মহাভারতের অন্যতম চরিত্র ভীষ্ম। তাঁর প্রতিজ্ঞা, আত্মত্যাগ, ধর্ম নিষ্ঠতা ও পরিশেষে শরশয্যায় শায়িত ভীষ্মকে আমরা সকলেই স্মরনে রেখেছি।
ধৃতরাষ্ট্র, দুর্যোধন, কৃষ্ণ, অর্জুন ও যুধিষ্ঠিরকেও ধর্ম-অধর্মের অনেক বাণী শুনিয়েছিলেন তিনি। শরশয্যায় শায়িত ভীষ্ম যুধিষ্ঠির ও সকলকে উপদেশ দিয়ে যান। এমন কয়েকটি অমোঘ বাণী আজ আমরা স্মরণ করবো –
১) যে পুরুষ নিজেরর ভবিষ্যতের ওপর অধিকার রাখে (যে নিজেই নিজের পথ তৈরি করে এমন অন্যের হাতের পুতুলে পরিণত হয় না), যাঁরা সময় অনুযায়ী তৎক্ষণাৎ বিচার করতে পারে এবং তার প্রতি আচরণ করতে পারে, সেই পুরুষ সুখ লাভ করে। আলস্য ব্যক্তিকে ধ্বংস করে দেয়।
২) এমন কথা বল, যা অন্যকে ভালো লাগে। অন্যকে খারাপ কথা বলা, অন্যের নিন্দা করা, কটূ বচন বলা, এ সব ত্যাগের যোগ্য। অন্যের অপমান করা, অহংকার ও দম্ভ, এটি অবগুণ।
৩) সনাতন কালে যখনই কেউ স্ত্রীর অপমান করেছে, তাঁদের বিনাশ অবশ্যই হয়েছে। ভীষ্ম যুধিষ্ঠিরকে জানান, স্ত্রীর প্রথম সুখ তাঁর সম্মান। যে ঘরে স্ত্রী প্রসন্ন থাকে, সে ঘরে লক্ষ্মীর বাস হয়।
৪) ত্যাগ ছাড়া কিছু লাভ করা যায় না। ত্যাগ ছাড়া পরম আদর্শের সিদ্ধি হয় না। ত্যাগ ছাড়া ব্যক্তি ভয়মুক্ত হয় না। ত্যাগের সাহায্যে ব্যক্তি সমস্ত ধরনের সুখ লাভ করে।
৫) মহাভারতের যুদ্ধের আগে কৃষ্ণ সন্ধির প্রস্তাব নিয়ে হস্তিনাপুর এলে ভীষ্ম দুর্বুদ্ধি দুর্যোধনকে জানান, যেখানে কৃষ্ণ, সেখানেই ধর্ম। সেই পক্ষই জয় লাভ করবে। তাই পুত্র দুর্যোধন! কৃষ্ণের সাহায্যে পাণ্ডবদের সঙ্গে সন্ধি করে নাও। সন্ধির ভালো সুযোগ পেয়েছ তুমি। ব্যক্তিকে সর্বদা ধর্মের পক্ষে থাকা উচিত।
৬) ভীষ্ম বলেছিলেন, শাসনক্ষমতা সুখ ভোগ করার জন্য নয়, বরং কঠিন পরিশ্রম করে সমাজের কল্যাণ করার জন্য।
৭) পিতামহ এ-ও জানান যে, এক জনকে শাসককে নিজের পুত্র ও প্রজার মধ্যে কোনও ভেদাভেদ করা উচিত নয়। এমন শাসন অটল ও প্রজাকে সমৃদ্ধি প্রদান করে।
মহামতী ভীষ্মের এই কথাগুলো আজও প্রাসঙ্গিক ভবিষ্যতেও প্রাসঙ্গিক থাকবে। সেই পরামর্শ মেনে চলতে পারলেই জীবনে সুখ আসবে।