www.machinnamasta.in

ওঁ শ্রীং হ্রীং ক্লী গং গণপতয়ে বর বরদ সর্বজনস্ময়ী বশমানয় ঠঃ ঠঃ

April 25, 2024 6:13 pm
Jagannath Mandir

খবরে আমরাঃ যিনি জগতের নাথ, তাঁকে পতিরূপে কল্পনা তো করা যেতেই পারে। তবু একেবারে আক্ষরিক অর্থে কি তা সম্ভব! সত্যিই কি কোনও মানবীর সঙ্গে পুরুষোত্তম জগন্নাথের বিবাহ হতে পারে! একদিন সত্যি সত্যিই পুরির মন্দিরে এল সেই দুঃসাহসিক প্রস্তাব। যিনি আনলেন এই বিবাহপ্রস্তাব, তিনি শ্রীরামকৃষ্ণদেবের সন্ন্যাসিনী শিষ্যা গৌরী মাতা। পাত্রীর নাম দুর্গা, ব্রাহ্মণকন্যা। সে গৌরী মায়ের বোনের মেয়ে ও শ্রীমা সারদাদেবীর শিষ্যা। বালিকার জন্মের আগেই তাঁর মা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, পুত্রসন্তান জন্মালে স্বামী বিবেকানন্দকে আর কন্যা হলে গৌরীপুরী মাতাকে সেই সন্তান দান করবেন। সেই প্রতিজ্ঞা রক্ষার্থেই দুর্গা মাকে সন্ন্যাসিনী করার উদ্দেশ্যে গৌরী মায়ের হাতে সমর্পণ করা হয়েছিল।

যাই হোক, বিবাহের প্রসঙ্গে আসা যাক। দেব-মানবীর এই বিবাহের প্রস্তাবে প্রমাদ গুণলেন মন্দির কর্তৃপক্ষ। আদৌ কি এই প্রস্তাবে সম্মতি জানানো যায়! এই নিয়ে বসল ব্রাহ্মণ-পণ্ডিতদের সভা। পক্ষে-বিপক্ষে জমা হল বহু মতামত। গৌরী মা নিজে ছিলেন শাস্ত্রজ্ঞ। তিনি জানতেন, ব্রাহ্মণ-পণ্ডিতরা শাস্ত্রের বিধান ছাড়া আর কোনও যুক্তিরই ধার ধারবেন না। তাই তিনি নিজে এই বিবাহের সমর্থনে বহু শাস্ত্রীয় যুক্তি সামনে এনেছিলেন। উপরন্তু নিজের আধ্যাত্মিক অন্তর্দৃষ্টিতে জানিয়েছিলেন, এই মেয়ে সামান্য নয়, স্বয়ং মা লক্ষ্মীর অংশেই এর জন্ম। শুধু তাই-ই নয়, আর একটি আশ্চর্য তথ্য তিনি জানালেন সকলকে। তা হল, প্রভুকে বিবাহ করবে বলে বালিকা অন্নগ্রহণ করেনি, শুধুমাত্র ফলাহার করেই তার জীবনধারণ।

পণ্ডিতরা বুঝলেন, এই বালিকা আর পাঁচজনের মতো নয়। জগৎপতির কোনও এক গূঢ় উদ্দেশ্যই বুঝি সাধিত হতে চলেছে এই ঘটনার মাধ্যমে। তা ছাড়া যে সমস্ত শাস্ত্রীয় যুক্তির অবতারণা ইতিমধ্যে করা হয়েছে, তাতে তো অসম্মতির কোনও কারণ থাকছে না। অবশেষে ব্রাহ্মণগণ সম্মতি দিলেন এই বিয়েতে। তবে একটা শঙ্কার চোরাস্রোত বইতেই লাগল। যদি পুরির রাজার কোনও অমঙ্গল হয়! তাঁরা তাই ঠিক করলেন এ ব্যাপারে স্বয়ং পুরুষোত্তমের কী অভিপ্রায়, তা জেনে নেওয়াই ভাল। সেই মতো ব্যবস্থা করা হল আজ্ঞামালার। কৃপাময় জগদীশ আপন কণ্ঠ হতে আজ্ঞামালা ফেলে গ্রহণ করেন আপনজনকে, নিজ শক্তিকে। এরপর আর দ্বিমতের কোনও জায়গা থাকতেই পারে না। অতএব শ্রীমন্দিরে সুসম্পন্ন হল বিবাহকার্য। কন্যাকে বিবাহের গহনা দেন স্বয়ং মা সারদাদেবী। মালাবদলের সময় বালিকা দুর্গাকে রত্নবেদীতে উঠিয়ে জগদীশের সামনে রাখা হয়। বালিকা ত্রিজগতের স্বামীকে নিজ পতিরূপে মাল্যদান করে আলিঙ্গন করে। মালাবদল হয়ে গেল, বালিকা দুর্গা হলেন জগন্নাথ-মহিষী। এই বিয়ের বউভাতের অনুষ্ঠান হয়েছিল শ্রীবৃন্দাবনে।

এই বালিকাই পরবর্তীকালে সারদেশ্বরী আশ্রমের দ্বিতীয় অধ্যক্ষা, অগণিত নরনারীর অধ্যাত্মজীবনে গুরুরূপে পথপ্রদর্শক দুর্গাপুরী মাতা। নীলাচলে শ্রীমন্দিরে তিনি চিরকাল জগন্নাথ-মহিষীর মর্যাদা পেতেন। জগন্নাথের শ্রীমন্দিরের সিংহদ্বারের ভিতর উপরের ভিত্তিতে এই বিবাহের ইতিহাস প্রস্তরফলকে লেখা রয়েছে। আজও শ্রীমন্দিরে চত্বরে কাঞ্চীগণেশ মন্দিরে রক্ষিত দুর্গাপুরী মাতার চিত্র।

administrator

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *