে পারেন।

মন্ত্রটি হল :

“ওঁ হ্লীং বগলামুখী সর্ব দুষ্টানাং বাচং মুখং পদং স্তম্ভন, জিহ্বাং কীলয় কীলয় বুদ্ধি বিনাশায় হ্লীং ওঁ স্বাহা” ||

দেবী হলেন সমস্ত সৃষ্টির কর্ত্রী। এই মহাবিশ্বের বিভিন্ন কার্য সম্পাদনের জন্য দেবী হাজারো রূপে আবির্ভূত হয়েছেন। দেবী অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের প্রতিনিধিত্ব করেন। রাক্ষসদের ধ্বংস করেন এবং ভক্তদের রক্ষা করেন। দেবী মন্ত্র হল শক্তিশালী মন্ত্র যা আমাদের জীবনকে সুরক্ষিত করতে দেবী দুর্গার আশীর্বাদ পেতে জপ করেন ভক্তরা। বগলামুখী দেবীর মন্ত্রই ব্রম্ভাস্ত্রস্বরূপ । এমনকি এই মন্ত্রশক্তিতে সদাবিচরনশীল বায়ুরও গতিরোধ সম্ভব। প্রতিদিন ১০৮ বার বগলামুখী বীজ মন্ত্র ও ১১ বার বগলামুখী গায়ত্রী মন্ত্র জপ করলে শত্রু নাশ, মামলায় জয়লাভ, মঙ্গলের কুপ্রভাব থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

কীভাবে বগলামুখীর আরাধনা করবেন…

মন্ত্র জপের সুবিধা পেতে দেবীর মূর্তির সামনে বসে পূজা করতে হবে। হলুদের মালা বা রুদ্রাক্ষ ব্যবহার করা শুভ বলে মনে করা হয়। মন্ত্র জপ সমস্ত ধরণের ভয় এবং মানসিক সমস্যা দূর করে এবং একজন ব্যক্তিকে জীবনের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম করে। শত্রু এবং অশুভ আত্মার ভয় দূর করে। বাড়িতে এবং পরিবারের সদস্যদের জীবনে সামগ্রিক শান্তি এবং সমৃদ্ধি প্রচার করতে সাহায্য করে। ঘরে পজিটিভ এনার্জি বাড়ায়। পরিবারের সকল সদস্যের জীবনে সুখ ও সাফল্য আসে। অশুভ শক্তি দূর করে এবং বাড়ির সামগ্রিক উন্নতির জন্য সকল প্রকার শুভকে প্রসারিত করে। পথের বাধা দূর করে সফলতা এনে দেয়।

বগুলামুখী রূপ 

হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে, বগুলামুখী চোখের পলকে সমস্ত ঝামেলা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেন। ভক্তের ভ্রান্ত মানসিক শক্তি বা শত্রুনাশের জন্য দেবীর গুরুত্ব অপরিসীম। তাঁর মূল অস্ত্র হল মুগুর। ভারতে সাধারণত বগলামুখীর দ্বিভূজা মূর্তি পুজোর প্রচলনই সবচেয়ে বেশি। গায়ের রঙ সোনালী ও তাঁর পরনের শাড়ির রঙ হল হলুদ। হলুদ পদ্মের ভরা অমৃতের মাঝে একটি হলুদ সিংহাসনে অধিষ্ঠিত। মাথায় রয়েছে অর্ধচন্দ্র। হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে, দেবী বগুলামুখীর এত শক্তি রয়েছে যে তাঁর আশীর্বাদে ভাগ্যও পরিবর্তন হতে পারে ভক্তদের।

আশীর্বাদ পেতে পুজো করবেন কীভাবে

বিজয়ের বর প্রদানকারী দেবী বগলামুখীর পুজোয় হলুদ রঙের অনেক ধর্মীয় গুরুত্ব রয়েছে। বিশ্বাস করা হয় যে, ভক্তরা হলুদ রঙের পোশাক পরিধান করলে, হলুদ রঙের আসনে বসে নিয়ম-কানুন মেনে পুজো করেন, তার ওপর দেবীর আশীর্বাদ বর্ষণ হয় খুব দ্রুত। এই পরিস্থিতিতে, বগলামুখী জয়ন্তীর দিন, দেবীর আশীর্বাদ পেতে, তাঁর ভক্তদের বিশেষ করে হলুদ কাপড়ে কিছু ফুল ও ফল ইত্যাদির সঙ্গে সামান্য হলুদ নিবেদন করা উচিত।

…….অষ্টম মহাবিদ্যা মা বগলামুখী……

জয় ধ্বনিঃ জয় জয়কারিনী শত্রুনাশিনী বগলা।

এক হস্তে এক ভরতচন্দ্র রায় তাঁর “অন্নদামঙ্গল” কাব্যে সরল বাংলায় খুব সুন্দর করে দেবী বগলামুখীর ধ্যানমন্ত্রটি তুলে ধরেছেন——

” ধূমাবতী দেখে ভীম সভয় হৈলা।
হইয়া বগলামুখী সতী দেখা দিলা।।
রত্নগৃহে রত্নসিংহাসনমধ্যস্থিতা।
পীতবর্ণা পীতবস্ত্রাভরণ ভূষিতা।।
এক হস্তে এক অসুরের জিহ্বা ধরি।
আর হস্তে মুদ্গর ধরিয়া উর্দ্ধ করি।।
চন্দ্র সূর্য অনল উজ্জ্বল ত্রিনয়ন।
ললাটমণ্ডলে চন্দ্রখণ্ড সুশোভন।।
দেখি ভয়ে ভোলানাথ যান পলাইয়া। ”

সংস্কৃত ধ্যানটিতেও শেষাংশে আছে——

” জিহ্ববাগ্রমাদায় করেণ দেবীং, বামেন শত্রুন পরিপীড়য়ন্তীম্।
গদাভিঘাতেন চ দক্ষিণে ন পীতাম্বরাঢ্যাং দ্বিভুজাং নমামি।। ”

অর্থাৎ , বাম হস্তে জিহ্বাগ্র টেনে ধরে শত্রুকে পীড়ন করতে করতে যিনি ডান হস্তদ্বারা গদার
আঘাত করছেন , সেই পীতবসনা দ্বিভুজা দেবীকে প্রণাম করি। দেবী বগলামুখী উগ্রস্বভাবা , তাঁর
সংহারমূর্তি। মহিষমর্দিনী দুর্গার সঙ্গে তাঁর সবদিক দিয়ে সৌসাদৃশ্য- অঙ্গবরণ , অসুরদলনী ভূমিকা , ত্রিনয়ন, প্রায়ে সবটাই এক। পরমাত্মার সংহারশক্তিই হলে দেবী বগলা। সুতরাং , সর্বাভীষ্টদাত্রী এই দেবীকে সাধক আরাধনা করেন বাকসিদ্ধি ও শত্রুভয়মুক্তির জন্য। মহাবিদ্যাগণের মধ্যে এঁর ভূমিকা অন্যন্যসাধারণ।

মা বগলা হলেন দশ মহাবিদ্যার মধ্যে এক অভিনব দেবীমূর্তি।ইনিই দেবী বগলামুখী। মা বগলা তন্ত্রের বিখ্যাত শক্তি মূর্তি। ইনি পৃথিবীতে অসাধ্য-সাধনের অধিকারী। বগলামুখীর মন্ত্র জপ ও পুরশ্চরণে অসম্ভবও সম্ভব হয়। ঠিক ঠিক ক্রিয়াদি সম্পন্ন হলে মায়ের ভক্ত সর্বদিকে বিজয় লাভ করেন। মা বগলা সন্তানকে সকলরকম জাগতিক শত্রুতা থেকে রক্ষা করেন এবং সেইসাথে সন্তানের ভিতরের পরম শত্রু ষড় থেকেও রক্ষা করেন। সেইসাথে ব্যাধি ও গ্রহের প্রকোপ থেকেও রক্ষা মায়ের এই রূপের শরণ নিলে। ঠিকমত মায়ের শরণ নিলে মা সন্তানকে তার প্রারব্ধ অনুসারে সব দুর্যোগ কাটিয়ে সুখ শান্তি ও সৌভাগ্য দেন।

তাঁর মন্ত্রেই আছে তাঁর রূপের বিবরণ ——

“মধ্যে সুধাব্ধিমণিমণ্ডপ রত্নবেদী
সিংহাসনোপরিগতাং পরিপীতবর্ণাং।
পীতাম্বরাভরণ মাল্য বিভূষিতাঙ্গীং
দেবীং স্মরামি ধৃতমুদ্গর বৈরি জিহ্বাম্ ।।
জিহ্ববাগ্রমাদায় করেণ দেবীং
বামেন শত্রুন পরিপীড়য়ন্তীম্।
গদাভিঘাতেন চ দক্ষিণে ন পীতাম্বরাঢ্যাং দ্বিভুজাং নমামি।”

অর্থাৎ , বলা হচ্ছে যে সুধাসাগরের মধ্যে মণিমণ্ডপ, তার উপর রত্নবেদী , সেই বেদীতে রাখা সিংহাসনে দেবী বগলা আসীন রয়েছেন। তাঁর গায়ের রং হলদে। হলদে রং-এর কাপড়‌ , সেই রং-এর অলঙ্কার ও মালায় তিনি বিভূষিতা। তিনি বাম হাতে শ্যামল বর্ণবিশিষ্ট শত্রু অসুরের জিভ টেনে রেখেছেন ও অন্য হাতে গদা নিয়ে তাকে প্রহার করছেন। ইনিও তমোগুণ প্রধানা। ইনি জীবের দারিদ্র দুঃখরূপ অসুরের হাত থেকে ও শত্রুর হাত থেকে জীবকে রক্ষা করেন। এই তন্ত্রোক্ত দেবীর কৃপায় জীবের জীবনের নানা অশুভ অশান্তি দূর হয়।এঁর উৎপত্তি সম্পর্কে স্বতন্ত্র তন্ত্রে সংক্ষেপে বলা হয়েছে-সত্যযুগে পৃথিবীর বিনাশের জন্য একবার প্রচণ্ড প্রলয়ঝড়ের উদ্ভব হয়েছিল , তাতে পালনকর্তা বিষ্ণু খুব উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তিনি আদ্যাশক্তি মহামায়ার শরণ নেন এই বিপদ থেকে ধরিত্রীকে রক্ষা করবার জন্য। ত্রিপুরাম্বিকা দেবী সেই তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে একটি হলুদ রং-এর হ্রদ সৃষ্টি করে তার মধ্যে এক মঙ্গলবারে চতুর্দশী তিথিতে বীর রাত্রির মধ্যভাগে জলক্রীড়ায় নিজের রূপ সৃষ্টি করেন – ইনি বিষ্ণুতেজোময়ী দেবী বগলামুখী। দেবী বগলামুখী ভগবান বিষ্ণুকে দর্শন দিলেন। ভগবান বিষ্ণু মা বগলার কাছে স্তম্ভন বিদ্যা পেয়ে ঐ বিশ্ব ঝড় কে স্তম্ভন করে জগত ও জগতের জীব কূলকে রক্ষা করলেন । এই দেবীর পূজা সাধারণত দৈবী প্রকোপ শান্ত হয়। ইনি ভোগ ও মুক্তি দুটি প্রদান করেন।

বগলামুখী বা বগলা (দেবনাগরী: बगलामुखी) হলেন হিন্দু দশমহাবিদ্যা দেবমণ্ডলীর অন্তর্গত অন্যতম দেবী। তিনি ভক্তের মানসিক ভ্রান্তি নাশের (অথবা শত্রু নাশের) দেবী। তাঁর অস্ত্র মুগুর। উত্তর ভারতে তিনি পীতাম্বরী নামেও পরিচিত। “বগলামুখী” শব্দটি “বগলা” (অর্থাৎ , ধরা) এবং “মুখ” শব্দদুটি থেকে উৎপন্ন। এই শব্দটির অর্থ যিনি যাঁর মুখ কোনো কিছুর নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে তুলে নিতে সমর্থ। অন্য একটি অর্থে , যিনি মুখ তুলে ধরেছেন।

বগলামুখীর গায়ের রং সোনালি এবং তাঁর কাপড়ের রং হলুদ। তিনি হলুদ পদ্মের ভরা অমৃতের সমুদ্রের মাঝে একটি হলুদ সিংহাসনে বসে থাকেন। তাঁর মাথায় অর্ধচন্দ্র শোভা পায়। দুটি পৃথক বর্ণনার একটিতে তাঁকে দ্বিভূজা ও অপরটিতে তাঁকে চতুর্ভূজা বলা হয়েছে।

বগলামুখীর দ্বিভূজা মূর্তি পূজার প্রচলনই বেশি। এই মূর্তিটিকে সৌম্য মূর্তি ধরা হয়। এই মূর্তিতে তাঁর ডান হাতে থাকে গদা। এই গদা দিয়ে তিনি শত্রুকে প্রহার করেন। অন্যদিকে বাঁহাতে শত্রুর জিভটি টেনে ধরে থাকেন। এই মূর্তিটিকে অনেক সময় “সম্ভন” (শত্রুকে নিস্তব্ধ করে দিয়ে তাকে শক্তিহীন করা) প্রদর্শন হিসেবে ধরা হয়। এই বর লাভের জন্য ভক্তেরা তাঁর পূজা করে থাকে। অন্যান্য মহাবিদ্যাদেরও এই শক্তি আছে বলে ধরা হয়।

বগলামুখীকে” “পীতাম্বরা দেবী” বা “ব্রহ্মাস্ত্র-রূপিণী”ও বলা হয়। তিনি একটি গুণকে বিপরীত গুণে পরিবর্তন করতে পারেন বলে হিন্দুরা বিশ্বাস করেন। যেমন , তিনি বাক্যকে নিঃস্তব্ধতায় , জ্ঞানকে অজ্ঞানে , শক্তিকে শক্তিহীনতায় , পরাজয়কে জয়ে পরিবর্তন করেন।

বগলামুখী দেবী সম্পর্কে একটি গল্প প্রচলিত
আছে :——

এঁর উৎপত্তি সম্পর্কে স্বতন্ত্র তন্ত্রে সংক্ষেপে বলা হয়েছে-সত্যযুগে পৃথিবীর বিনাশের জন্য একবার প্রচণ্ড প্রলয়ঝড়ের উদ্ভব হয়েছিল , এই ঝড়ে যখন সকল সৃষ্টি ধ্বংসের সম্মুখীন হয় , তখন সকল দেবতা সৌরাষ্ট্র অঞ্চলে একত্রিত হন। বিষ্ণু খুব উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তিনি আদ্যাশক্তি মহামায়ার শরণ নেন এই বিপদ থেকে ধরিত্রীকে রক্ষা করবার জন্য। ত্রিপুরাম্বিকা দেবী সেই তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে একটি হলুদ রং-এর হ্রদ সৃষ্টি করে তার মধ্যে এক মঙ্গলবারে চতুর্দশী তিথিতে বীর রাত্রির মধ্যযামে জলক্রীড়ায় নিজের রূপ সৃষ্টি করেন , সেই ঝড় থামিয়ে দেন ও ধরিত্রীকে রক্ষা করেন-
ইনি বিষ্ণুতেজোময়ী দেবী-বগলামুখী। ভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের দাতিয়া অঞ্চলের পীতাম্বরা পীঠমে হরিদ্রা সরোবরের অনুরূপ একটি হ্রদ রয়েছে।

বগলামুখী তন্ত্রের বিখ্যাত শক্তি মূর্তি-এঁর নামের অর্থ ব-কারে বারুণী দেবী, গ-কারে সিদ্ধিদায়িনী, ল-কারে পৃথিবী। ইনি পৃথিবীতে অসাধ্য-সাধনে অধিকারী। বগলামুখীর মন্ত্র জপ ও পুরশ্চরণে অসম্ভবও সম্ভব হয়। ঠিক ঠিক ক্রিয়াদি সম্পন্ন হলে পবনের গতি স্তব্ধ হয় , অগ্নি শীতল হয় , গর্বিতের গর্ব যায় , ক্ষিতিপতিও শংকিত হয়।

এই দেবীর প্রকাশ আমরা মা সারদার জীবনে
দেখি । মা সকলকে দীক্ষা দিতেন । ভক্তদের কৃপা করতেন । শ্রীমা সকলকে চেতনা দান করতেন । মানুষের মনে কাম , ক্রোধ , লোভ , মদ , মাৎসর্য আছে এগুলিকে ষড়রিপু বা ছয় শত্রু বলা হয় । শ্রীমা এই শত্রুদের দলিত করেছেন । যেমন মা বগলা শত্রু দলন করেন । শ্রীমায়ের ভক্ত সন্তান দের মনের মধ্যে অবস্থান কারী এই শত্রুদের তিনি তাঁর শক্তি দ্বারা দলিত করেছেন । ভক্তেরা মায়ের সান্নিধ্যে এসে পেয়েছেন অমৃত । মায়ের এখানেই বগলামুখী রূপ প্রস্ফুটিত ।

জৈনেক এক ভক্তের মুখে তাঁর স্বপ্ন বৃতান্ত শুনে স্বামীজী ইঙ্গিতে তাঁকে বলেছিলেন ,
“… ঐ মন্ত্র জপ করতে থাক , পরে সশরীরে সেই মন্ত্রদাত্রী মূর্তি দেখতে পাবি । তিনি বগলার অবতার , সরস্বতী মূর্তিতে বর্তমানে আবির্ভূতা । … সময়ে বুঝতে পারবি । যখন দেখতে পাবি , দেখবি উপরে মহা শান্তভাব কিন্তু ভিতরে সংহারমূর্তি ; সরস্বতী অতি শান্ত কিনা।”

ঠাকুর মায়ের শান্ত সরস্বতী রুপের কথা জানিয়েছিলেন । কিন্তু তিনি যে সংহার মূর্তি বগলা এবং ‘জ্যান্ত দুর্গা’ – , যিনি দানব দলনী মহাশক্তি – একথা স্বামী বিবেকানন্দ গুরুভাই ও শিষ্যদের বলেন । তাঁর আর্ষদৃষ্টিতে শ্রী শ্রীমায়ের এই আশ্চর্য স্বরূপ উদ্ঘাটিত হয়েছিল ।

মায়ের এক সময় আমরা বগলা রূপ দেখি । ঘটনাটি মা স্বয়ং বলেছেন এই ভাবে ——
“ হরিশ এইসময় ( শ্রী রামকৃষ্ণের তিরোভাবের পর শ্রীমা যখন কামারপুকুরে আছেন ) কামারপুকুরে এসে কিছুদিন ছিল । একদিন আমি পাশের বাড়ি থেকে আসছি । এসে বাড়ির ভেতর যেই ঢুকেছি , অমনি হরিশ আমার পিছু পিছু ছুটছে । হরিশ তখন ক্ষেপা । পরিবার পাগল করে দিয়েছিল । তখন বাড়িতে আর কেউ নেই । আমি কোথায় যাই । তাড়াতাড়ি ধানের হামারের ( তখন ঠাকুরের জন্মস্থানের উপর ধানের গোলা ছিল ) চারদিকে ঘুরতে লাগলুম । ও আর কিছুতেই ছাড়ে না । সাতবার ঘুরে আমি আর পারলুম না । তখন… আমি নিজ মূর্তি ধরে দাঁড়ালুম । তারপর ওর বুকে হাঁটু দিয়ে জিভ টেনে ধরে গালে এমন চড় মারতে লাগলুম যে , ও হেঁ হেঁ করে হাঁপাতে লাগল । আমার হাতের আঙ্গুল লাল হয়ে গিছল ।” মা বগলার এক রূপ তিনি। মা বগলা স্বয়ং মায়ের মধ্যে তখন আবির্ভূতা । তিনি বগলা আবার তিনিই ষোড়শী ।

বিষ্ণুযামল তন্ত্রে বগলামুখীর অষ্টোত্তর শতনামে দেবীকে বন্দনা করে পীতবসনা , পীতভূষনভূষিতা , পীতপুস্পপ্রীতা , পীতহরা , পীতস্বরূপিনী । জয়রামবাটিতে একদা জৈনেক ভক্ত সন্তানকে শ্রী শ্রী মা নিজে মুখে বলেন – “ সাদা ফুল ঠাকুর ভালোবাসেন , হলুদ ফুল আমি ভালোবাসি ।” হলুদ ফুলের প্রতি তাঁর প্রীতি বগলামুখী সত্ত্বার পরিচায়ক ।

বগলামুখী মহাবিদ্যা , ব- বারুনী দেবী( অসুর দলনে উন্মত্তা), গ- সিদ্ধি দায়িনী( সর্ব প্রকার সিদ্ধি দেন) , ল- পৃথিবী( পৃথিবী যেমন সব সহ্য করেন, মা যেমন ছেলের সব দুষ্টামী সহ্য করে তাকে লালন পালন করে তেমনি মা বগলা তেমন সহ্য করেন) । ইঁহাই এঁনার অসীমা শক্তির কথা জানায়। এই দেবী এক হস্তে মুদ্গর ও অপর হস্তে ইনি অসুরের বা শত্রুর জিহ্বা টানিয়া থাকেন। দশমহাবিদ্যার মধ্যে অষ্টম মহাবিদ্যা হলেন বগলা । এই দেবী সিদ্ধ বিদ্যা ও পীতাম্বরবিদ্যা নামে প্রসিদ্ধা। এই দেবী শব বাহনা, শবের ওপর থাকেন। এই দেবীর পূজো বাংলাতে কম দেখা যায়। এই দেবীর সাথে দুর্গা , জগদ্ধাত্রী অল্প কিছুটা সাদৃশ্য আছে। এই দেবী ভয়ানক রূপ ধারিনী নন। দেবী উগ্র স্বভাবা । মানে অসুর নিধন কালে ইনি ভয়নাক মূর্তিতে আসেন। পরমাত্মার সংহার শক্তি হলেন মা বগলা। সাধক গণ নানা প্রকার সিদ্ধি, বাক সিদ্ধি , শত্রু দমনের জন্য এই দেবীর সাধনা করেন ।

তন্ত্রসার শাস্ত্রে এই দেবীর মাহাত্ম্য বলা হয়—–

” ব্রহ্মাস্ত্রং সংপ্রবক্ষ্যামি সদ্যঃ প্রত্যয়কারম্ ।
সাধকানাং হিতার্থায় স্তম্ভনায় চ বৈরিনাম্ ।।
যস্যাঃ স্মরণমাত্রেণ পবনোহপি স্থিরায়তে । ”

ভারতের অসম রাজ্যের গুয়াহাটিতে অবস্থিত কামাখ্যা মন্দির তন্ত্রবিদ্যার কেন্দ্রস্থল। এখানে দশমহাবিদ্যার মন্দির আছে। এই মন্দিরের কয়েক মেইল দূরেই বগলামুখী মন্দিরের অবস্থান। উত্তর ভারতের হিমাচল প্রদেশ রাজ্যের বাণখণ্ডীতে , মধ্যভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের আগর মালব জেলার নলখেদা ও দাতিয়ার পীতাম্বরা পীঠে এবং দক্ষিণ ভারতের তামিল নাড়ু রাজ্যের তিরুনেলভেলি জেলার পাপানকুলাম জেলার কল্লাইদাইকুরিচিতে বগলামুখীর মন্দির আছে।

এই বগলামুখীর মন্ত্র ব্রহ্মাস্ত্র স্বরূপ। সাধক দের কাছে তা পরম সিদ্ধি , হিতকর। শত্রুকে স্তম্ভন কারী ব্রহ্মাস্ত্র রূপেও ব্যবহৃত হয় । এই বগলা মন্ত্রের প্রভাব এত যে বায়ু কেও রুদ্ধ করা যায়। অগ্নিও শীতল হয়। গর্বিতের গর্ব চূর্ণ হয়। ক্ষিতিপতিও শঙ্কিত হন । মা বগলার ধ্যান মন্ত্রে শত্রু দলনী দেবী দুর্গার স্মরণ করা হয়। মা দুর্গা , দেব শত্রু মহিষ ও তার সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করেছিলেন।

সাধারণত শত্রু দমনের জন্য এই বিদ্যা প্রয়োগ করা হয়। কেন কি দেবী শত্রু দমন করেন । কিন্তু দেখা গেছে দুর্মতি তান্ত্রিক রা অর্থের লোভে অনেক সময় অপরের সর্বনাশ করে ফেলেন। মারন , উচাটণ , বশীকরণ , স্তম্ভন এগুলি করে থাকেন। জাগতিক সুখের জন্য মায়ের বিদ্যা প্রয়োগ করেন। মায়ের বিদ্যা কেবল শুভ কাজের জন্যই প্রয়োগ করা উচিৎ। যেমন ভগবান বিষ্ণু বিশ্ব রক্ষার জন্য করেছিলেন। অপরের সর্বনাশ করা ঘোর পাপ। যেসব তান্ত্রিক নিরীহ লোকের সর্বনাশ করেন এই সব মন্ত্র বিদ্যা দিয়ে- তাদের যে মা কি ভয়ানক শাস্তি দেন, তা কল্পনার বাইরে । আর যে সব লোক টাকা পয়সা দিয়ে এই সব তান্ত্রিক দের উৎসাহিত করেন ব্যাক্তিগত আক্রোশ মেটানোর জন্য – জন্ম জন্মান্তরেও তারা মায়ের কোপ থেকে নিস্কৃতি পান না । শত্রু বাইরে থাকেনা , শত্রু আছে নিজের মধ্যেই । মা সারদা বলতেন- দোষ দেখবে নিজের । আমাদের মধ্যে যে ষড় রিপু আছে, যাদের নিষ্পেষণে আমরা নানান পাপাচার করে থাকি এগুলো কিন্তু কোন অসুর বা শত্রুর থেকে কম নয়। এরা আধ্যাত্মিক পথ বন্ধ করে নরকের রাস্তা পরিষ্কার করে।

বগলা:
দশমহাবিদ্যার অষ্টম রূপ বগলা। রুরু নামক দৈত্যের পুত্র দুর্গম দেবতাদের চেয়ে বলশালী হওয়ার জন্য ব্রহ্মার তপস্যা করে বরপ্রাপ্ত হন। দেবতারা তখন দেবী ভগবতীর আরধনা করেন। দেবী আর্বির্ভূত হয়ে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। দেবীর গায়ের বর্ণ পীত। বসন পীত বর্ণ। সুধা সমুদ্রের মাঝে সিংহাসনে উপবিষ্টা। এঁর বাহন শব। দ্বিভূজ দেবী বাম হাতে দুর্গম অসুরের জিহবা ধরে ডান হাতে গদা দিয়ে শত্র দমন করেন। এই যুদ্ধে দেবীর দেহ হাতে কালী, তারা, ভৈরবী, রমা, মাতঙ্গী, বগলা,কামাক্ষী, জম্ভিনী, মোহিনী, ছিন্নমুণ্ডা, গুহ্যকালী প্রভৃতি মহাশক্তি বের হয়ে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন।

দুরন্ত উপায়

বিশ্বাস করা হয় যে বগলামুখী জয়ন্তীর দিন যদি কোনও ভক্ত হলুদের মালা অর্পণ করেন ও ওম বগলামুখী দেব্যায় হ্লীন ক্লীন শত্রু নাশম কুরু মন্ত্র উচ্চারণ করেন, তার মনস্কামনা শীঘ্রই পূরণ হয়। এইভাবে উপাসনা করলে আদালত মামলায় দ্রুত জয়লাভ হয় এবং শত্রুদের বিনাশ হয়।

administrator

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *