কালীপুজো নিয়ে কত বিচিত্র প্রথা সারা বাংলা জুড়ে চালু আছে। তেমনই এক বিচিত্র কালী পুজো প্রচলিত পূর্ব বর্ধমানে। দীপাবলি মানেই আলোর উৎসব। শহর থেকে গ্রাম– সব জায়গাই তখন ঝলমল করে ওঠে আলোয়। কিন্তু পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের শালবনের গভীরে আছে এমন এক জায়গা, যেখানে আলোর বদলে অন্ধকারই সাক্ষী হয় ভক্তির। এই অমাবস্যাতেই সেখানে হয় শালকো কালীর পুজো— যে পুজো চলে গভীর রাত জেগে, বিদ্যুৎবিহীন পরিবেশে, শ্মশানের নীরবতায়।
পুজোয় কোনও বৈদ্যুতিক আলো ব্যবহার করা হয় না– এটাই রীতি।
এই নীরব আরাধনার পিছনে লুকিয়ে আছে প্রায় ২০০ বছর আগের এক গ্রামের করুণ কাহিনি। এক সময়ে এই জঙ্গলেই ছিল শালকো নামের এক গ্রাম। এই গ্রামের নামেই দেবী পরিচিত হন শালকো কালী রূপে। হঠাৎই গ্রামে দেখা দেয় কলেরার মহামারি। গ্রামের বহু মানুষ মারা যান। যাঁরা বেঁচে যান, তাঁরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গেলেন নতুন আশ্রয়ের সন্ধানে। এর পরে গ্রামটি জনশূন্য হয়ে পরিত্যক্ত হয়ে যায়। তবে যে মানুষগুলি জীবন বাঁচাতে গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হলেন, তাঁরা দেবীকে ভুলতে পারেননি। শোনা যায়, দেবীকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার অনেক চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু বেদি ছেড়ে তিনি কিছুতেই নড়তে চাননি। দেবীর এই একগুঁয়েমিই তাঁর মহিমা– তাই গ্রামবাসীরা বুঝলেন, এই স্থানই মায়ের প্রিয়। তাই আজও কালীপুজোর সময়ে সেই বিস্মৃত গ্রামের পুরনো বাসিন্দারা এবং তাঁদের উত্তরসূরিরা ফিরে আসেন জঙ্গলে।