জ্যোতিষশাস্ত্র (Astrology) ও হিন্দুদের রীতিতে প্রতি মাসে একটি করে একাদশী পরে। এই একাদশীর বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। ভাদ্রপদ মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশী অজা একাদশী (Aja Ekadasi) নামে প্রসিদ্ধ। ২৩ অগাস্ট ২০২২ সালে পালিত হবে অজা একাদশী। এই ব্রত বিষ্ণুকে (Lord Vishnu) সমর্পিত। এদিন উপবাস রেখে বিষ্ণুর পূজার্চনা করেন সকলে। শাস্ত্রে ভাদ্রপদ মাসটি কৃষ্ণকে (Krishna) সমর্পিত। কৃষ্ণকে বিষ্ণুর (Vishnu) অষ্টম রূপ মনে করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে ভাদ্র মাসের অজা একাদশী ব্রত পালন করলে বিষ্ণু ও কৃষ্ণ উভয়ের আশীর্বাদ পাওয়া যায়। অজা একাদশীর তারিখ নিয়েও বিভ্রান্তি ছিল। ২২ না ২৩ অগাস্ট একাদশী তিথি তা নিয়ে সংশয়ের সমাধান হয়েছে।
অজা একাদশীর শুভক্ষণ
চলতি বছর ২৩ অগাস্ট অজা একাদশী পালিত হবে। ২২ অগাস্ট একাদশী তিথির ক্ষয় হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সূর্যোদয়ের সময় একাদশী পালিত হবে। আবার আগামিকাল ৮টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত দ্বাদশী তিথি থাকায় ২৩ তারিখ একাদশী ও ২৪ তারিখ সকাল ৮টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত দ্বাদশী তিথিতে পারণ করা যাবে। শাস্ত্র মতে এই তিথি মেনে অজা একাদশী পালন করাই অনুকূল ও লাভপ্রদ। পদ্মপুরাণে অজা একাদশীর ব্রতর বর্ণনা পাওয়া যায়।
শুভ যোগে অজা একাদশী
বৈদিক পঞ্জিকা অনুযায়ী চলতি বছর সিদ্ধি ও ত্রিপুষ্কর যোগে অজা একাদশী পালিত হবে। ২৩ অগাস্ট সকাল থেকে শুরু করে দুপুর ১২টা ৩৯ মিনিট পর্যন্ত সিদ্ধিযোগ থাকবে। আবার ২৩ অগাস্ট সকাল ১০টা ৪৩ মিনিট থেকে শুরু করে ২৪ অগাস্ট ৫টা ৫৬ মিনিট পর্যন্ত ত্রিপুষ্কর যোগ থাকবে।
অজা একাদশীর মাহাত্ম্য
শাস্ত্র মতে, অজা একাদশীর উপবাস রাখলে বিষ্ণুর আশীর্বাদ লাভ করা যায়। অজা একাদশীর ব্রতকথা পাঠ বা শ্রবণ করলে ব্যক্তির সমস্ত পাপ নষ্ট হয়। পাশাপাশি অক্ষয় পুণ্য লাভ করা যায়। একাদশীর উপবাস করলে বিষ্ণুর পাশাপাশি লক্ষ্মীর বিশেষ আশীর্বাদ পাওয়া যায়। শাস্ত্র মতে, শ্রদ্ধা ও ভক্তিভরে অজা একাদশী ব্রত পালন করলে অশ্বমেধ যজ্ঞের সমান পুণ্য ফল লাভ করা যায়। একাদশীর দিন বাড়িতে পেঁয়াজ রসুন দিয়ে রান্না করতে নেই। সারা দিন হরি নাম সংকীর্তন করা উচিত। অপশব্দ বলবেন না ও সাত্বিক চিন্তাভাবনা পোষণ করবেন।
অজা একাদশীর ব্রত কথা
অজা একাদশীর প্রসঙ্গে যুধিষ্ঠিরের প্রশ্নের উত্তরে কৃষ্ণ জানান যে, ভাদ্র মাসের কৃষ্ণ পক্ষে যে একাদশী করা হয় সেটিই অজা একাদশী নামে প্রসিদ্ধ। গৌতম মুনির কাছ থেকে জেনে নিয়ে রাজ হরিশচন্দ্র এই ব্রত করেন। হরিশচন্দ্র সত্যব্রতী ছিলেন। একবার তাঁর ওপর এমন বিপত্তি আসে যে সমস্ত কিছু নষ্ট হয়ে যায়। স্ত্রী ও পুত্র-সহ নিজেকে বিক্রি করে দেন রাজা হরিশচন্দ্র। শ্মশানে কাজ শুরু করেন হরিশচন্দ্র। একদা সর্পদংশনে তাঁর ছেলের মৃত্যু হয়। অন্ত্যেষ্টির জন্য তাঁর স্ত্রী ছেলেকে নিয়ে এলে তিনি কর্তব্য পালন হেতু স্ত্রীর কাছ থেকেও মূল্য চেয়ে বসেন। তাঁর স্ত্রীও সঙ্গে সঙ্গে নিজের শাড়ির টুকরো ছিঁড়ে দিয়ে দেন। এ সময় আকাশ থেকে ফুলের বর্ষা হতে শুরু করে। রাজা হরিশচন্দ্রের খারাপ দিন শেষ হয় ও তিনি পুনরায় রাজত্ব ফিরে পান।
উল্লেখ্য, নিজের কষ্টে দিন কাটানো সময় হরিশচন্দ্র একদা অত্যন্ত দুঃখী হয়ে চিন্তাভাবনা করতে শুরু করেন যে, কী ভাবে তাঁর এমন দুর্দশার দিন সমাপ্ত হবে। তখনই গৌতম মুনি সেখানে পৌঁছন। রাজা ঋষির কাছ থেকে নিজের দুঃখ দূর করার উপায় জানতে চান। তখন গৌতম ঋষি বলেন যে, ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশীকে অজা একাদশী বলা হয়। এই একাদশীর পুণ্য প্রভাবে হরিশচন্দ্রের সমস্ত কষ্ট দূর হয়ে যাবে বলে গৌতম ঋষি জানান। ঋষির কথা অনুযায়ী হরিশচন্দ্র অজা একাদশী ব্রত করেন এবং এর পুণ্য প্রভাবে তাঁর খারাপ দিন শেষ হয়।