মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম এক ধারা হলো মঙ্গলকাব্য। বলা হয়, মানুষের সর্বাঙ্গীন মঙ্গলের জন্য এই কাব্য পাঠ ও শ্রোবণে পুণ্য অর্জন হয়। কিন্তু প্রশ্ন, কে এই চণ্ডী? তিনি কি কোনো বৈদিক দেবতা? না, এই দেবি চণ্ডী কিন্তু কোনো বৈদিক দেবতা নয়। চণ্ডীমঙ্গল মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের মঙ্গলকাব্য ধারার অন্যতম প্রধান কাব্য। এই ধারার অন্য দুই উল্লেখযোগ্য কাব্য মনসামঙ্গল ও ধর্মমঙ্গল। জনশ্রুতি অনুসারে চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের আদি-কবি মানিক দত্ত। এই কাব্যের জনপ্রিয় কবি মুক্তারাম সেন, হরিরাম, মুকুন্দরাম চক্রবর্তী, দ্বিজ মাধব বিশেষ উল্লেখনীয়। তবে মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর খ্যাতি সর্বাধিক। চণ্ডীমঙ্গল দেবী চণ্ডীর মহিমা গীত। কিন্ত প্রাচীন চণ্ডীমঙ্গলের কবিদের বর্ণনায় অভয়া নামে উল্লিখিত এই দেবী আদিতে পুরাণে বর্ণিত দেবী মহিষাসুরমর্দিনী চণ্ডী ছিলেন না।
চণ্ডীমঙ্গল রচনার কয়েক শতাব্দী পূর্বেই তিনি পৌরাণিক চণ্ডীর সঙ্গে মিলে গিয়েছেন। অভয়া মুখ্যত বনদেবী যা ঋগ্বেদের দশম মন্ডলের অরণ্যানী স্তবের সাথে সম্পৃক্ত। চন্ডীমঙ্গলের কালকেতু-আখ্যানে তিনি দ্বিভুজা, তার প্রতীক মঙ্গলঘট, পূজার উপচার মাঙ্গল্য ধানদূর্বা।তিনি পশুমাতারূপে পূজিতা। কিন্তু তাঁর পুজো করতেন মূলত আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ। তাই গবেষকেরা মনে করেন, আসলে এই দেবি আদিবাসী সম্প্রদায়ের দেবি।