রসিকতাটা হলো শাশুড়ি জামাইকে পঞ্চ ব্যঞ্জন সাজিয়ে খাওয়ার টেবিলে বসিয়ে পাঁঠার মাংসের বাটিটা এগিয়ে দিতে দিতে জামাইকে বলছেন, “জামাই বাবা তোমার সরকারি চাকরিটা জেনুইন তো।” এটা নিতান্তই সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার প্রেক্ষিতে রসিকতা। কিন্তু এই কথার মধ্যে আছে নিজের কন্যার নিরাপত্তা নিয়ে শাশুড়ির উদ্বেগ।
এই উদ্বেগ থেকেই প্রাচীন কাল থেকে প্রচলিত আছে জামাই ষষ্ঠী উৎসব।বাংলার বারো মাসে তেরো পার্বণের অন্তর্গত এই জামাই ষষ্ঠী উৎসব।জ্যৈষ্ঠ মাসের ষষ্ঠী তিথিতে বাংলার মরমী মায়ের বিবাহিত কন্যার সন্তান কামনায় এই উৎসব বহুকাল ধরে পালন করে আসছেন।
এই উৎসব আসলে সামন্ততান্ত্রিক সমাজে নিজের কন্যার নিরপত্তা সুনিশ্চিত করা ও সন্তান লাভের বাসনাজাত উৎসব।জ্যৈষ্ঠ মাসের তীব্র গরমে সবুজে ভরা বাংলার গাছ প্রসব করে অজস্র ফল।তাই এই অনুষ্ঠানে জামাইকে পাঁচ রকমের ফল দিয়ে আপ্যায়ন করার রীতি আছে।
দেবী ষষ্ঠী মূলত মাতৃত্বের প্রতীক।তাই ষষ্ঠী তিথিতে প্রভাতী সূর্যের আলোতেই এই দেবীকে পুজো করার রীতি গ্রাম বাংলায়ে এখনো প্রচলিত।হলুদ বাংলা ধর্মীয় সংস্কৃতির সাথে সম্পৃক্ত। তাই হলুদ বাটা দিয়ে জামাইযের কপালে তিলক টানা হতো। জামাইকে পিঁড়িতে বসিয়ে হাত পাখায় হাওয়া করতে করতে শাশুড়ি পঞ্চ ব্যঞ্জন এগিয়ে দেয় কাঁসার থালার চারিদিকে।
তাতে অবশ্যই ভাতের সাথে ভাজা মুগের ডাল,একাধিক ভাজা। থাকতো একাধিক রকমের মাছ,পাঁঠার মাংস সহ অনেক সবজির আয়োজন। আর ফলের থালা ভরে উঠতো আম, কাঁঠাল, লিচু, তরমুজ, জামরুল, কালো জাম ইত্যাদি অন্তত পাঁচ রকমের ফলে।তবে যুগের পরিবর্তন এবং সঙ্গে ধনতান্ত্রিক যুগের প্রভাবে এই অনুষ্ঠানের রূপভেদ ঘটেছে অনেক।
এখন শহুরে শাশুড়িরা আর গলদঘর্ম হয়ে নিজের হাতে রান্না না করে কোনো হোটেলে অর্ডার দেন বা হোটেলের সিট বুক করেন। জামাই, মেয়ে, ওদের সন্তান, শ্বশুর, শাশুড়ি সহ বাড়ির ছোটো বড়ো অনেকেই উপস্থিত থাকে ওই অনুষ্ঠানে।
তবে যেভাবে জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে তাতে মধ্যবিত্ত শ্বশুর শ্বাশুড়িরা পড়েছেন বিপদে। তাই বলে অনুষ্ঠান কিন্তু বন্ধ হয় না। হয়তো কিছু আয়োজনের অঙ্গচ্ছেদ হয়।এটাই বাঙালি সংস্কৃতি,বাঙালির চিরন্তন মূল্যবোধ।আগামীকাল রবিবার ৫ জ্যৈষ্ঠ এ বছর জামাই ষষ্ঠী। বাজার আগ্নিমূল্য।
পাঁঠার মাংস – কম বেশি ৮০০ টাকা কেজি। বড়ো রুই কাতলা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি। পাবদা,চিতল,৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। আম,লিচু,জামরুল১০০ টাকা কেজি। তবু চলবে অনুষ্ঠান,জমবে খাওয়া দাওয়া।