পুরী বেড়াতে গেলে আমরা অনেকেই একবার ঘুরে আসি পুরী থেকে ৩৬ কিমি দূরে কোনারকের সূর্য মন্দির। কিন্তু আমরা কি জানি এই মন্দিরকে ব্রিটিশরা অভিশপ্ত মন্দির বলতো। কিন্তু কেন? সূর্যালোকের উপর ভিত্তি করে অদ্ভূত ঘড়ি ছিল সেখানে। ব্রিটিশ নাবিকরা আবার এর নাম দেন ‘ব্ল্যাক প্যাগোডা’। এদেশের অত্যাশ্চর্য স্থাপত্য কীর্তিগুলির মধ্যে অন্যতম হল কোনারকের সূর্য মন্দির। শতবর্ষ প্রাচীন এই মন্দিরে বর্তমানে কেন হয় না পুজো? কী রহস্য লুকিয়ে রয়েছে সেখানে? ব্রিটিশ ঐতিহাসিকদের একাংশের দাবি, সুপ্রাচীন এই মন্দিরের চূড়ায় ছিল ৫২ টন ওজনের একটি বিশাল চুম্বক। যা সমুদ্রে চলাচলকারী জাহাজকেও টেনে নিতে পারত। চুম্বকীয় সেই মারণ আকর্ষণ কাটিয়ে পুরীর সমুদ্রে জাহাজ চালাতে পারতেন না কোনও নাবিক। অতিকায় জাহাজকে রীতিমতো পাড়ে টেনে এনে ধ্বংস করার ক্ষমতা ছিল বিরাট ওজনের ওই চুম্বকের। সেই কারণেই কোনারকের মন্দিরকে অভিশপ্ত বলে উল্লেখ করেন তাঁরা। তবে এই তথ্য নিয়ে অনেকেই দ্বিমত পোষণ করেন।
জাতীয়বাদী ঐতিহাসিকদের দাবি, দিক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সূর্য মন্দিরের অতিকায় ওই চুম্বক ব্যবহার করা হত। পরবর্তীকালে চুম্বকটির অবস্থান বদল হওয়ায় বিপাকে পড়ে বহু জাহাজ। ওডিশার ইতিহাস অনুযায়ী, খ্রিষ্টীয় ষোড়শ শতকে কোনারকের সূর্য মন্দির ধ্বংস হয়। ১৫০৮-এ বাংলার সুলতান সুলায়মান খান করনানির সেনাপতি কালাপাহাড় পুরী আক্রমণ করেন। তাঁর হামলাতেই ধ্বংস হয় সূর্য মন্দির।বিশেষজ্ঞদের অনুমান, মন্দির ধ্বংসের সময় চূড়ায় থাকা অতিকায় ওই চুম্বকটিকে সরানোর নির্দেশ দেন সেনাপতি কালাপাহাড়। এর জেরে ভারসাম্য নষ্ট হয় মন্দিরের। ফলে ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ে গোটা মন্দির। প্রসঙ্গত, ১২৫৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম নরসিংহদেব কোনারকের মন্দির নির্মাণ করেন। তিনি ছিলেন পূর্ব গঙ্গ রাজবংশের সন্তান। সংস্কৃত শব্দ কোন ও অর্ক এই দু’টি শব্দের সংমিশ্রণে মন্দিরের নাম হয় কোনারক। অর্ক শব্দটির অর্থ হল সূর্য। এই মন্দির সূর্য দেবতাকে উৎসর্গ করা হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে।