বাংলা আসলে মন্দিরের পীঠস্থান। এখানে সর্বত্র ছড়িয়ে আছে অজস্র মন্দির। আর বর্ধমান জেলা তো মন্দির নগরি। দেশের জাগ্রত শিব মন্দিরগুলির মধ্যে অন্যতম বর্ধমানের একশো আট শিব মন্দির। শিবরাত্রি উপলক্ষে সেজে উঠেছে মন্দির চত্বর। অন্যান্যবারের মতো এবারও অগণিত ভক্ত সমাগম হবে বলে মনে করছে মন্দির কর্তৃপক্ষ। এমনিতেই সারা বছর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শনার্থীরা আসেন এই মন্দির। অনেকেই চার ধাম দর্শনে বেরিয়ে বর্ধমানের এই মন্দিরে আসেন। শিবরাত্রি উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় এখানে। মেলা বসে। পূর্ব বর্ধমানের নবাবহাট অঞ্চলে অবস্থিত রাজ আমলের তৈরি একশো আট শিব মন্দির। আজ থেকে ২০০ বছরেরও বেশি আগে বর্ধমানের রাজমহিষী, রাজা তিলকচাঁদের পত্নী বিষ্ণুকুমারীর সাধ হয়েছিল শিব মন্দির প্রতিষ্ঠা করার।
শোনা যায় ‘দশনামী’ শৈব সম্প্রদায় ছিল তাঁর মূল অনুপ্রেরণা। সেই ইতিহাসের সাক্ষী এই অপূর্ব স্থাপত্য নিদর্শন একশো আট শিবমন্দির। বর্ধমান রাজপরিবারের উল্লেখযোগ্য দুই কীর্তি হল কালনার গঙ্গাতীরে একশো আট শিবমন্দির আর নবাবহাটের এই একশো আট শিবমন্দির। ৭১০ শকাব্দে বা ১৭৮৮ খ্রিস্টাব্দে লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে এই মন্দিরগুলি নির্মিত হয়েছিল। ১৭৮৮ খ্রিস্টাব্দে শুরু হয়ে ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দে এই নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এই মন্দির বিষ্ণুকুমারীর পরিকল্পনার ফসল। তাঁর ইচ্ছে ছিল তিনি জপমালার আদলে মন্দির নির্মাণ করবেন। জপমালায় যেমন ১০৮টি পুঁথি থাকে এবং থাকে অতিরিক্ত পুঁথি বা মেরু, তেমনই এই মন্দির। বালেশ্বরের মন্দিরের আটচালার নকশার অনুকরণে নবাবহাটের ১০৮ শিবমন্দির তৈরি করা হয়েছে। বাংলার অজস্র মন্দিরের মধ্যে এই মন্দিরগুলো এখনও খুবই জাগ্রত বলে প্রচারিত।