www.machinnamasta.in

ওঁ শ্রীং হ্রীং ক্লী গং গণপতয়ে বর বরদ সর্বজনস্ময়ী বশমানয় ঠঃ ঠঃ

April 24, 2024 4:34 am
sitala sasthi

এই গোটা সেদ্ধর মধ্যে থাকে গোটা মুগ, বকড়াই, গোটা শিম, গোটা আলু , রাঙা আলু, কুলিবেগুন, কড়াইশুঁটি, শীষওয়ালা পালংশাক। এগুলি নুন আর লঙ্কা দিয়ে সেদ্ধ করা হয়ে থাকে। অনেকে এর মধ্যে গোটা মশলা দেন তবে বেশিরভাগই কোনও মশলা না দিয়েই গোটাসেদ্ধ প্রস্তুত করেন। অনেকে আবার এর সঙ্গে যুক্ত করেন সজনে ফুল এবং কুল। বিভিন্ন জায়গায় গোটা সেদ্ধর বিভিন্ন রকমফের আছে

আজ শীতলা ষষ্ঠী। প্রথা মেনে সরস্বতী পুজোর পরের দিনই পালিত হয় এই শীতলা ষষ্ঠী। পালিত হয়েছে সরস্বতী পুজো। আর এবার শীতল ষষ্ঠীর ব্রত পালন করার দিন বাঙালি মেয়েরা। এই বছর ২৭ জানুয়ারি শুক্রবার শীতল ষষ্ঠী পালিত হবে। বাড়ির সব মেয়ে-বউরা কনিষ্ঠ সন্তানকে কোলে নিয়ে এক সঙ্গে ব্রত কথা শোনেন। ব্রত পালনের পর হলুদ আর দইয়ের ফোঁটা পরিয়ে দেন সবার কপালে। দুপুরে শীতল ষষ্ঠীর ভোগ- গোটা সিদ্ধ আর কুলের অম্বল খাওয়ার রেওয়ার রয়েছে এদেশীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে।

শীতল ষষ্ঠীকে (Sital Sasthi) অপভ্রংশে শেতল ষষ্ঠী বলে থাকেন অনেকে। মা-ঠাকুমার কাছে এক কথায় গোটা সেদ্ধ। বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণের এও এক পার্বণ। বছরভর বিভিন্ন ষষ্ঠী পুজোর মধ্যে অন্যতম বসন্তপঞ্চমীর (Saraswati Puja) পরের দিন পালিত হওয়া শীতল ষষ্ঠী। মূলত বাঙালিদের মধ্যে এদেশীয় বা কথ্য ভাষায় ঘটী সম্প্রদায় এই ষষ্ঠী পালন করে থাকেন। বাঙালির নিজস্ব একান্ত যে কয়েকটি সামাজিক প্রথা রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম এই শীতল ষষ্ঠী বা গোটা সেদ্ধর আচার (Spiritual)।

এই গোটা সেদ্ধর মধ্যে থাকে গোটা মুগ, বকড়াই, গোটা শিম, গোটা আলু , রাঙা আলু, কুলিবেগুন, কড়াইশুঁটি, শীষওয়ালা পালংশাক। এগুলি নুন আর লঙ্কা দিয়ে সেদ্ধ করা হয়ে থাকে। অনেকে এর মধ্যে গোটা মশলা দেন তবে বেশিরভাগই কোনও মশলা না দিয়েই গোটাসেদ্ধ প্রস্তুত করেন। অনেকে আবার এর সঙ্গে যুক্ত করেন সজনে ফুল এবং কুল। বিভিন্ন জায়গায় গোটা সেদ্ধর বিভিন্ন রকমফের আছে।

যারা শীতল ষষ্ঠী পালন করেন, তাঁরা সরস্বতী পুজোর পরের দিন বাড়িতে কোনও রান্না করেন না। শীতল ষষ্ঠীর দিনে বাড়িতে উনুন না জ্বালানোর প্রথা রয়েছে। আগের দিন রান্না করে ষষ্ঠীর দিন সবকিছু ঠান্ডা খেতে হয়। এদিন গরম কোনও কিছু খাওয়া যায় না। এই প্রথা অনেকটা অন্ধনের মতো। আগুনের এদিন ছুটি।

কিন্তু কেন এই সময় শীতল ষষ্ঠী ? কেন গোটা সিদ্ধ ?

অনেকের মতে শীতল খাদ্য গ্রহণের যে-প্রথা পশ্চিমবঙ্গের বহু অঞ্চলে প্রচলিত তার অন্তরালে হয়ত আঞ্চলিক কিছু শস্যকেন্দ্রিক-ধর্মধারার অবশেষ আছে। এ ছাড়া এর পিছনে একটা বৈজ্ঞানিক এবং সামাজিক ব্যাখ্যা রয়েছে। শীত গিয়ে আসতে শুরু করেছে বসন্ত। এ সময় শরীরে জীবাণুর বাসা বাঁধতে শুরু হয়। এই সকল রোগের হাত থেকে বাঁচতে এই সব টোটকার খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সুচারূ কোনও গবেষণা হয়েছে কিনা জানা নেই, তবে মনে করা হয়, এটাই মুখ্য কারণ।

সরস্বতী পুজোর পর দিন সকালে তিথিগত ভাবে ষষ্ঠী থাকতে থাকতে হয় ষষ্ঠীপুজো। তারপর হয় বাড়ির শীল, নোড়ার পুজো। ফুল, প্রসাদ দিয়ে শীল-নোড়ার পুজো দিয়ে দইয়ের ফোঁটা দেওয়া হয় শীল-নোড়ার গায়ে। পুজো শেষে সেই দই-ই আগের দিনের রান্না করা খাবারে ছিটিয়ে দেওয়া হয়। ব্যস, এবার ওই ঠান্ডা রান্না খাওয়ায় কোনও আপত্তি নেই।
পড়ে নিন ব্রত কথা

শীতল ষষ্ঠী ব্রত কথা-কোন এক দেশে এক বুড়ো বামুন ও তার স্ত্রী বাস করত। বামুনের স্ত্রীর নাম ছিল বিন্দি ঠাকরুণ। বিন্দি ঠাকরুনের ঠাকুর দেবতার উপর খুব নিষ্ঠা ছিল। সে ছেলে, বউ নাতি- নাতনীদের নিয়ে খুব আনন্দের দিন কাটছিল।

একদিন মাঘ মাসের শীতল ষষ্ঠীর দিন খুব ঠান্ডা পড়েছিল। তো সেইদিন বিন্দি ঠাকরুণ শীতে কাতর হয়ে ব্রত করতে পারলো না। সে বেশ করে লেপ চাপা দিয়ে বিছানায় শুয়ে রইলো।

বিন্দি ঠাকুরাণী কে তার নাতি নাতনি বউ মারা সবাই ডেকে ডেকে ব্রতের কথা স্মরণ করাতে লাগল। তিনি দাও বিছানা আর লেপ ছেড়ে উঠলেন না বরং বললেন ,”আমি শীতে আর উঠতে পারছি, না যা করার তোমরা করো।

আর বৌমাদের বললেন আমার জন্য একটু গরম ভাত রান্না করো আর সান করার জন্য গরম জল করো । এই শীতে শীতল ষষ্ঠী ব্রত কি করে করব?” বউয়েরা তাদের শ্বাশুড়ীর কথামত কাজ করলো।

বিন্দি ঠাকুরণ গরম জলে স্নান করল ও গরম ভাত খেলো, অথচ এইদিন ঘরে উনুন জ্বালাতে নেই। তারই একটু পরে খবর এলো যে তার ঘর আগুন ধরেছে আর তার মেয়ে জামাই পুড়ে মারা গেছে।

মেয়ে-জামাইয়ের শোকে বিন্দি ঠাকুরানী হাউ হাউ করে কাঁদতে লাগলো। রাত্রিরে সে কিছুতেই ঘুমোতে না পেরে জেগে বসে রইল।

তারই মধ্যে শুনতে পেল কে যেন বলছে,”তোর বড় অহংকার হয়েছে, তাকে সেই অবজ্ঞা করার পাপেই আজ তোর এই দুর্দশা। তাকে যেমন অবহেলা করেছিস, তেমনি এখন তার ফল ভোগ কর”।

এই কথা শুনে বিন্দি ঠাকুরণ কাঁদতে কাঁদতে মা ষষ্ঠীর কাছে বারবার ক্ষমা চাইতে লাগল – বলল ,”দোহাই মা ষষ্ঠী ,এ বারে আমায় ক্ষমা করো মা , এমন কাজ

আমি আর কখনো করবো না।”বিন্দি ঠাকুরুণ অনেক কাকুতি-মিনতি করাতে তার ওপর মা ষষ্ঠীর দয়া হল। মা ষষ্ঠীর তখন বললেন, “তুই এক্ষুনি মানত কর যে সামনের বছর মাঘ মাসের শুক্লা ষষ্ঠীর

দিনে তোর মেয়ে জামাইয়ের কল্যাণের জন্য উপোস করবি, আর আমার পুজো দিবি-জীবনে আর কখনো এমন দুর্বুদ্ধি করবি না। তোর মেয়ে জামাইকে এখনো দাহ করা হয়নি।

যারা মৃতদেহ নিয়ে যাচ্ছিল-আমার ইচ্ছায় ভয় পেয়ে তারা বনের ধারে মৃতদেহ ফেলে সবাই পালিয়ে গেছে। তুই আমার পুজো করে ঘরের জল আর নির্মাল্য নিয়ে, লোকজন

 

 

ওঠার আগেই ভোরবেলা সেই বনের ধারে গিয়ে আমার নাম করে মৃতদেহের উপর জল ছিটিয়ে নির্মাল্য ছড়িয়ে দিবে, তাহলে ই তোর মেয়ে জামাই বেঁচে উঠবে।”

বিন্দি ঠাকুরণ মা ষষ্ঠীর আদেশ মত সকাল হতেই, বনের ধারে গিয়ে তার মেয়ে জামাই এর মৃতদেহ দেখতে পেল। তাদের ওপর ফুল জল ছড়াতেই, তারা বেছে উঠে বিন্দি ঠাকুরন কে প্রণাম করলো।

বিন্দি ঠাকুরণ এই দেখে খুব আনন্দ পেল। সে তাদেরকে নিজের বাড়িতে সঙ্গে করে নিয়ে এল।

পরের বছরে আবার বিন্দি ঠাকুরণ, মাঘ মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠীর দিন উপোস করে মেয়ে-জামাইয়ের মঙ্গলের জন্য শীতল ষষ্ঠী পুজো দিল। বামনির মেয়ে জামাইকে বেঁচে উঠতে দেখার পর থেকে সকলেই শীতল ষষ্ঠী ব্রত পালন করতে লাগলো।

শীতল ষষ্ঠী ব্রতের ফল- মাঘ মাসে শুক্লপক্ষে শীতল ষষ্ঠী ব্রত পালন করলে সংসারের মধ্যে থেকেও শোক তাপ পেতে হয় না।।

administrator

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *