আর কিছুদিন পরেই পৌষ সংক্রান্তিতে হতে চলেছে গঙ্গাসাগরে ‘পুণ্যস্নান’। হাজার হাজার ভক্ত সেদিন সাগরসঙ্গমে স্নান করে কপিল মুনির আশ্রমে পুজো দেবে। আসুন তার আগে আমরা সংক্ষেপে জেনে নিই এই মহাতীর্থর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। গঙ্গা নদীর মর্ত্যে প্রত্যাবর্তন ও সাগর রাজার পুত্রদের জীবন বিসর্জনের লোকগাঁথাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে এই বিখ্যাত তীর্থস্থান গঙ্গাসাগর। গঙ্গাসাগর মেলা দ্বিতীয় বৃহত্তম হিন্দু মেলা (কুম্ভমেলার পরে)। সাগর দ্বীপের দক্ষিণে হুগলি নদী বঙ্গোপসাগরে পতিত হচ্ছে। এই স্থানটি হিন্দুদের কাছে পবিত্র তীর্থ।
মহাভারতের ‘বনপর্বে’ এই তীর্থের উল্লেখ আছে। মহাভারত অনুযায়ী পাণ্ডবগণ কৌশিক নদী তটদেশ থেকে যাত্রা করে গঙ্গাসাগরসংগমে – গঙ্গা ও সাগরের (সমুদ্র) মিলনস্থল – উপস্থিত হন। কিংবদন্তি আছে, গঙ্গাসাগরে সাংখ্য দর্শনের আদি-প্রবক্তা কপিলমুনির আশ্রম ছিল। একদা কপিলমুনির ক্রোধাগ্নিতে সগর রাজার ষাট হাজার পুত্র ভস্মীভূত হন এবং তাদের আত্মা নরকে নিক্ষিপ্ত হয়। সগর রাজার পৌত্র ভগীরথ স্বর্গ থেকে গঙ্গাকে নিয়ে এসে সগরপুত্রদের ভস্মাবশেষ ধুয়ে ফেলেন এবং তাদের আত্মাকে মুক্ত করে দেন।
প্রাচীন যুগে রচিত, মহাকবি কালিদাস কর্তৃক খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দীতে রচিত সংস্কৃত ভাষার কাব্য ‘রঘুবংশম’-এ গঙ্গাসাগর তীর্থযাত্রার উল্লেখ পাওয়া যায়। মধ্যযুগীয় সময়ে, দেশের প্রতিটি কোণ থেকে তীর্থযাত্রীরা বহু বাঁধা ও বিপদ উপেক্ষা করে মকর সংক্রান্তিতে গঙ্গাসাগরে উপস্থিত হয়েছেন। বিপদজনক যাত্রার সময়, তীর্থযাত্রীদের কলেরা ও পক্সের মতো রোগের সম্মুখীন হতে হয়েছে। বিপদ ও মৃত্যু সম্মুখীন হওয়ার কারণে তীর্থযাত্রীদের মধ্যে এই বচনের উৎপত্তি হয়েছে — “সব তীর্থ বার বার, গঙ্গাসাগর একবার।” আবার আধুনিক যুগে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রচিত কপালকুণ্ডলা-এ গঙ্গাসাগরে পৌঁছানোর জন্য একটি বিপজ্জনক যাত্রার আভাস রয়েছে।