www.machinnamasta.in

ওঁ শ্রীং হ্রীং ক্লী গং গণপতয়ে বর বরদ সর্বজনস্ময়ী বশমানয় ঠঃ ঠঃ

December 4, 2024 9:22 am
bhut chaturdashi

ভূত চতুর্দশীতে বাঙালি সমাজে একটি বিশেষ রীতি প্রচলিত রয়েছে। এদিন ১৪ প্রদীপ জ্বালানো হয় ও ১৪ শাক খাওয়া হয়। ১৪ রকমের শাক দিয়ে ভাত খাওয়ার প্রথা প্রচলিত রয়েছে। আর সন্ধের পর বাড়ির বিভিন্ন স্থানে মোট ১৪টি প্রদীপ জ্বালানো হয়ে থাকে। কিন্তু কেন ১৪ শাক খাওয়ার প্রথা আর কেনই বা এদিন জ্বালানো হয় ১৪ প্রদীপ? এই ১৪ ধরনের শাকের মধ্যে কোন কোন শাক থাকতে হবে? এই সবই বিস্তারিত জানুন এখানে।

রবিবার ১২ নভেম্বর পালিত হবে কালীপুজো। আর তার আগের দিন, অর্থাত্‍ আজ, শনিবার হল ভূত চতুর্দশী। কার্তিক মাসের কৃষ্ণ পক্ষের চতুর্দশী তিথি অর্থাত্‍ কালীপুজোর আগের দিনটি ভূত চতুর্দশী নামে পরিচিত। অনেক জায়গায় এই দিনকে নরক চতুর্দশী বলা হয়ে থাকে। কারণে এই দিনে নরকের দ্বার খুলে দেওয়া হয় বলে প্রচলিত বিশ্বাস। ভূত চতুর্দশীতে ভূত প্রেতে মর্ত্যে ঘোরাফেরা করে বলেও মনে করে অনেকে। সেই কারণে এদিন সন্ধের পর বাইরে বেরোতেও বারণ করা হয়।

দীপান্বিতা (Diwali) অমাবস্যার আগের দিন যেন ‘তমসা’কে জয় করতে বাঙালি মেতে ওঠে ‘ভূত চতুর্দশী’ (Bhoot Chaturdashi) পালনে। বলা হয়, এদিন মৃত প্রেতাত্মারা পৃথিবীতে আসে। কিন্তু কেন পালন করা হয় এই দিনটিকে? কী এই দিনের মাহাত্ম্য?  

bhut chaturdashi

পুরাণে ভূত চতুর্দশী নিয়ে বিশেষ কিছু পাওয়া যায় না। তবে এই নামের উল্লেখ রয়েছে। সেখানে বলা হচ্ছে- দানবরাজ বলি যখন স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল দখল করে নিলেন, তখন নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়ে গেল। তার আক্রোশ থেকে পার পেলেন না দেবতারাও। বলির তাণ্ডব ঠেকাতে দেবগুরু বৃহস্পতি ভগবান বিষ্ণুকে একটি উপায় বাতলে দিলেন।

বামনের ছদ্মবেশে তখন নেমে এলেন বিষ্ণু, তিন পা সমান জমি ভিক্ষা চাইলেন রাজা বলির কাছে। দানবরাজ কিন্তু শুরুতেই বুঝেছিলেন এই বামন আর কেউ নন, স্বয়ং বিষ্ণু। কিন্তু এরপরও না বোঝার ভান করে বামনের পাল্লায় পড়ে ঠিকই রাজি হলেন চুক্তিতে। দুই পা দিয়ে স্বর্গ ও মর্ত্য দখল করে ফেললেন বিষ্ণু। এরপর নাভি থেকে বের হয়ে এলো আরেক পা, যা রাখলেন বলি রাজার মাথার উপর। সঙ্গে সঙ্গেই পাতালে নেমে গেলেন দানবরাজ বলি। সেই থেকে পাতালই হল তার আবাস। 

বলিরাজ জেনে বুঝেও দান করেছিলেন বলে, ভগবান বিষ্ণু (Bishnu) রাজা বলির নরকাসুর রূপের পুজোর প্রবর্তন করেন। নরকাসুররূপী রাজা বলি কালীপুজোর আগের দিন ভূত চতুর্দশীর তিথিতে অসংখ্য অনুচর-সহ ভূত, প্রেত নিয়ে মর্ত্যে নেমে আসেন পুজো নিতে।

ভূত চতুর্দশীতে বাঙালি সমাজে একটি বিশেষ রীতি প্রচলিত রয়েছে। এদিন ১৪ প্রদীপ জ্বালানো হয় ও ১৪ শাক খাওয়া হয়। ১৪ রকমের শাক দিয়ে ভাত খাওয়ার প্রথা প্রচলিত রয়েছে। আর সন্ধের পর বাড়ির বিভিন্ন স্থানে মোট ১৪টি প্রদীপ জ্বালানো হয়ে থাকে। কিন্তু কেন ১৪ শাক খাওয়ার প্রথা আর কেনই বা এদিন জ্বালানো হয় ১৪ প্রদীপ? এই ১৪ ধরনের শাকের মধ্যে কোন কোন শাক থাকতে হবে? এই সবই বিস্তারিত জানুন এখানে।

ভূত চতুর্দশীতে কেন ১৪ প্রদীপ জ্বালানো হয়?


প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে ভূত চতুর্দশীর দিনে কিছু সময়ের জন্য স্বর্গ ও নরকের দ্বার খুলে যায়, তখন আত্মারা মর্ত্যে নেমে আসেন। ভূত-প্রেত নিয়ে এদিন রাজা বলিও মর্ত্যে আসেন বলে মনে করা হয়। এই দিনে অশুভ শক্তির প্রকোপ বৃদ্ধি পায় বলে একটা বিশ্বাস প্রচলিত আছে। এই অশুভ শক্তিকে নিজের বাড়ি থেকে দূরে রাখতেই ১৪ প্রদীপ জ্বালানো হয়ে থাকে। যেহেতু দিনটি চতুর্দশী, তাই ১৪টি প্রদীপই জ্বালানো হয়।


অন্য একটি ধারণা অনুসারে ভূত চতুর্দশী তিথিতে মর্ত্যে আসেন পূর্বপুরুষরা, সেদিনই ফিরেও যান তাঁরা। অমাবস্যার আগের রাতে অন্ধকারে তাঁদের পথ দেখাতে ১৪ প্রদীপ জ্বালানো হয়। যে বাড়িতে ১৪ প্রদীপ জ্বালানো হয়, সেই বাড়ির সদস্যরা যে তাদের প্রয়াত পূর্বপুরুষদের ভুলে যায়নি, এভাবেই তা প্রমাণিত হয়।

আবার ভূত চতুর্দশী তিথিটি অনেক জায়গায় যম চতুর্দশী নামেও পরিচিত। এই দিনে যমরাজের নামে প্রদীপ জ্বালালে অকাল মৃত্যুর ভয় এড়ানো যায় বলে প্রচলিত বিশ্বাস। এদিন ১৪ জন যমের উদ্দেশে তর্পণের রীতি আছে। এই ১৪ যম হলেন, ধর্মরাজ, মৃত্যু, অন্তক, সর্বভূতক্ষয়, বৃকোদর, বৈবস্বত, উড়ুম্বর, কাল, যম, দধ্ন, পরমেষ্ঠী, নীন, চিত্র ও চিত্রগুপ্ত। পদ্মপুরাণে বলা আছে ভূত চতুর্দশীতে গঙ্গা স্নান করলে নরক যন্ত্রণা কম সহ্য করতে হয়।

ভূত চতুর্দশীতে ১৪ শাক কেন খাওয়া হয়?


ভূত চতুর্দশীর দিনে ১৪ ধরনের শাক খাওয়ার রীতি প্রচলিত আছে। এই ১৪টি শাক হল – ওল, কেও, বেতো কালকাসুন্দা, নিম, সরষে শালিঞ্চা বা শাঞ্চে, জয়ন্তী, গুলঞ্চ, পলতা, ঘেঁটু বা ভাঁট, হিঞ্চে, শুষনি, শেলু। এই ১৪ শাক ঋতু পরিবর্তনের সময় খেলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ে। আসলে হেমন্তকালের এই সময় তখন আস্তে আস্তে শীত পড়ে। এই সময় সর্দি কাশি-সহ নানা ধরনের রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। সেই সব রোগ মোকাবিলার জন্যই শাস্ত্রকাররা এদিন ১৪ শাক খাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে মনে করা হয়।

অনেক সময় বলা হয়ে থাকে, ভূত চতুর্দশীর দিন পরলোকগত চৌদ্দ পুরুষের আত্মারা নিজ নিজ বাড়িতে নেমে আসেন। তাই তাদের আসা যাওয়ার পথকে আলোকিত করতেই নাকি এই দিন সন্ধ্যাবেলা প্রদীপ জ্বলানোর রীতি।

হিন্দু শাস্ত্রমতে (Maa Kali) বলা হয়, এই তিথিতে সন্ধ্যা নামার পর পরই অশরীরী প্রেতাত্মারা বের হয়ে আসেন। আর তাদের হাত থেকে নিস্তার পেতে সন্ধ্যায় পর গৃহস্থের বাড়িতে ১৪টি প্রদীপ জ্বালানোর নিয়ম। হিন্দু শাস্ত্রমতে থাকলেও ভূত চতুর্দশী অবশ্য একান্তই বাঙালির উৎসব বলা চলে। 

আবার এমনও শোনা যায়, এই দিনে ‘চামুণ্ডা’ রূপে চৌদ্দ ভূত (Kali) দিয়ে ভক্তদের বাড়ি থেকে অশুভ শক্তি দূর করতে নেমে আসেন মা কালী। মাকে স্বাগত জানাতেই নাকি প্রদীপ জ্বালানোর ব্যবস্থা।

administrator

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *