‘হিন্দুধর্ম’ কথাটা মোটেই পছন্দ ছিল না স্বামী বিবেকনন্দের। তিনি বলতেন -‘বেদান্তধর্ম’। এই বেদান্তই হলো উপনিষদ। বেদের অন্তে লেখা বলেই তা বেদান্ত। বেদে আছে মূলত কর্মকান্ডের কথা। আর উপনিষদ হলো ‘ব্রহ্মবিদ্যা’। ব্রহ্মর অবস্থান, তার রূপ ও রীতির কথা ব্রহ্ম ও আত্মা শব্দদুটি উপনিষদে ব্যবহৃত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি শব্দ। ব্রহ্ম হলেন বিশ্বের সত্ত্বা আর আত্মা হলেন ব্যক্তিগত সত্ত্বা। একেই রবীন্দ্রনাথ ‘বিশ্বদেবতা’ ও ‘জীবন দেবতা’ বলেছেন। এই শব্দদুটির ব্যুৎপত্তি নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মতান্তর আছে। “ব্রহ্ম শব্দটি সম্ভবত “ব্র” শব্দ থেকে এসেছে, যার অর্থ “বৃহত্তম”। ব্রহ্ম হলেন “স্থান, কাল ও কার্য-কারণের অতীত এক অখণ্ড সত্ত্বা। তিনি অব্যয়, অনন্ত, চিরমুক্ত, শাশ্বত, অতীন্দ্রিয়।” আত্মা বলতে বোঝায়, জীবের অন্তর্নিহিত অমর সত্ত্বাটিকে। উপনিষদের মন্ত্রদ্রষ্টাদের মতে, আত্মা ও ব্রহ্ম এক এবং অভিন্ন। এটিই উপনিষদের সর্বশ্রেষ্ঠ মতবাদ। তবুও একটা সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে – যাকে স্বামীজী পরমাত্মা ও জীবাত্মা বলেছেন।
বৃহদারণ্যক ও ছান্দোগ্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুখ্য উপনিষদ্। এই দুটি উপনিষদ্ ঔপনিষদ দর্শনের দুটি প্রধান শাখার প্রতিনিধি। বৃহদারণ্যক-এ “নিষ্প্রপঞ্চ” বা জগতের অতীত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
অপরদিকে ছান্দগ্যো “সপ্রপঞ্চ” বা জাগতিক বিষয়গুলো আলোচিত হয়েছে। এদুটির মধ্যে বৃহদারণ্যক প্রাচীনতর।হিন্দুদের কাছে যে প্রতীকটি পবিত্রতম, সেই নাদব্রহ্মরূপী ‘ওঁ’-এর প্রথম বিস্তারিত ব্যাখ্যা পাওয়া যায় উপনিষদে। ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ (অর্থাৎ, “ওঁ ত্রিবিধ বিঘ্নের শান্তি হউক”। “ত্রিবিধ বিঘ্ন” বলতে আধ্যাত্মিক বা রোগ ইত্যাদি শারীরিক ও মানসিক বিপদ, আধিদৈবিক বা আকস্মিক দুর্ঘটনা ইত্যাদি দৈব বিপদ এবং আধিভৌতিক অর্থাৎ হিংস্র প্রাণীদের দ্বারা কৃত অনিষ্টকে বোঝায়)। মন্ত্রটি উপনিষদে বারবার দেখা যায়। উপনিষদে ভক্তিযোগের পথটির উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। পরবর্তীকালে ভক্তিযোগ অনেক বেশি প্রাধান্য পায়।
 
								 
								 
								 
					
 
											 
											