www.machinnamasta.in

ওঁ শ্রীং হ্রীং ক্লী গং গণপতয়ে বর বরদ সর্বজনস্ময়ী বশমানয় ঠঃ ঠঃ

April 27, 2024 5:41 am

অন্নপূর্ণা এক হিন্দু দেবী। তার অপর নাম অন্নদা। তিনি শক্তির এক রূপ। অন্নপূর্ণা দ্বিভূজা, তার দুই হাতে অন্নপাত্র ও দর্বী; তিনি রক্তবর্ণা, সফরাক্ষী, স্তনভারনম্রা, বিচিত্র বসনা, নিরত অন্নপ্রদায়িনী ও ভবদুঃখহন্ত্রী; তার মস্তকে নবচন্দ্র, একপাশে ভূমি ও অন্যপাশে শ্রী। নৃত্যপরায়ণ শিবকে দেখে তিনি সন্তুষ্ট হন।

দেবী পার্বতী ভিক্ষারত শিবকে অন্নপ্রদান করে এই নাম প্রাপ্ত হন। চৈত্র মাসের শুক্লাষ্টমী তিথিতে অন্নপূর্ণার পূজা করা হয় এবং নবদ্বীপ ধামে রাস পূর্ণিমা তিথিতে বৌবাজার বারোয়ারী অন্নপূর্ণা পূজা পালন করিয়া থাকে৷ হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, অন্নপূর্ণার পূজা করলে গৃহে অন্নাভাব থাকে না।দক্ষিণামূর্তি সংহিতা গ্রন্থে চতুর্ভূজা এবং পদ্ম, অভয়, অঙ্কুশ ও দান হস্তা অন্নপূর্ণার বর্ণনা রয়েছে। কৃষ্ণানন্দ রচিত তন্ত্রসার গ্রন্থে এই পূজার বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায়। কাশীতে অন্নপূর্ণার একটি বিখ্যাত মন্দির আছে; এই মন্দিরে অন্নপূর্ণা পূজা ও অন্নকূট উৎসব প্রসিদ্ধ। পশ্চিমবঙ্গে অন্নপূর্ণা পূজার বিশেষ প্রচলন রয়েছে।অন্নপূর্ণা পূজা কালীজগদ্ধাত্রী পূজার মতোই তান্ত্রিক পূজা

রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র দেবীর অন্নপূর্ণার মাহাত্ম্য্য বর্ণনা করে অন্নদামঙ্গল কাব্য রচনা করেছিলেন। অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে:

অন্নদামঙ্গলকাব্য অষ্টাদশ শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ কাব্য, সমগ্র বাংলা সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের অন্যতম। … মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র কর্তৃক অন্নপূর্ণা পূজা উপলক্ষে মহারাজের নিজ কীর্তি এবং তাঁহার পূর্বপুরুষ ভবানন্দ মজুমদারের রাজ্য ও রাজা উপাধি লাভের কাহিনী বর্ণনাই ছিল কবির প্রধান উদ্দেশ্য। দেবী অন্নদা (অন্নপূর্ণা) কীভাবে ভবানন্দ মজুমদারকে কৃপা করিলেন, এবং ভবানন্দ কীভাবে জাহাঙ্গীরের দ্বারা অন্নপূর্ণা পূজা করাইয়া রাজত্ব ও রাজা খেতাব লাভ করিলেন – ইহার বর্ণনাই ছিল কবির প্রচ্ছন্ন উদ্দেশ্য। কিন্তু কবি পৌরাণিক অংশ বিশেষ ফলাও করিয়া বর্ণনা করিয়াছেন।

পৌরাণিক উপাখ্যান

মার্কণ্ডেয় পুরাণের কাশীখণ্ড, দেবী ভাগবত পুরাণ ও অন্যান্য পুরাণ এবং কাশীপরিক্রমা ইত্যাদি গ্রন্থে দেবী অন্নপূর্ণা সংক্রান্ত নানা কাহিনি প্রচারিত হয়েছে। এগুলির মধ্যে দুটি কাহিনি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য – কাশীপ্রতিষ্ঠার উপাখ্যান ও ব্যাসকাশী প্রতিষ্ঠার উপাখ্যান। এছাড়া অন্নদামঙ্গল কাব্যেও অন্নপূর্ণা সংক্রান্ত কয়েকটি লৌকিক কাহিনি বর্ণিত হয়েছে।

কাশীপ্রতিষ্ঠার উপাখ্যান

বিবাহের পর কৈলাশ শিখরে শিবপার্বতী বেশ সুখেই দাম্পত্যজীবন কাটাচ্ছিলেন। শিব ছিলেন দরিদ্র। আর্থিক অনটনের জেরে বেশ কিছুদিন পরই শুরু হয় দাম্পত্যকলহ। একদিন পাশা খেলা রত শিব পার্বতীকে মায়া বলে অপমান করেন । শিব শঙ্কর বলেন যেহুতু পার্বতী মহামায়া তাই তার প্রকৃত কোনো অস্থিত্ব নেই । রাগে মা পার্বতী কৈলাশ ত্যাগ করেন । আদি শক্তি মাতার কৈলাশ ত্যাগের ফলে ত্রিলোক জুড়ে শুরু হয় মহামারী । ভক্তকে রক্ষা করতে ভগবান শিব অন্নের সন্ধান শুরু করেন ছদ্মবেশে । মহামায় পার্বতীর মায়ায় তিনি যে ভিক্ষে পাচ্ছিলেন না, তা ঘুমাক্ষরেও টের পাননি শিব। পরে তিনি কাশি তে এক নারির কথা শোনেন যিনি সকলকে অন্নদান করেছিলেন । পর্দাশিনা সেই নারী যে আদি শক্তি পার্বতী তা বুঝতে পারেন শিব শঙ্কর । দেবী মহিমা প্রচারের জন্য কাশী নির্মাণ করে সেখানে অন্নপূর্ণার মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন উনি। চৈত্রমাসের শুক্লা অষ্টমী তিথিতে সেই মন্দিরে দেবী অবতীর্ণ হলেন। সেই থেকেই দেবী অন্নপূর্ণার পূজার প্রচলন বাড়ে।

কাশীতে দেবী অন্নপূর্ণার বিখ্যাত মন্দির রয়েছে। সেখানে প্রতি বছর এই দিনটিতে দেবীর ধুমধাম করে পুজো হয়ে থাকে। এই মন্দিরে অন্নকূট উৎসব বিখ্যাত। এছাড়া হিন্দু ধর্মালম্বীদের কাছে এই পুজো অতি প্রসিদ্ধ।

ব্যাসকাশী প্রতিষ্ঠার উপাখ্যান

দেবী অন্নপূর্ণা কর্তৃক ব্যাসকাশী প্রতিষ্ঠার উপাখ্যানটি কাশীখণ্ডে নেই। এটি অর্বাচীন সংস্কৃত গ্রন্থ কাশীপরিক্রমা থেকে গৃহীত।কাহিনিটি নিম্নরূপ:

পরম বৈষ্ণব ব্যাসদেব বিষ্ণুর নিকট শিবের নিন্দা করায় বিষ্ণু কর্তৃক তিরস্কৃত হন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি শিবের নিকট গিয়ে বিষ্ণুর নিন্দা করেন। তখন শিবও তাকে তিরস্কার করেন। এরপর শিব তাকে পর্ব ব্যতীত কাশী পরিক্রমা করতে নিষেধ করলে অপমানিত ব্যাসদেব দ্বিতীয় কাশী নির্মাণ করতে উদ্যত হন। কিন্তু কোনো দেবতাই তার এই গর্হিত কর্মের ভাগীদার হতে চাইলেন না। শেষে ব্যাসদেব দেবী অন্নপূর্ণার ধ্যানে নিমগ্ন হলেন। অন্নপূর্ণা এক জরতীর ছদ্মবেশে উপস্থিত হয়ে বারংবার তাকে প্রশ্ন করতে থাকেন, “কি হইবে এখানে মরিলে?” ব্যাসদেব বিরক্ত হয়ে বলে ফেলেন, “গর্দভ হইবে বুড়ি এখানে মরিলে।” দেবীর ছলনা সফল হল। তিনি ‘তথাস্তু’ বলে অন্তর্হিত হলেন। কাশীমহিমা রক্ষিত হল। ব্যাসকাশী গর্দভ-বারাণসী নামে উপহাসিত হল।

শঙ্করাচার্য কৃত অন্নপূর্ণা স্তোত্র

অথ শ্রী অন্নপূর্ণা স্তোত্রং।

ওঁ নিত্যানন্দকরী বরাভয়করী সৌন্দর্যরত্নাকরী

নির্ধূতাখিলঘোরপাবনকরী প্রত্যক্ষমাহেশ্বরী।

প্রালেয়াচলবংশপাবনকরী কাশীপুরাধীশ্বরী

ভিক্ষাং দেহি কৃপাবলম্বনকরী মাতান্নপূর্ণেশ্বরী ॥১॥

নানারত্নবিচিত্রভূষণকরী হেমাম্বরাড়ম্বরী

মুক্তাহার-বিলম্বমান বিলসদ্বক্ষোজ-কুম্ভান্তরী।

কাশ্মীরাগরুবাসিতা রুচিকরী কাশীপুরাধীশ্বরী

ভিক্ষাং দেহি কৃপাবলম্বনকরী মাতান্নপূর্ণেশ্বরী ॥২॥

যোগানন্দকরী রিপুক্ষয়করী ধর্ম্মৈকনিষ্ঠাকরী

চন্দ্রার্কানলভাসমানলহরী ত্রৈলোক্যরক্ষাকরী।

সর্ব্বৈশ্বর্য্যসমস্তবাঞ্ছনকরী কাশীপুরাধীশ্বরী

ভিক্ষাং দেহি কৃপাবলম্বনকরী মাতান্নপূর্ণেশ্বরী ॥৩॥

কৈলাসাচলকন্দরালয়করী গৌরী উমা শঙ্করী

কৌমারী নিগমার্থগোচরকরী ওঙ্কারবীজাক্ষরী।

মোক্ষদ্বারকবাটপাটনকরী কাশীপুরাধীশ্বরী

ভিক্ষাং দেহি কৃপাবলম্বনকরী মাতান্নপূর্ণেশ্বরী ॥৪॥

দৃশ্যাদৃশ্যবিভূতিভাবনকরী ব্রহ্মাণ্ডভাণ্ডোদরী

লীলানাটকসূত্রভেদনকরী বিজ্ঞানদীপাঙ্কুরী।

শ্রীসচ্চিদানন্দময়ী পরমেশ্বরী কাশীপুরাধীশ্বরী

ভিক্ষাং দেহি কৃপাবলম্বনকরী মাতান্নপূর্ণেশ্বরী ॥৫॥

উর্ব্বী সর্ব্বজনেশ্বরী ভগবতী মাতান্নপূর্ণেশ্বরী

বেণীনীল-সমানকুন্তলধরী নিত্যান্নদানেশ্বরী।

সর্ব্বানন্দকরী সদা শিবকরী কাশীপুরাধীশ্বরী।

ভিক্ষাং দেহি কৃপাবলম্বনকরী মাতান্নপূর্ণেশ্বরী ॥৬॥

আদিক্ষান্তসমস্তবর্ণনকরী চন্দ্রপ্রভাভাস্করী

কাশ্মীরা ত্রিপুরেশ্বরী ত্রিলহরী নিত্যাঙ্কুরী শর্ব্বরী।

কামাকাঙ্ক্ষ্যকরী মহোৎসবকরী কাশীপুরাধীশ্বরী

ভিক্ষাং দেহি কৃপাবলম্বনকরী মাতান্নপূর্ণেশ্বরী ॥৭॥

দর্বীপাকসুবর্ণরত্নঘটিকা দক্ষে করে সংস্থিতা

বামে চারুপয়োধরী রসভরী সৌভাগ্যমাহেশ্বরী।

ভক্তাভীষ্টকরী ফলপ্রদকরী কাশীপুরাধীশ্বরী

ভিক্ষাং দেহি কৃপাবলম্বনকরী মাতান্নপূর্ণেশ্বরী ॥৮॥

চন্দ্রার্কানলকোটিপূর্ণবদনা বালার্কবর্ণেশ্বরী

চন্দ্রার্কাগ্নিসমানকুণ্ডলধরী চন্দ্রার্কবিম্বাধরী।

