সাধক রামপ্রসাদ সেন বাংলা শাক্ত সংগীতের অন্যতম স্রষ্টা। তাঁর প্রতিটা গানের মধ্যে আছে মায়ের প্রতি গভীর আকুতি। বাংলা ভাষায় দেবী কালীর উদ্দেশ্যে ভক্তিগীতি রচনার জন্য তিনি সমধিক পরিচিত। তার রচিত “রামপ্রসাদী” গানগুলি এখনও বেশ জনপ্রিয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার হুগলি নদীর তীরে অবস্থিত হালিশহর গ্রামে (বর্তমানে শহর) এক তান্ত্রিক বৈদ্যব্রাহ্মণ পরিবারে রামপ্রসাদ সেনের জন্ম। অষ্টাদশ শতাব্দীর বাংলার ভক্তি আন্দোলনের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব হলেন রামপ্রসাদ সেন। তিনিই বাংলায় ভক্তিবাদী শাক্তধর্ম ও দেবী কালীর লীলাকীর্তন শ্যামাসংগীতের ধারাটিকে জনপ্রিয় করে তোলেন।তিনি ছিলে একজন অন্যতম মরমী কবি। তাঁর রচিত গানের মধ্যে যেমন আছে গভীর ভক্তি তেমনই আছে ধৰ্মীয় দর্শন। তাঁর অন্যতম কয়েকটা গানের মধ্যে সেই ভক্তি ও দর্শনকে আমরা খুঁজে পাই।
- মন রে কৃষি কাজ জান না।
এমন মানব-জমিন রইলো পতিত, আবাদ করলে ফলতো সোনা।। - আর কাজ কি আমার কাশী?
মায়ের পদতলে পড়ে আছে, গয়া গঙ্গা বারাণসী।। - অপার সংসার, নাহি পারাপার, ভরসা শ্রীপদ, সঙ্গের সম্পদ, বিপদে তারিণী করোগো নিস্তার।
- জ্ঞানাগ্নি জ্বালিয়া কেন ব্রহ্মময়ীর রূপ দেখ না! – সাকারে সাযুজ্য হবে নির্বাণে কী গুণ বলো না। —কালী যার হৃদে জাগে, তর্ক তার লাগে কোথা?
- অশুচি—শুচিকে লয়ে দিব্য ঘরে কর শোভা। যদি দুই সতীনে পীরিত হয়, তবে শ্যামা মাকে পাবা।
- ডুব দে মন ‘কালী’ বোলে, হৃদি-রত্নাকরের অগাধ জলে। তাঁর এইসব অমোঘ সৃষ্টি আসলে আষ্টাদশ শতাব্দীর বাংলার ভাব-বিপ্লবের অন্যতম নিদর্শন। সেই গান এখনও ভক্ত মানুষের গলায় বেজে ওঠে ভক্তির সঙ্গে।