www.machinnamasta.in

ওঁ শ্রীং হ্রীং ক্লী গং গণপতয়ে বর বরদ সর্বজনস্ময়ী বশমানয় ঠঃ ঠঃ

April 30, 2024 2:00 am
kalratri

কালরাত্রির রূপ ভয়ংকর হলেও তিনি শুভফলের দেবী। তার অপর নাম শুভঙ্করিণী। হিন্দুদের বিশ্বাস করেন, কালরাত্রি দুষ্টের দমন করেন, গ্রহের বাধা দূর করেন এবং ভক্তদের আগুন, জল, জন্তুজানোয়ার, শত্রু ও রাত্রির ভয় থেকে মুক্ত করেন। তারা বিশ্বাস করেন, কালরাত্রির উপাসক তাকে স্মরণ করলেই দৈত্য, দানব, রাক্ষস, ভূত ও প্রেত পালিয়ে যায়।

চলছে চৈত্র নবরাত্রি। নবরাত্রির অর্থ নয় দিন দেবী দুর্গার নয়টি রূপের আরাধনা করা। সোমবার নবরাত্রির সপ্তম দিন। এদিন পুজো করা হয় দুর্গার ভীষণ রূপ দেবী কালরাত্রি। তাঁর প্রচণ্ড ভীতিপ্রদ রূপের জন্য দেবীর এই নামকরণ। কাজলের মতো ঘোর কালো এই দেবীর গাত্রবর্ণ। পুরাণ অনুসারে দুই রাক্ষস শুম্ভ ও নিশুম্ভ এবং তাঁদের দৈত্যসেনাকে দেখে অত্যন্ত ক্র‌ুদ্ধ হয়ে ওঠেন দেবী দুর্গা। তখন এই ভয়ানক রূপ ধারণ করেন তিনি।

চৈত্র মাসের নবরাত্রির সপ্তম দিনে দেবী দুর্গার সপ্তম রূপ অর্থাৎ মা কালরাত্রির পুজো করা হয়। হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে, নবরাত্রির সময় মা কালরাত্রির আরাধনা করলে ভক্তদের সব ধরনের ভয় দূর হয়। মা কালরাত্রির আশীর্বাদে ভক্ত সর্বদা নির্ভীক থাকে। আগুন, জল, শত্রু, প্রভৃতি কোনও ভয় তার কাছে আসে না। ভগবতীর এই মহৎ রূপের শুভ প্রভাবে নেতিবাচক শক্তি ভুল করেও সাধকের উপর আঘাত করে না। আসুন জেনে নেওয়া যাক দেবী কালরাত্রির পুজোর গুরুত্ব, শুভ সময় ও পুজো সংক্রান্ত নিয়ম।

দেবী কালরাত্রির (Maa Kalratri) চারটি হাত। ওপরের ডান হাতে আশীর্বাদ, নীচের ডান হাতে অভয় মুদ্রা। বাঁ দিকে ওপরের হাতে খড়গ এবং নীচের বাম হাতে রয়েছে লোহার কাঁটা। দেবী ত্রিনয়নী এবং তাঁর চোখগুলি ব্রহ্মাণ্ডের মতো গোলাকার। দেবী কালরাত্রির চুল খোলা এবং গলায় বজ্রের মালা। এই দেবী গাধার ওপর আসীন এবং তাঁর নিশ্বাস প্রশ্বাসের সঙ্গে ভয়ংকর অগ্নিশিখা নির্গত হয়। কালরাত্রির রূপ ভয়ংকর হলেও তিনি শুভফলের দেবী। তাই তাঁর অপর নাম শুভঙ্করী। (Navratri 2024)

হিন্দু ধর্ম অনুসারে কালরাত্রি দুষ্টের দমন করেন, গ্রহের বাধা দূর করেন এবং ভক্তদের আগুন, জল, জন্তু জানোয়ার, শত্রু ও রাত্রির ভয় থেকে মুক্ত করেন। ভক্তেরা বিশ্বাস করেন যে, যিনি কালরাত্রির উপাসক তাকে স্মরণ করলেই দৈত্য, দানব, রাক্ষস, ভূত ও প্রেত পালিয়ে যায়। কালরাত্রি নবরাত্রির সপ্তম দিনে পূজিতা হন। শাক্ত শাস্ত্রানুযায়ী, “সেই দিন সাধকের মন সহস্রার চক্রে অবস্থান করে। তাঁর জন্য ব্রহ্মাণ্ডের (Chaitra Navratri) সকল সিদ্ধির দ্বার অবারিত হয়ে যায়। এই চক্রে অবস্থিত সাধকের মন সম্পূর্ণ ভাবে মাতা কালরাত্রির স্বরূপে অবস্থান করে। তাঁর সাক্ষাৎ পেলে সাধক মহাপুণ্যের ভাগী হন। তাঁর সমস্ত পাপ ও বাধা বিঘ্ন নাশ হয় এবং তিনি অক্ষয় পুণ্যধাম প্রাপ্ত হন।”

ভগবত্‍ পুরাণ অনুসারে দেবী কালরাত্রি চণ্ড ও মুণ্ডর চুলের মুঠি ধরে তা ধড় থেকে আলাদা করে দেন। চণ্ড ও মুণ্ডের হত্যা করার জন্য দেবী কালরাত্রি চামুণ্ডা (Maa Chamunda) নামেও পরিচিত। কালরাত্রির পুজোয় অবশ্যই ভোগ হিসেবে ক্ষীর ও খিচুড়ি নিবেদন করতেই হয়। এই দেবীর প্রিয় ফুল হল রক্তজবা। ১০৮টি জবা ফুল দিয়ে গাঁথা মালা দেবীর চরণে অর্পণ করতে হয়।

মায়ের এই রূপকে বীরত্ব ও সাহসের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মা কালরাত্রির উপাসনা ভয় দূর করে, ঝামেলা থেকে রক্ষা করে এবং শুভ ফল বয়ে আনে। শুভ ফল দেওয়ার কারণে, তিনি শুভঙ্করী নামেও পরিচিত। এই দেবীর পুজো করলে অকালমৃত্যুর ভয়ও দূর হয়, রোগ-বালাইও দূর হয়। জ্যোতিষশাস্ত্রের বিশ্বাস অনুসারে, কালরাত্রি দেবী শনি গ্রহকে নিয়ন্ত্রণ করেন। তাই এই দেবীর পুজো করলে শনির অশুভ প্রভাবও কমে যায়।

মা কালরাত্রির রূপ

কালরাত্রি দেবী কৃষ্ণ বর্ণের। গলায় বিদ্যুতের মালা আর চুল ছড়িয়ে আছে। দেবীর চারটি বাহু রয়েছে, ডান হাত দুটি যথাক্রমে অভয়া ও ভার মুদ্রায় এবং বাম হাত দুটি যথাক্রমে খড়গ ও বজ্র ধারণ করেছে। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, দেবীর এই রূপের পুজো করলে দুষ্টদের বিনাশ হয়।

এটি নবরাত্রির সপ্তম দিন। এই দিনে আদিশক্তি দেবী দুর্গার সপ্তম রূপ মা কালরাত্রির পুজো করা হয়। মা কালরাত্রি সর্বদা ভক্তদের জন্য শুভ ফল দেন।

