মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথি। এই শুভ দিনে আমরা বিদ্যার অধিষ্টাত্রী দেবী সরস্বতীর বন্দনা করি। পূজিত হন মা নীল সরস্বতী। তিনি আমাদের বিদ্যা ও জ্ঞাণ প্রদান করেন। সরস্বতী মূলত বিদ্যা কথা সমস্ত জ্ঞান ও সৃষ্টির কারক। দেবীকে অনেকে ব্রহ্মার পত্নী বা মেয়ে বলে সম্বোধন করে। আবার অনেকে এমন বলে থাকে যে দেবীকে ব্রহ্মা সৃষ্টি করা সত্ত্বেও তার প্রতি আকৃষ্ট হন এবং তাকে পাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে পড়েন। সেই ক্ষণে তার চতুর্দিকে পরিভ্রমণ করতে থাকে ও চতুর্দিকে দৃষ্টিনিক্ষেপ হেতু ব্রহ্নার নাকি চারটি মস্তক।
কিন্তু এই ব্যাখ্যাটি অনেকে ভ্রান্ত বলে মনে করেন। পদ্মপুরাণ এ স্কন্দপুরাণ অনুযায়ী সরস্বতী একজন নদীর দেবী ছিলেন। পুরাকালে ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়দের মধ্যে একটি ভয়ানক যুদ্ধ হয়ছিল। এর থেকে ভাদবগ্নি নামক একটি সর্বগ্রাসী আগুনের জন্ম হয়। যেটা সমগ্র সৃষ্টিকে ধ্বংস করতে সমর্থ ছিল। সেই সময় সমগ্র সৃষ্টিকে রক্ষা হেতু দেবী ব্রহ্মালোক ত্য়াগ করে ঋষি উত্তঙ্কের আশ্রমে আসেন। ভগবান শিবের অনুরোধে সরস্বতী নামক নদীতে রূপান্তরিত হয়ে সমুদ্রের দিকে প্রবাহিত হন। উক্ত আগুনকে নিমজ্জিত করেন।
আবার অনেক পণ্ডিত অন্য মন পোষণ করেন। তাঁদের মতে, ভগবান বিষ্ণুর নাভি থেকে একটি পদ্মফুল উত্পন্ন হয়। তার মধ্যে ভগবান ব্রহ্মার জন্ম হয়। বিষ্ণুর আদেশ অনুসারে ভগবান ব্রহ্মার উপর সমস্ত সৃষ্টি রচনার দায়িত্ব পড়ে। কথামত ব্রহ্মা সমস্ত বিশ্বব্রহ্মাণ্ড রচনা করেন। প্রকৃতি ও প্রকৃতির নিয়মও তৈরি করেন। কিন্তু প্রকৃতি ও সময় বিধানানুসারে স্বাধীন।
এই নিয়ম বা সৃষ্টির কারকই হল দেবী সরস্বতী, যিনি স্বাধীন ও স্বয়ংসম্পূর্ণা। ব্রহ্মা এই সৃষ্টি রচনার পর দেবী সরস্বতী বা প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা বা বিচলিত হয়ে পড়েন, যা নিয়ম বিরুদ্ধ। বিচলিত হওয়ার কারণে চিন্তায় তার পাঁচটি মস্তকের সৃষ্টি হয়। এই নিয়মবিরুদ্ধ আচরণের কারণে ভগবান শিব রুষ্ট হয়ে ব্রহ্মার পঞ্চম মাথাটি কেটে দেন ও অভিশাপ দেন, তিনি যেন মর্ত্যে কোনওদিন পূজো না পান।
বহুজনের বহুমত থাকলেও একটা কথা স্পষ্ট যে দেবী সরস্বতী বিদ্য়া ও জ্ঞানের কারক। যিনি ৬৮ কলায় পারদর্শী। দেবীর চারটি হাত। একটি হাতে জল, একটি হাতে জপমালা, একটি হাতে পুস্তক ও অন্য হাতে বীণা। এই প্রত্যেকটির ভিন্ন ভিন্ন অর্থ আছে। জল নির্মলতা বা শুদ্ধতার প্রতীক। পুস্তক বেদের কারক। জপমালা মনসংযোগ ও আধ্য়াত্মিকতার কারক। বীণা সঙ্গীত বা ছন্দের কারক। দেবীর বাহন হংস বা হাঁস। বাহন অর্থে যিনি বহন করেন। হাঁস কেন বাহন?এটিরও ব্যাখ্য়া আছে। আসলে হাঁস এমন একটি প্রাণী যা জল-স্থল ও অন্তরীক্ষে গমন বা বিচরণ করে। আবার সমস্ত জ্ঞান ও সৃষ্টিতত্ত্বের কারক সরস্বতীর এই তিনটি প্রদেশেই বিচরণ আবশ্যক। তাই হিন্দুশাস্ত্রে হাঁসকেই দেবীর বাহন বলা হয়েছে।
শুধু হিন্দুই নয়, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মও এই দেবীর পুজো বা আরাধনার উল্লেখ পাওয়া যায়। রামায়ণেও দেবী সরস্বতীর অবদানের কথা উল্লেখ আছে। রাবণের ভাই কুম্ভকর্ণ ব্রহ্মার কাছে বর প্রার্থনার সময় ইন্দ্রাসনের পরিবর্তে নিদ্রাসন চেয়ে বসেন। আসলে সৃষ্টিকর্তা হেতু বাগদেবী সরস্বতী কুম্ভকর্ণের মুখগহ্বরের অবস্থান করে তার বাক নিয়ন্ত্রণ করেন। তাই যুদ্ধে রাবণ বধের পূর্বে কুম্ভকর্ণের বধ নিশ্চিত করে। তা না হলে পরিণতি ভয়ানক বা সত্য়ের জয় অসম্ভব হয়ে যেত। তাই রামায়ণে দেবী সরস্বতী ভবিষ্যতের সত্যের জয়কে ত্বরান্বিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
পৌরাণিক ব্যাখ্যা যাই হোক বা কেন, দেবী আসলে বৈদিক সৃষ্টি। কিন্তু বর্তমানে অন্যরূপে দেবীর আরাধনা করা হয়। বৈদিকযুগে তন্ত্রসিদ্ধি লাভের উদ্দেশ্যে নীলসরস্বতীর আরাধনার উল্লেখ পাওয়া যায়। আবার পঞ্চমী তিথিতে অনেক তর্পণও করে থাকেন। দেবীকে কালি বা মহামায়ার একটি রূপ বলা হয়েছে। যা দেবীর প্রণাম মন্ত্রটি ব্য়াখ্যা করলেই জানা যায়। মন্ত্রটি হল…
ভদ্রকাল্যৈ নমো নিত্যং সরস্বত্যৈ নমো নমঃ। বেদ-বেদাঙ্গ-বিদ্যাস্থানভ্যঃ এব চ স্বাহা।।
অর্থাত্ ভদ্রকালীকে (মঙ্গলদায়িকা ভগবতী) নিত্য নমস্কার। দেবী সরস্বতীকে পুনঃ পুনঃ নমস্কার ও বেদ-বেদান্ত-বেদান্তাদি-বিদ্য়াস্থানকে নমস্কার। দেবী সরস্বতীকে দুর্গার কন্যারূপেও ব্য়াখ্য়া করা হয়। যিনি দুর্গাপুজোর ময় দুর্গার সঙ্গেই পুজিত হোন।
যাদের বিদ্যায় বার বার বাধা আসছে অথবা যারা বিশেষ স্থানাধীকার করতে আগ্রহী তারা এই শুভ দিনে সরস্বতীপূজার সাথে সাথে “নীল সরস্বতী”র আরাধনা করতে পারেন। “নীল সরস্বতীর কবচ” এবং চারমুখী রুদ্রাক্ষ ও ধারণ করতে পারেন। অথবা “সরস্বতী যন্ত্র” (Maa Saraswati) বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। (Neel Saraswati)
সকালে স্নান সেরে সাদা বস্ত্র পরে এইভাবে ক্রম অনুযায়ী আরাধনা করতে হবে।
সরস্বতীর বন্দনাঃ
যা কুন্দেনু তুষার হার ধবলা যা শুভ্রবস্ত্রাবৃতা
যা বীণা বরদণ্ডমণ্ডিত করা যা শ্বেত পদ্মাসনা।
যা ব্রহ্মাচ্যুতশংকর প্রভৃতির্দেবৈঃ সদাবন্দিতা
সা মাং পাতুসরস্বতী ভগবতী নিঃশেষ জাড্যাপহাম্॥১॥
শুক্লাং ব্রহ্ম বিচার সার পরমাদ্যাং জগদ্ব্যাপিনীম্
বীণা পুষ্পক ধারিণীমভয়দাম্ জাড্যান্ধকারাপহাম।
হস্তে স্ফটিক মালিকাম্ বিদধতীম্ পদ্মাসনে সংস্থিতাম্
বন্দে ত্বাং পরমেশ্বরীম্ ভগবতীম্ বুদ্ধিপ্রদাম্ সারদাম্॥২॥
সরস্বতীর ধ্যানঃ
ওঁ সরস্বতী ময়া দৃষ্টবা, বীণা পুস্তক ধারণীম্।
হংস বাহিনী সমাযুক্তা মা বিদ্যা দান করেতু মে ওঁ।।
সরস্বতীর জপ মন্ত্রঃ
ওঁ বদ্ বদ্ বাগ্বাদিনি স্বাহা।
সরস্বতীর প্রণাম মন্ত্রঃ
ওঁ সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে।
বিশ্বরূপে বিশালাক্ষি বিদ্যাং দেহি নমোহস্তু তে।।
সরস্বতীর প্রণাম মন্ত্রঃ (বিদ্যারম্ভে প্রণাম মন্ত্র)
ওঁ সরস্বতী নমস্তুভ্যং বরদে কামরূপিণি।
বিদ্যারম্ভং করিষ্যামি সিদ্ধির্ভবন্তু মে সদা।।
অঞ্জলিঃ
ওঁ ভদ্রকাল্যৈ নমো নিত্যং সরস্বত্যৈ নমো নমঃ।
বেদ-বেদাঙ্গ-বেদান্ত-বিদ্যাস্থানেভ্যঃ এব চ।।
সরস্বতী যন্ত্র
এই যন্ত্র স্থাপন করলে বিদ্যায় অত্যন্ত শুভ ফল লাভ সম্ভব। নিদানপক্ষে যন্ত্রটি লাল কালিতে কাগজে লিখে বা প্রিন্ট করে পড়ার টেবিলে রাখলে বা বই-এর উপরে লাগিয়ে রাখলেও খানিক শুভ ফল পাওয়া যায়।
সরস্বতী কবচ ঃ ধারণেও অত্যন্ত শুভ ফল লাভ হয়। তবে এক্ষেত্রে সাধকের সাহায্য নেওয়া উচিৎ।
এর পর নীল সরস্বতীর মন্ত্র জপ করতে হবে। দশ মহাবিদ্যার অন্যতম দেবী তাঁরা কে নীল সরস্বতী রূপে বন্দনা করা হয়।
নীল সরস্বতীর মূল মন্ত্রঃ
ঐং ওং হ্রীং স্ত্রীং হূং ফট্।
নীল সরস্বতীর মহামন্ত্রঃ
ওং হ্রীং শ্রীং হ্রীং ঐং হূং নীল সরস্বতী ফট্ স্বাহা।
এছাড়া আর কিছু উপায় বিদ্যার উন্নতি সাধন সম্ভব। যেমন চারমুখী রুদ্রাক্ষ ও জপ করে ধারণ করা যেতে পারে।
ত্রিপুরা সুন্দরীর পূজাও এই বিশেষ দিনে করা যেতে পারে। ত্রিপুরা সুন্দরী বুধের দেবতা। বুদ্ধির কারক। তাই জড়বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিগণও ত্রিপুরা সুন্দরীর মন্ত্র জপ করে সুফল পেতে পারেন। যারা নিজে জপ করতে অসামর্থ তাদের পরিবারের যে কোন সদস্য বিশেষতঃ মা, বাবা, ভাই অথবা বোন তাদের হয়ে জপ করতে পারেন।
ত্রিপুরা সুন্দরীর মূলমন্ত্রঃ
“ওঁ এং হ্রীং শ্রীং ত্রিপুরা সুন্দরীয়ৈ নমঃ।”
অথবা “হুম শ্রীং হ্রীং বজ্র ভারচান্যে হুম হুম ফট্ এং।”
॥ তারাকবচম্ ॥ নীল সরস্বতী কবচ
শ্রীগণেশায় নমঃ ।
ঈশ্বর উবাচ ।
কোটিতন্ত্রেষু গোপ্যা হি বিদ্যাতিভয়মোচিনী ।
দিব্যং হি কবচং তস্যাঃ শৃণুষ্ব সর্বকামদম্ ॥ ১॥
অস্য তারাকবচস্য অক্ষোভ্য ঋষিঃ , ত্রিষ্টুপ্ ছন্দঃ ,
ভগবতী তারা দেবতা , সর্বমন্ত্রসিদ্ধিসমৃদ্ধয়ে জপে বিনিয়োগঃ ।
প্রণবো মে শিরঃ পাতু ব্রহ্মরূপা মহেশ্বরী ।
ললাটে পাতু হ্রীংকারো বীজরূপা মহেশ্বরী ॥ ২॥
স্ত্রীংকারো বদনে নিত্যং লজ্জারূপা মহেশ্বরী ।
হূঁকারঃ পাতু হৃদয়ে ভবানীরূপশক্তিধৃক্ ॥ ৩॥
ফট্কারঃ পাতু সর্বাঙ্গে সর্বসিদ্ধিফলপ্রদা ।
খর্বা মাং পাতু দেবেশী গণ্ডয়ুগ্মে ভয়াপহা ॥ ৪॥
নিম্নোদরী সদা স্কন্ধয়ুগ্মে পাতু মহেশ্বরী ।
ব্যাঘ্রচর্মাবৃতা কট্যাং পাতু দেবী শিবপ্রিয়া ॥ ৫॥
পীনোন্নতস্তনী পাতু পার্শ্বয়ুগ্মে মহেশ্বরী ।
রক্তবর্তুলনেত্রা চ কটিদেশে সদাঽবতু ॥ ৬॥
ললজিহ্বা সদা পাতু নাভৌ মাং ভুবনেশ্বরী ।
করালাস্যা সদা পাতু লিঙ্গে দেবী হরপ্রিয়া ॥ ৭॥
পিঙ্গোগ্রৈকজটা পাতু জঙ্ঘায়াং বিঘ্ননাশিনী ।
প্রেতখর্পরভৃদ্দেবী জানুচক্রে মহেশ্বরী ॥ ৮॥
নীলবর্ণা সদা পাতু জানুনী সর্বদা মম ।
নাগকুণ্ডলধর্ত্রী চ পাতু পাদয়ুগে ততঃ ॥ ৯॥
নাগহারধরা দেবী সর্বাঙ্গং পাতু সর্বদা ।
নাগকঙ্কধরা দেবী পাতু প্রান্তরদেশতঃ ॥ ১০॥
চতুর্ভুজা সদা পাতু গমনে শত্রুনাশিনী ।
খড্গহস্তা মহাদেবী শ্রবণে পাতু সর্বদা ॥ ১১॥
নীলাম্বরধরা দেবী পাতু মাং বিঘ্ননাশিনী ।
কর্ত্রিহস্তা সদা পাতু বিবাদে শত্রুমধ্যতঃ ॥ ১২॥
ব্রহ্মরূপধরা দেবী সঙ্গ্রামে পাতু সর্বদা ।
নাগকঙ্কণধর্ত্রী চ ভোজনে পাতু সর্বদা ॥ ১৩॥
শবকর্ণা মহাদেবী শয়নে পাতু সর্বদা ।
বীরাসনধরা দেবী নিদ্রায়াং পাতু সর্বদা ॥ ১৪॥
ধনুর্বাণধরা দেবী পাতু মাং বিঘ্নসঙ্কুলে ।
নাগাঞ্চিতকটী পাতু দেবী মাং সর্বকর্মসু ॥ ১৫॥
ছিন্নমুণ্ডধরা দেবী কাননে পাতু সর্বদা ।
চিতামধ্যস্থিতা দেবী মারণে পাতু সর্বদা ॥ ১৬॥
দ্বীপিচর্মধরা দেবী পুত্রদারধনাদিষু ।
অলঙ্কারান্বিতা দেবী পাতু মাং হরবল্লভা ॥ ১৭॥
রক্ষ রক্ষ নদীকুঞ্জে হূং হূং ফট্ সুসমন্বিতে ।
বীজরূপা মহাদেবী পর্বতে পাতু সর্বদা ॥ ১৮॥
মণিভৃদ্বজ্রিণী দেবী মহাপ্রতিসরে তথা ।
রক্ষ রক্ষ সদা হূং হূং ওঁ হ্রীং স্বাহা মহেশ্বরী ॥ ১৯॥
পুষ্পকেতুরজার্হেতি কাননে পাতু সর্বদা ।
ওঁ হ্রীং বজ্রপুষ্পং হুং ফট্ প্রান্তরে সর্বকামদা ॥ ২০॥
ওঁ পুষ্পে পুষ্পে মহাপুষ্পে পাতু পুত্রান্মহেশ্বরী ।
হূং স্বাহা শক্তিসংয়ুক্তা দারান্ রক্ষতু সর্বদা ॥ ২১॥
ওঁ আং হূং স্বাহা মহেশানী পাতু দ্যূতে হরপ্রিয়া ।
ওঁ হ্রীং সর্ববিঘ্নোত্সারিণী দেবী বিঘ্নান্মাং সদাঽবতু ॥ ২২॥
ওঁ পবিত্রবজ্রভূমে হুংফট্স্বাহা সমন্বিতা ।
পূরিকা পাতু মাং দেবী সর্ববিঘ্নবিনাশিনী ॥ ২৩॥
ওঁ আঃ সুরেখে বজ্ররেখে হুংফট্স্বাহাসমন্বিতা ।
পাতালে পাতু সা দেবী লাকিনী নামসংজ্ঞিকা ॥ ২৪॥
হ্রীংকারী পাতু মাং পূর্বে শক্তিরূপা মহেশ্বরী ।
স্ত্রীংকারী পাতু দেবেশী বধূরূপা মহেশ্বরী ॥ ২৫॥
হূংস্বরূপা মহাদেবী পাতু মাং ক্রোধরূপিণী ।
ফট্স্বরূপা মহামায়া উত্তরে পাতু সর্বদা ॥ ২৬॥
পশ্চিমে পাতু মাং দেবী ফট্স্বরূপা হরপ্রিয়া ।
মধ্যে মাং পাতু দেবেশী হূংস্বরূপা নগাত্মজা ॥ ২৭॥
নীলবর্ণা সদা পাতু সর্বতো বাগ্ভবা সদা ।
ভবানী পাতু ভবনে সর্বৈশ্বর্যপ্রদায়িনী ॥ ২৮॥
বিদ্যাদানরতা দেবী বক্ত্রে নীলসরস্বতী ।
শাস্ত্রে বাদে চ সঙ্গ্রামে জলে চ বিষমে গিরৌ ॥ ২৯॥
ভীমরূপা সদা পাতু শ্মশানে ভয়নাশিনী ।
ভূতপ্রেতালয়ে ঘোরে দুর্গমা শ্রীঘনাঽবতু ॥ ৩০॥
পাতু নিত্যং মহেশানী সর্বত্র শিবদূতিকা ।
কবচস্য মাহাত্ম্যং নাহং বর্ষশতৈরপি ॥ ৩১॥
শক্নোমি গদিতুং দেবি ভবেত্তস্য ফলং চ য়ত্ ।
পুত্রদারেষু বন্ধূনাং সর্বদেশে চ সর্বদা ॥ ৩২॥
ন বিদ্যতে ভয়ং তস্য নৃপপূজ্যো ভবেচ্চ সঃ ।
শুচির্ভূত্বাঽশুচির্বাপি কবচং সর্বকামদম্ ॥ ৩৩॥
প্রপঠন্ বা স্মরন্মর্ত্যো দুঃখশোকবিবর্জিতঃ ।
সর্বশাস্ত্রে মহেশানি কবিরাড্ ভবতি ধ্রুবম্ ॥ ৩৪॥
সর্ববাগীশ্বরো মর্ত্যো লোকবশ্যো ধনেশ্বরঃ ।
রণে দ্যূতে বিবাদে চ জয়স্তত্র ভবেদ্ ধ্রুবম্ ॥ ৩৫॥
পুত্রপৌতান্বিতো মর্ত্যো বিলাসী সর্বয়োষিতাম্ ।
শত্রবো দাসতাং য়ান্তি সর্বেষাং বল্লভঃ সদা ॥ ৩৬॥
গর্বী খর্বী ভবত্যেব বাদী স্খলতি দর্শনাত্ ।
মৃত্যুশ্চ বশ্যতাং য়াতি দাসাস্তস্যাবনীভুজঃ ॥ ৩৭॥
প্রসঙ্গাত্কথিতং সর্বং কবচং সর্বকামদম্ ।
প্রপঠন্বা স্মরন্মর্ত্যঃ শাপানুগ্রহণে ক্ষমঃ ॥ ৩৮॥
আনন্দবৃন্দসিন্ধূনামধিপঃ কবিরাড্ ভবেত্ ।
সর্ববাগিশ্বরো মর্ত্যো লোকবশ্যঃ সদা সুখী ॥ ৩৯॥
গুরোঃ প্রসাদমাসাদ্য বিদ্যাং প্রাপ্য সুগোপিতাম্ ।
তত্রাপি কবচং দেবি দুর্লভং ভুবনত্রয়ে ॥ ৪০॥
গুরুর্দেবো হরঃ সাক্ষাত্তত্পত্নী তু হরপ্রিয়া ।
অভেদেন ভজেদ্যস্তু তস্য সিদ্ধিদূরতঃ ॥ ৪১॥
মন্ত্রাচারা মহেশানি কথিতাঃ পূর্ববত্প্রিয়ে ।
নাভৌ জ্যোতিস্তথা রক্তং হৃদয়োপরি চিন্তয়েত্ ॥ ৪২॥
ঐশ্বর্যং সুকবিত্বং চ মহাবাগিশ্বরো নৃপঃ ।
নিত্যং তস্য মহেশানি মহিলাসঙ্গমং চরেত্ ॥ ৪৩॥
পঞ্চাচাররতো মর্ত্যঃ সিদ্ধো ভবতি নান্যথা ।
শক্তিয়ুক্তো ভবেন্মর্ত্যঃ সিদ্ধো ভবতি নান্যথা ॥ ৪৪॥
ব্রহ্মা বিষ্ণুশ্চ রুদ্রশ্চ য়ে দেবাসুরমানুষাঃ ।
তং দৃষ্ট্বা সাধকং দেবি লজ্জায়ুক্তা ভবন্তি তে ॥ ৪৫॥
স্বর্গে মর্ত্যে চ পাতালে য়ে দেবাঃ সিদ্ধিদায়কাঃ ।
প্রশংসন্তি সদা দেবি তং দৃষ্ট্বা সাধকোত্তমম্ ॥ ৪৬॥
বিঘ্নাত্মকাশ্চ য়ে দেবাঃ স্বর্গে মর্ত্যে রসাতলে ।
প্রশংসন্তি সদা সর্বে তং দৃষ্ট্বা সাধকোত্তমম্ ॥ ৪৭॥
ইতি তে কথিতং দেবি ময়া সম্যক্প্রকীর্তিতম্ ।
ভুক্তিমুক্তিকরং সাক্ষাত্কল্পবৃক্ষস্বরূপকম্ ॥ ৪৮॥
আসাদ্যাদ্যগুরুং প্রসাদ্য য় ইদং কল্পদ্রুমালম্বনং
মোহেনাপি মদেন চাপি রহিতো জাড্যেন বা য়ুজ্যতে ।
সিদ্ধোঽসৌ ভুবি সর্বদুঃখবিপদাং পারং প্রয়াত্যন্তকে
মিত্রং তস্য নৃপাশ্চ দেবি বিপদো নশ্যন্তি তস্যাশু চ ॥ ৪৯॥
তদ্গাত্রং প্রাপ্য শস্ত্রাণি ব্রহ্মাস্ত্রাদীনি বৈ ভুবি ।
তস্য গেহে স্থিরা লক্ষ্মীর্বাণী বক্ত্রে বসেদ্ ধ্রুবম্ ॥ ৫০॥
ইদং কবচমজ্ঞাত্বা তারাং য়ো ভজতে নরঃ ।
অল্পায়ুর্নির্দ্ধনো মূর্খো ভবত্যেব ন সংশয়ঃ ॥ ৫১॥
লিখিত্বা ধারয়েদ্যস্তু কণ্ঠে বা মস্তকে ভুজে ।
তস্য সর্বার্থসিদ্ধিঃ স্যাদ্যদ্যন্মনসি বর্ততে ॥ ৫২॥
গোরোচনাকুঙ্কুমেন রক্তচন্দনকেন বা ।
য়াবকৈর্বা মহেশানি লিখেন্মন্ত্রং সমাহিতঃ ॥ ৫৩॥
অষ্টম্যাং মঙ্গলদিনে চতুর্দ্দশ্যামথাপি বা ।
সন্ধ্যায়াং দেবদেবেশি লিখেদ্যন্ত্রং সমাহিতঃ ॥ ৫৪॥
মঘায়াং শ্রবণে বাপি রেবত্যাং বা বিশেষতঃ ।
সিংহরাশৌ গতে চন্দ্রে কর্কটস্থে দিবাকরে ॥ ৫৫॥
মীনরাশৌ গুরৌ য়াতে বৃশ্চিকস্থে শনৈশ্চরে ।
লিখিত্বা ধারয়েদ্যস্তু উত্তরাভিমুখো ভবেত্ ॥ ৫৬॥
শ্মশানে প্রান্তরে বাপি শূন্যাগারে বিশেষতঃ ।
নিশায়াং বা লিখেন্মন্ত্রং তস্য সিদ্ধিরচঞ্চলা ॥ ৫৭॥
ভূর্জপত্রে লিখেন্মন্ত্রং গুরুণা চ মহেশ্বরি ।
ধ্যানধারণয়োগেন ধারয়েদ্যস্তু ভক্তিতঃ ॥ ৫৮॥
অচিরাত্তস্য সিদ্ধিঃ স্যান্নাত্র কার্যা বিচারণা ॥ ৫৯॥
॥ ইতি শ্রীরুদ্রয়ামলে তন্ত্রে উগ্রতারাকবচং সম্পূর্ণম্ ॥