আজ মহাসপ্তমী (Maha Saptami) এবং নবরাত্রির (Navratri) সপ্তম দিন। এই দিনটি দুর্গা সপ্তমী নামেও পরিচিত। আর, এই দিনটি মাতা কালরত্রিকে (Ma Kalratri) উৎসর্গ করা হয়, দেবী দুর্গার (Durga) অন্যতম রুপ। তিনি কালী, মহাকালী, ভদ্রকালী, শুভঙ্করী, মৃত্যু, দুর্গা এবং রুদ্রানী নামেও পরিচিত।
মাতা কালরাত্রি দেবী দুর্গার সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রূপ বলে মনে করা হয়। তাঁর গায়ের রঙ কালো এবং চারটি হাত। অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে শুভ শক্তির প্রতিষ্ঠা করেন দেবী কালরাত্রি। তিনি তাঁর ভক্তদের জীবন থেকে সমস্ত ভয় দূর করে তাদের সমস্ত ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করেন।
নবদুর্গার অন্যতম এক রুপ। কথিত আছে চন্ড-মুন্ড নামক দুই অসুর মা কালীর ভয়ে ভীত হয়ে সমস্ত ব্রহ্মান্ডে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল। তখন মা কালী অতিশয় ক্রুদ্ধা হয়ে নিজের মাথার কেশ উৎপাটন করলেন। সেই কেশ মাটিতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেবী কালরাত্রির সৃষ্টি হল। সেই কালরাত্রি দেবী চন্ড ও মুন্ডকে ধরে নিয়ে এলেন এবং সেই অসুরদ্বয়ের শিরচ্ছেদ করলেন মা কালী। মা কালীরই আরেক রূপ কালরাত্রি দেবী। বড় ভয়ঙ্করী এই মূর্তি, ধ্যানবর্ণনা অণুযায়ী। এঁর গায়ের রং ঘনকৃষ্ণবর্ণা। মাথার চুল এলো করা, দিগম্বরী, সারা শরীরে কর্ণিকা কণ্টকের মালা, তৈলাক্ত শরীর, ত্রিনেত্রা, কোটরাগত গোল চোখ, শ্বাসপ্রশ্বাসে আগুনের মতো হল্কা বের হচ্ছে। এঁর বাহন গর্দভ। চতুর্ভুজা, দক্ষিণ দুই হাতে বরাভয়, বাম দুই হাতে খড়গ ওলোহার কাঁটা। ত্রিনেত্রা দিয়ে তিনি ত্রিলোক দর্শন করেছেন, সদা জাগ্রতা, রক্ষা করেছেন, চন্দ্র-সূর্য-অগ্নি তাঁর নেত্র, জীবকে সর্বদা সর্বোতভাবে পালন করছেন তাঁর ত্রিনেত্রে। রুধিরাক্ত ওষ্ঠদ্বয় সদা দন্তপংক্তিতে চেপে রেখেছেন। লাল রক্ত রজোগুণের, আর সাদা দাঁত সত্ত্বগুণের প্রতীক। সত্ত্বগুণ দিয়ে রজোগুণকে অভিভূত করে রেখেছেন।
পূজা বিধি
হিন্দুধর্মে এই দিনটি বেশ শুভ বলে বিবেচিত হয়। মহাসপ্তমীর সকালে সর্বপ্রথম কলাবউ স্নান করানো হয়। কলা বউ বা নবপত্রিকা শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল নয়টি গাছের পাতা। যদিও বাস্তবে এই নবপত্রিকা নটি পাতা নয়, ৯টি গাছ। মূলত, এটা একটা কলাগাছ। তার সঙ্গে থাকে, কচু, বেল, হরিদ্রা, দাড়িম্ব, অশোক, মান জয়ন্তী এবং ধান গাছ৷ কলাগাছের সঙ্গে এগুলিকে একেবারে মূল থেকে বেঁধে দেওয়া হয় এবং গণেশের ডান পাশেই বসানো হয় এই নবপত্রিকাকে। তাকে লাল পাড় সাদা শাড়ি পরিয়ে একেবারে ঘোমটা পরা কলাবউয়ের রূপ দেওয়া হয়৷ দেবী দুর্গার ছেলে-মেয়ে এবং মহিষাসুরের সঙ্গে পুজো পায় এই নবপত্রিকা৷
নবপাত্রিকা পূজার পরে, আপনাকে এই নিয়মগুলি পালন করতে হবে
১) ভোরে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ঘর এবং পূজা ঘর পরিষ্কার করুন।
২) তারপরে স্নান করে নতুন বা পরিষ্কার পোশাক পরুন।
৩) এরপর দেবীর প্রতিমাকে স্নান করান।
৪) দেবীকে সাদা জুঁই এবং কোনও নীল রঙের ফুল অর্পণ করুন।
৫) এবার ফল, মিষ্টি এবং ভোগ অর্পণ করুন। ঠাকুরের সামনে প্রদীপ জ্বালান।
৬) হাতে ফুল নিয়ে মন্ত্র জপ করুন।
৭) আরতি করার পরে আপনার প্রিয়জন এবং দরিদ্র মানুষের মধ্যে ফল এবং ভোগ বিতরণ করুন।
তাৎপর্য
১) বিশ্বাস করা হয় যে, দেবী তার ভক্তদের জীবন থেকে সমস্ত নেতিবাচকতা এবং অন্ধকার দূরে সরিয়ে দেন।
২) যাদের জীবনে সমস্যা চলছে, তাদের উচিত দেবী কালরাত্রীর উপাসনা করা।
৩) তিনি তাঁর ভক্তদের সমস্ত আশা-আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করেন এবং তাদের আশীর্বাদ করেন।
মন্ত্র
ওঁ দেবী কালরাত্রৈ নমঃ।।
হ্রীং কালরাত্রি শ্রীং করালী চ ক্রীং কল্যাণী কলাবতী।
কমলা কলিদর্পঘ্নী কপর্দীশকৃপান্বিতা ||
কামবীজজপানন্দা কামবীজস্বরূপিণী |
কুমতিঘ্নী কুলীনার্তিনাশিনী কুলকামিনী ||
ক্রীং হ্রীং শ্রীং মন্ত্রবর্ণেন কালকণ্টকঘাতিনী |
কৃপাময়ী কৃপাধারা কৃপাপারা কৃপাগমা |।