শনি শিঙ্গনাপুর (মহারাষ্ট্র), ৬ জানুয়ারি : একবার ভাবুন তো আপনার বাড়ির দরজা নেই। খোলা বাড়ির মধ্যেই এককোনে একটা খোলা বাক্সে যাবতীয় টাকা পয়সা, গয়নাগাটি রয়েছে। তবুও আপনার কোনও চিন্তা নেই।
আপনি বলবেন এও কী সম্ভব। দরজা থাকা অবস্থাতেই চোর ডাকাতের উপদ্রবের শেষ নেই। আর দরজা না থাকলে তো আর কথাই নেই।
হ্য়াঁ, সাধারণ ভাবে এমন ভাবনা আসাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মহারাষ্ট্রের শনি শিঙ্গনাপুরের গ্রামবাসীরা এমনটা একেবারেই ভাবেন না। কারণ আদতেই তাদের গ্রামের কোনও বাড়িরই দরজা নেই। শুধু বাড়ি কেন দরজা নেই ব্যাঙ্কেরও। এটাই গ্রামের প্রথা।
এক গ্রামবাসীর কথায়, “অনেকবছর আগে এক ভক্তের ভক্তের স্বপ্নে দেখা দিয়ে শনি দেবতা বলেছিলেন তোমাদের বাড়িতে দরজা লাগানোর কোনও দরকার নেই। আমি তোমাদের রক্ষা করব। তাই সারা গ্রামের কোনও বাড়িতেই দরজা নেই।”
মহর্ষিদের কথায়, প্রায় ৩০০ বছর আগে একটি লোহা ও পাথরের স্ল্যাব বন্য়ায় কাছের একটি নদীতে ভেসে আসে। এক রাখাল একটি কাঠি দিয়ে ওই পাথরটিতে খোঁচা দিতেই রক্তক্ষরণ শুরু হয়। রাতের অন্ধকারে ওই পাথরের স্ল্য়াব থেকে শনি দেবতার মূর্তি প্রকাশ হতে দেখে ওই ব্যক্তি। এখনও সেই খোলা বর্গ অলঙ্কৃত অবস্থায় রাখা রয়েছে। ফুল মালা দিয়ে রীতিমতো পুজো করা হয়। আশেপাশের গ্রাম থেকে দর্শনার্থীরা আসেন তা দেখতে।
শুধু বাড়ি নয়, গ্রামের ইউকো ব্যাঙ্কেরও দরজার কোনও তালা নেই। শুধু একটি কারা ঘরে টাকা রাখা থাকে। সামনে একটা কাঁচের দরজা রয়েছে। যাতে কখনও তালা দেওয়া হয় না। শুধু রাস্তার কুকুরের উৎপাত থেকে বাঁচতে কাঁচের দরজাটি লাগানো হয়েছে। ব্যাঙ্ক আধিকারিকদের কথায় আমাদের তাতে কোনও অসুবিধা হয় না।
তবে ২০১০ সালে এই গ্রামের গর্ব খর্ব হয়, যখন এক ব্যক্তি গাড়ি থেকে নগদ টাকা ও অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী সহ ৩৫,০০০ টাকার জিনিস চুরির অভিযোগ তোলেন।
তবে গ্রামবাসীরা মনে করেন, “এই গ্রামে যে শুধু চুরি-ডাকাতি হয় না তাই নয়, আমিষাশীরা, মাতালরা কখনও এই গ্রামে আসে না। যদিওবা আসে তাঁরা এঅ গ্রামে পা রাখলেই ভদ্র আচরণ করতে শুরু করে।”