মালাপুস্তকপাশকাঙ্কুশধরী কাশীপুরাধীশ্বরী

ভিক্ষাং দেহি কৃপাবলম্বনকরী মাতান্নপূর্ণেশ্বরী ॥৯॥

সর্ব্বত্রাণকরী মহাভয়হরী মাতা কৃপাসাগরী

সাক্ষান্মোক্ষকরী সদা শিবকরী বিশ্বেশ্বরী শ্রীধরী।

দাক্ষানন্দকরী নিরাময়করী কাশীপুরাধীশ্বরী

ভিক্ষাং দেহি কৃপাবলম্বনকরী মাতান্নপূর্ণেশ্বরী ॥১০॥

অন্নপূর্ণে সদাপূর্ণে শঙ্করপ্রাণবল্লভে।

জ্ঞানবৈরাগ্যসিদ্ধ্যর্থং ভিক্ষাং দেহি চ পার্বতি ॥১১॥

মাতা চ পার্বতী দেবী পিতা দেবো মহেশ্বরঃ।

বান্ধবাঃ শক্তিভক্তাশ্চ স্বদেশো ভুবনত্রয়ম্‌ ॥১২॥

॥ইতি শ্রীমচ্ছঙ্করাচার্য্যবিরচিতং অন্নপূর্ণাস্তোত্রং সম্পূর্ণম্॥

মন্ত্র

ধ্যান মন্ত্র

ওঁ রক্তাং বিচিত্র-বসনাং নবচন্দ্রচূড়ামন্নপ্রদাননিরতাং স্তনভারনম্রাম্‌।

নৃত্যন্তমিন্দুশকলাভরণং বিলোক্য হৃষ্টাং ভজে ভগবতীং ভবদুঃখহন্ত্রীম্‌॥

পূজা মন্ত্র

ওঁ সায়ুধায়ৈ সবাহনায়ৈ সালঙ্কারায়ৈ সপরিবারায়ৈ ওঁ হ্রীং অন্নপূর্ণায়ৈ পরমেশ্বর্য্যৈ নমঃ॥

আবাহন মন্ত্র

ওঁ দেবেশি ভক্তিসুলভে পরিবারসমন্বিতে।

যাবত্ত্বাং পূজয়িষ্যামি তাবত্ত্বং সুস্থিরা ভব॥

ওঁ হ্রীং ভগবতি অন্নপূর্ণে দেবি পরিবারাদিভিঃ সহ ইহাগচ্ছ ইহাগচ্ছ ইহ তিষ্ঠ ইহ তিষ্ঠ ইহ সন্নিহিতা ভব ইহ সন্নিরুধ্যস্ব অত্রাধিষ্ঠানং কুরু মম পুজাং গৃহাণ।

(এর পর প্রাণ প্রতিষ্ঠা, চক্ষুর্দান প্রভৃতি করা হয়)

স্বাগত

ওঁ অন্নপূর্ণে স্বাগতং তে সুস্বাগতমিদন্তব।

আসনঞ্চেদমপ্যস্মিন্‌ আস্যতাং পরমেশ্বরি॥

বীজ মন্ত্র

ওঁ হ্রীং নমো ভগবতি মাহেশ্বরি অন্নপূর্ণে স্বাহা॥

প্রনাম মন্ত্র

অন্নপূর্ণে নমস্তুভ্যং নমস্তে পরমম্বিকে।

তচ্চারুচরণে ভক্তিং দেহি দীনদয়াময়ি॥

অন্নপূর্ণে সদাপূর্ণে শঙ্করপ্রাণবল্লভে।

জ্ঞানবৈরাগ্যসিদ্ধ্যর্থং ভিক্ষাং দেহি নমোহস্তুতে॥

অন্নপূর্ণা গায়ত্রী

ওঁ ভগবত্যৈ চ বিদ্মহে মাহেশ্বর্য্যৈ চ ধীমহি।

তন্নোঽন্নপূর্ণা প্রচোদয়াৎ॥

administrator

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *