আজ, ৪ জুন। হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে জ্যৈষ্ঠ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে শ্রীজগন্নাথদেবের স্নানযাত্রা পালিত হয়। জগন্নাথের ভক্তদের কাছে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। এই দিনটিকে জগন্নাথের জন্মতিথি বলে মনে করা হয়। পুরীতে স্নানযাত্রা উপলক্ষ্যে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে কলসি কলসি জল ঢেলে স্নান করানো হয়। এই দৃশ্য চাক্ষুস করতে এই সময় পুরীতে ভিড় করেন বহু মানুষ। কারণ মনে করা হয় জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রা দর্শন করা হলে সব পাপ থেকে মুক্তি মেলে।
স্নানযাত্রার তারিখ (Snan Jatra)
এই বছর আজ ৪ জুন বা ২০ জ্যৈষ্ঠ রবিবার পালিত হবে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার স্নানযাত্রা। এই সময় অসংখ্য ভক্ত স্নানযাত্রা উপলক্ষ্যে পুরীর মন্দির দর্শনে যান।
স্কন্দপুরাণম্-এ অনুসারে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে বিগ্রহ প্রতিষ্ঠার পরেই প্রথম বার রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। স্নানযাত্রার (Jagannath) আগের দিন (Snan Jatra) জগন্নাথ, বলভদ্র, সুভদ্রা, সুদর্শন চক্র ও মদনমোহনের বিগ্রহের একটি বিশাল শোভাযাত্রা (Rath Jatra) মন্দিরের গর্ভগৃহ থেকে বার করে স্নানবেদীতে এনে রাখা হয়। ভক্তেরা এই সময় জগন্নাথকে দর্শন করতে আসেন।
এর পর স্নানযাত্রার দিন মন্দিরের উত্তর দিকের কূপ থেকে জল এনে মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে সেই জলের শুদ্ধিকরণ (Spiritual) করা হয়। তারপর ১০৮টি কলসীর জলে বিগ্রহগুলিকে স্নান করানো হয়। প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে মনে করা হয় যে এই স্নানের পরেই জ্বরে কাবু হয়ে পড়েন জগন্নাথ দেব (Jagannath Dev), বলরাম (Balaram) ও সুভদ্রা – তিন ভাইবোনই। এই সময় তাঁদের রাজবৈদ্যের চিকিৎসাধীনে আলাদা একটি সংরক্ষিত কক্ষে রাখা হয়। এই অসুস্থতার পর্যায়টি ‘অনসর’ নামে পরিচিত। এই সময় ভক্তেরা দেবতার দর্শন পান না। সর্দি-জ্বর হলে যেমন রোগীকে কিছুদিনের জন্য আলাদা রাখা হয়। এক্ষেত্রেও তেমনই স্নান করে জ্বর এলে ১৪ দিনের জন্য আলাদা একটি ঘরে থাকবেন স্বয়ং দেবতাও।
এই কয়েকটি দিন জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার দর্শনের জন্য বিগ্রহের পরিবর্তে মূল মন্দিরে (Puri) তিনটি পটচিত্র রাখা হয়। এই সময় ভক্তেরা (Jagannath Temple) ব্রহ্মগিরিতে অলরনাথ মন্দিরে যান। তাঁরা বিশ্বাস করেন, অনসর পর্যায়ে জগন্নাথ অলরনাথ রূপে অবস্থান করেন। কথিত আছে, রাজবৈদ্যের আয়ুর্বৈদিক ‘পাঁচন’ খেয়ে এক পক্ষকালের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন তাঁরা। সুস্থ হয়ে উঠে এরপর জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা রাজবেশে সজ্জিত হয়ে রথযাত্রা করে মাসির বাড়ি যান। এই বছর রথযাত্রা পালিত হবে আগামী ২০ জুন রথযাত্রা পালিত হবে (Spirituality) ।
স্নান যাত্রায় ১৬ ঘন্টা বন্ধ থাকছে পুরির মন্দির
রথযাত্রা উপলক্ষে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে প্রস্তুতি তুঙ্গে। একাধিক আচারের জন্যও দিনক্ষণ নির্ধারিত করেছে শ্রী জগন্নাথ মন্দির অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। তার মধ্যেই এবার ১৬ ঘণ্টার জন্য মন্দির বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত। ভগবান জগন্নাথের স্নানযাত্রা উপলক্ষে ভক্তদের জন্য পুরীর মন্দিরের দ্বার বন্ধ থাক
আগামী ৪ জুন পুরীর জগন্নাথধামে অনুষ্ঠিত হবে দেবস্নান পূর্ণিমা। এই কারণে শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে বন্ধ করা হয়েছে দর্শন। শনিবার মধ্যরাত ২টো পর্যন্ত বন্ধ থাকবে মন্দির। এমনটাই জানিয়েছে শ্রী জগন্নাথ মন্দির অ্যাডমিনিস্ট্রেশন।
সূত্রের খবর, শুক্রবার সকালে দ্বৈতপতি সেবায়েতরা গর্ভগৃহে প্রবেশ করেন। তাঁরা পালন করেন ‘বহুত কথা’ রীতি। বাবলা গাছের একটি আট ফিট দীর্ঘ এবং তিন ফিট মোটা গুঁড়ি সাক্ষীগোপাল থেকে নিয়ে আসা হয়। ‘সেনাপতা লাগি’ এবং ‘বহুত কথা’ রীতি পালনে তা ব্যবহার করেন সেবায়েতরা। এই গাছের গুঁড়ি ভগবান জগন্নাথের অস্ত্র হিসেবে তৈরি করা হয়। এগুলিকে সিল্কের কাপড়ে দিয়ে বাঁধা হয়।
এই সেনাপাতা লাগি এবং বহুত কথা রীতি পালিত হয় পহন্দি, স্নানযাত্রা, গুণ্ডিচা যাত্রা, অদপা যাত্রা, নীলাদ্রি বিজের সময়। রথযাত্রার আগে দেবস্নান যাত্রা একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান। এই সময় ভগবানের মূর্তিগুলিতে গর্ভগৃহ থেকে বের করে আনা হয়। ১০৮টি পাত্রের থেকে সুগন্ধিযুক্ত জল দিয়ে স্নান করানো হয় মূর্তিগুলিকে। রাজবেশে সাজিয়ে তোলা হয় দেবস্নানের পর।
রথযাত্রার আগে ২১ দিন ধরে পালিত হয় চন্দন যাত্রা। পুরীতে চন্দনযাত্রা রীতি অনুযায়ী, পুরীর পবিত্র নরেন্দ্র ট্যাংক এলাকাতেই ভগবান জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার রথ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এই নির্মাণ কাজ শুরুর মাধ্যমে সূচনা হয়েছে রথ খলা উৎসবের। তিনটি সুবিশাল রথ নির্মাণ করা হচ্ছে জগন্নাথ মন্দিরের বাইরে গ্র্যান্ড রোডের উপর।
নরেন্দ্র ট্যাংকে ওয়াটার স্পোর্টচন্দন যাত্রা চলাকালীন গ্রীষ্মের মরশুমে ভগবান জগন্নাথ, বলরাম এবং দেবী সুভদ্রার জন্য ওয়াটার স্পোর্টেরও আয়োজন করা হয়।
রথযাত্রার আগে পুরীতে নিরাপত্তার বিষয়টিও জোরদার করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই পুরীতে আটটি টিমের পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও উৎসব চলাকালীন পথে থাকবেন দু’জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, তিনজন DSP পদমর্যাদার অফিসার, সাতজন ইন্সপেক্টর এবং আরও অন্য আধিকারিকরা। রথযাত্রার উৎসব চলাকালীন যাতে কোনওরকম অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার জন্যও সমস্ত রকমের বন্দোবস্ত করা হচ্ছে।
(collected)