ভারতীয় পুরাণে কল্পতরু বৃক্ষের কথা বলা হয়েছে। সাধারণভাবে কল্প অর্থ আশা ও তরু অর্থ গাছ। যে গাছ মানুষের মনে আশার সঞ্চার করে। হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মে ‘কল্পতরু’ একটা বিশেষ ধৰ্মীয় বিশ্বাস। হিন্দু ধর্ম মনে করে, কল্পতরুর বাস্তব উপস্থিতি আছে। একাধিক বৈদিক ধর্মগ্রন্থে
জীবনের বৃক্ষ কল্পতরু, অথবা “বিশ্ব তরু”র উল্লেখ পাওয়া যায়। সমুদ্র মন্থন বা দুধের সমুদ্র মন্থনের প্রথমদিকের বিবরণে মহাসাগর মন্থন প্রক্রিয়া চলাকালীন প্রথম দিকেই জল থেকে কল্পতরুর উত্থান হয়েছিল। এর সঙ্গে পাওয়া গিয়েছিল কামধেনুকে, যে হল ঐশ্বরিক গাভী। জীবনের সমস্ত প্রয়োজন মেটায়। গাছটিকে আকাশগঙ্গা ছায়াপথ বা লুব্ধক তারার জন্মস্থান হিসাবেও বলা হয়। দেবরাজ ইন্দ্র এই কল্পতরুকে নিয়ে স্বর্গে তার বাসভবনে ফিরে এসে সেখানে রোপন করেছিলেন। একটি কল্পকথায় বলা আছে যে কল্পতরু পৃথিবীতেই ছিল কিন্তু পৃথিবীর মানুষ এর কাছে মন্দ কামনা করে অপব্যবহার শুরু করায় একে ইন্দ্রের আবাসে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
কথিত আছে, ইন্দ্রের ‘দেবলোকে’ পাঁচটি কল্পতরু রয়েছে। সেগুলি হল – মন্দনা, পারিজাত, সন্তান, কল্পতরু ও হরিচন্দন। এর সবগুলিই বিভিন্ন ইচ্ছা পূরণ করে। বলা হয়, কল্পতরুটি ইন্দ্রের পাঁচটি স্বর্গীয় উদ্যানের মাঝখানে মেরু পর্বতের শীর্ষে রোপন করা হয়েছিল। এই ইচ্ছাপূরণ গাছগুলির কারণে অসুররা দেবতাদের সাথে চিরকালীন যুদ্ধ চালিয়ে গেছে। কারণ দেবতারা কল্পতরুর “ঐশ্বরিক ফুল এবং ফল” থেকে অবাধে উপকৃত হয়েছে, যেখানে অসুরদের গাছের নিচের “ডাল এবং শিকড়” নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। পারিজাত প্রায়শই তার পার্থিব প্রতিরূপ, ভারতীয় প্রবাল গাছ (এরিথ্রিনা ইন্ডিকা)র সাথে চিহ্নিত হয়, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চিত্রিত হয় ম্যাগনোলিয়া বা কাঠগোলাপ এর মতো গাছ।