আর কয়েকদিন পরেই দোল উত্সব। করোনার জেরে আগের দুবছর হোলি বা দোল পালন না হলেও এবার করোনার প্রকোপ কমতেই উত্সবে মজেছেন দেশবাসী। প্রতিবছরের মত এবারেও ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে রঙের উৎসব পালন করা হবে। হোলির আগের দিন হোলিকা দহন খুবই জনপ্রিয়। তবে মথুরা ও বৃন্দাবনে হোলি ও দোলপূর্ণিমায় আরও একটি আকর্ষণীয় জিনিস হয়, যা বেশ মজাদারও বটে।
হোলির দিন মেয়েদের হাতে মার খাওয়া মথুরা ও বৃন্দাবনবাসীদের একটি প্রচলিত ধারা। হোলির মত পবিত্র একটি উত্সবের আগে একটি মোটা শক্তপোক্ত লাঠি আর সেই লাঠির ঘা সামলানোর জন্য পোক্ত ঢাল সকলের বাড়িতেই রয়েছে। চারদিকে আবির, ফুলের পাপড়ি। তার মাঝখানে বসে মাথায় মোটা পাগড়ি আর হাতে পোক্ত ঢাল নিয়ে সার বেঁধে বসে থাকেন পুরুষরা। মাথার উপর ঢাল ধরে থাকার সঙ্গে সঙ্গে আছড়ে পড়ে মেয়েদের হাতের লাঠির ঝড়। হোলির দিন একে অপরকে রঙ মাখায় , আবির নিয়ে খেলা করেন। এমনটা কিন্তু উত্তরপ্রদেশের বারসানা ও নন্দগাঁওতে এই শুভ দিন একটু অন্য়রকমভাবে পালন করে থাক। লাঠি, ঢাল ও রঙের এই উত্সবকে লাঠমার হোলি বলা হয়।
তারিখ
উত্তরপ্রদেশের নন্দগাঁও, বারসানায় হোলি উদযাপন প্রকৃত হোলি উদযাপনের এক সপ্তাহ আগে শুরু হয়। এই বছর লাঠমার হোলি উদযাপন শুরু হয়েছে ১১ মার্চ থেকে।
তাত্পর্য
লাঠমার হোলি প্রধানত উত্তর প্রদেশের মথুরার কাছে অবস্থিত বারসানা এবং নন্দগাঁও শহরে পালিত হয়। জনপ্রিয় হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে, লাঠমার হোলির এই প্রথাটি ঐশ্বরিক দম্পতি রাধা কৃষ্ণের সময়কাল থেকে চলে আসছে। হোলির এক সপ্কাহ আগে শ্রীকৃষ্ণের স্থান নন্দগাঁও থেকে পুরুষরা যখন রাধার বাড়ি বারসানায় যান, তখন মহিলারা লাঠি দিয়ে মারধর করে। সমস্ত মারধর থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পুরুষরা সাধারণত একটি ঢাল বহন করে। বারসানা রাধার মন্দিরের বিস্তৃত চত্বরে উত্সবটি আজও ভক্তিভরে অনুষ্ঠিত হয়। দেশের একমাত্র রাধা মন্দির এটি।
কেন লাঠমার হোলি পালিত হয়
ব্রজভূমিতে এমন গল্পও শোনা যায় যে রাধিকার গায়ের রং ছিল ফর্সা। অথচ তাঁর শ্যামবর্ণ। এতে প্রবল আপত্তি ছিল কৃষ্ণের। ছোট থেকেই এ নিয়ে তিনি রাধাকে হিংসা করতেন। একদিন মা যশোদার কাছে গিয়ে মনের ক্ষোভ খুলে বলেই ফেললেন কিশোর কৃষ্ণ। যশোদা ছেলের সেই ক্ষোভের কথা শুনে হেসে একটা উপায় বার করে দিলেন। আবার অনেকে বলে থাকেন, ভগবান কৃষ্ণ যখন রাধার শহর বারসানায় তার সঙ্গে দেখা করতে আসেন, তখন তিনি রাধা এবং তার বন্ধুদের উত্যক্ত করতেন, যারা পাল্টে বিরক্ত হয়ে প্রতিক্রিয়া জানায়। তার অগ্রযাত্রায় এবং ফুল ছুড়ে তাকে বারসানা থেকে তাড়িয়ে দেয়।