—- শাশ্বতী চ্যাটার্জী
প্রথমে বলে রাখা দরকার যে বহুল প্রচলিত শব্দ ‘ব্যারাকপুর’ কথাটা আসলে ভুল। কথাটা হলো ‘বারাকপুর’। অনেকের ধারণা মিলিটারিদের ‘ব্যারাক’ থেকে ‘ব্যারাকপুর’ কথাটা এসেছে (Barrackpore)। কিন্তু সিপাহী বিদ্রোহের আগেও ‘বারাকপুর’ কথাটা পাওয়া যায়। স্থাননামের উপর গবেষকেরা বলছেন,বারো ভুঁইয়া দের সময় বরবক শাহ নামে এক সুশাসকের নাম থেকেই প্রথমে বরকপুর ও পরে ‘বারাকপুর’ কথাটি এসেছে।
চরম ব্যস্ততার মধ্যে অনেক কষ্টে সময় বের করে যদি একদিন বা দুদিন সময় পান ঘুরে আসুন ঘরের পাশে বারাকপুরে।নৈশযাপন করবেন অবশ্যই ‘মালঞ্চ’ (Malancha) নামে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অতিথি নিবাসে। বিশেষকরে কোনো এক পূর্ণিমার রাত যদি ওই অতিথি নিবাসে কাটান সকালে উঠে দেখবেন মনের সমস্ত কালিমা ধুয়ে গেছে।
মালঞ্চ অতিথি নিবাস একেবারে গঙ্গার পারে অবস্থান করে । পূর্ণিমার রাতে আপনার চোখের সামনে জল ঝল-মল করতে করতে যখন গঙ্গার ধারা বয়ে যাবে আর দূরে দু’একটা জেলে নৌকো ঘুরে বেড়াবে তখন আপনার মন পবিত্র হয়ে যাবে। আর যদি তা বর্ষাকালে হয়,তাহলে কথাই নেই। পূর্ণিমা ও কোটাল মিলিত হলে গঙ্গা আপনার পা ধুয়ে দিয়ে যাবে ওই পূর্ণিমা রাতে।
এ তো গেল রাতের অনুপম দৃশ্য। ঘরের পাশের বারাকপুরে দেখার মতো অনেক কিছু আছে।
সকালে মালঞ্চে পৌঁছে ওখানেই ব্রেকফাস্ট করে মালঞ্চের সঙ্গে লাগানো গান্ধীঘাট ও জহরকুঞ্জ দেখে নিন। গঙ্গার পারে জহরকুঞ্জ একটা সুন্দর পার্ক। বেরিয়েই চলে যান ৫ মিনিটের হাঁটা পথ অন্নপূর্ণা মন্দিরে।
অন্নপূর্ণা মন্দির (Annapurna Mandir) একটি অত্যাশ্চর্য স্থাপত্য ও বারাকপুরের একটি জনপ্রিয় মন্দির যা রানী রাশমনির দক্ষিণেশ্বর মন্দির দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল।
এটি ১৮৭৫ সালে শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস (Ramkrishna Paramhansa) উদ্বোধন করেছিলেন। রানী রাশমনির (Rani Rasmoni) কনিষ্ঠ কন্যা জগদম্বা দেবী অন্নপূর্ণা মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন।যদি ওখানে দুপুরে প্রসাদ নিতে চান তাহলে ১০ টার মধ্যে টিকিট কেটে ঘরে ফিরে আসুন। তারপর স্নান সেরে গিয়ে প্রসাদ নিয়ে ঘরে ফিরে একটু বিশ্রাম করে বেরিয়ে পড়ুন রাস্তায়। একটা টোটো বা অটো নিয়ে ঘুরে আসুন বারাকপুরে দর্শনীয় স্থানগুলো। অবশ্যই যাবেন মঙ্গলপান্ডে পার্ক,গান্ধী সংগ্রহশালা,ক্যাথেড্রায়াল চার্চ,পুরনো ব্যারাক,ধোবিঘাট ও চার পয়সার ঘাট।
এই সমস্ত জায়গাগুলো আপনাকে মুগ্ধ করবে।মঙ্গলপান্ডে ঘাটের রেঁস্তোরায় যদি রাতের আহার করেন তাহলে মন ভরে যাবে।একদম গঙ্গার পারে চারিদিক খোলা ছোট ছোট ঘরে অল্প আলোয় আহারে মজাই আলাদা।
এরপরে মালঞ্চে ফিরে মধ্য রাতের সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।অপরূপ গঙ্গাকে দেখে সকালে পবিত্র মনে বাড়ি ফিরে যান।যদি মন চায় তাহলে দ্বিতীয় দিন শুধুই বিশ্রাম নিন।মালঞ্চের ক্যান্টিনের খাবার বেশ ভালো।
মালঞ্চ on line booking করা যায়।বারাকপুর রেল স্টেশনে নেমে ১ নম্বর প্লাটফর্ম দিয়ে বেরিয়ে একটা আটো বা টোটো নিয়ে বললেই ওরা মালঞ্চে নিয়ে যাবে।
তাহলে চলুন ঘুরে আসি একদিনের বিশ্রামের জন্য বারাকপুর