মায়ের মন্ত্র

ধ্যান মন্ত্র

একবেণী জপকর্ণপুরা নগ্ন টক, লম্বোষ্টি কর্ণিকাকর্ণি তৈলব্যক্তশারিণী।

ভাম্পদোল্লাসল্লোহলতাকান্তকভূষণ, বর্ধনমূর্ধধ্বজা কৃষ্ণ কালরাত্রিরাভয়ঙ্করী ॥

প্রনাম মন্ত্র

ইয়া দেবী সর্বভূতেষু মা কালরাত্রি রূপেন সংস্থিতা।

নমস্তস্যায় নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ॥

মা কালরাত্রির পুজো পদ্ধতি

কালরাত্রির আরাধনা, কালের বিনাশকারী, মধ্যরাতে (নিশিথ কাল মুহূর্ত) শুভ বলে মনে করা হয়। যদি রাতে সম্ভব না হয় তবে সকালে পুজো করাও শুভ বলে মনে করা হয়। সপ্তমী তিথিতে, সূর্যোদয়ের আগে ঘুম থেকে উঠে স্নান ও ধ্যান করে মা কালরাত্রির উপাসনা ও নিয়মানুযায়ী উপবাস করার প্রতিজ্ঞা নিন। এর পরে, মা কালরাত্রির ছবি বা মূর্তির উপর গঙ্গাজল নিবেদন করুন এবং তারপরে দেবীকে আহ্বান করুন। তারপর মা কালরাত্রিকে গোটা চাল, ফল, ফুল, মিষ্টি, বস্ত্র, সিঁদুর, ধূপ, প্রদীপ ইত্যাদি নিবেদন করুন।

মা কালরাত্রির প্রিয় রঙ

এই দেবীর কাছে লাল রঙ প্রিয়, তাই তাঁর পুজোয় লাল গোলাপ বা লাল জবা ফুল নিবেদন করা উচিত। দেবী দুর্গাকে সন্তুষ্ট করতে, তার পুজোয় গুড় এবং পুডিং বা ক্ষীর দিতে হবে। এতে কালরাত্রি দেবী প্রসন্ন হন। দেবীকে ভোগ নিবেদনের পর বিশেষ করে পান ও সুপারিও মাকে নিবেদন করতে হবে।

পূজা বিধি

হিন্দুধর্মে এই দিনটি বেশ শুভ বলে বিবেচিত হয়। মহাসপ্তমীর সকালে সর্বপ্রথম কলাবউ স্নান করানো হয়। কলা বউ বা নবপত্রিকা শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল নয়টি গাছের পাতা। যদিও বাস্তবে এই নবপত্রিকা নটি পাতা নয়, ৯টি গাছ। মূলত, এটা একটা কলাগাছ। তার সঙ্গে থাকে, কচু, বেল, হরিদ্রা, দাড়িম্ব, অশোক, মান জয়ন্তী এবং ধান গাছ৷ কলাগাছের সঙ্গে এগুলিকে একেবারে মূল থেকে বেঁধে দেওয়া হয় এবং গণেশের ডান পাশেই বসানো হয় এই নবপত্রিকাকে। তাকে লাল পাড় সাদা শাড়ি পরিয়ে একেবারে ঘোমটা পরা কলাবউয়ের রূপ দেওয়া হয়৷ দেবী দুর্গার ছেলে-মেয়ে এবং মহিষাসুরের সঙ্গে পুজো পায় এই নবপত্রিকা৷

নবপাত্রিকা পূজার পরে, আপনাকে এই নিয়মগুলি পালন করতে হবে

১) ভোরে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ঘর এবং পূজা ঘর পরিষ্কার করুন। নিত্যদিন দানা দিচ্ছেন পাখিদের? ১টি ভুলেই হতে পারে পিতৃদোষ, সাবধান

২) তারপরে স্নান করে নতুন বা পরিষ্কার পোশাক পরুন।

৩) এরপর দেবীর প্রতিমাকে স্নান করান।

৪) দেবীকে সাদা জুঁই এবং কোনও নীল রঙের ফুল অর্পণ করুন।

৫) এবার ফল, মিষ্টি এবং ভোগ অর্পণ করুন। ঠাকুরের সামনে প্রদীপ জ্বালান।

৬) হাতে ফুল নিয়ে মন্ত্র জপ করুন।

৭) আরতি করার পরে আপনার প্রিয়জন এবং দরিদ্র মানুষের মধ্যে ফল এবং ভোগ বিতরণ করুন।

তাৎপর্য

১) বিশ্বাস করা হয় যে, দেবী তার ভক্তদের জীবন থেকে সমস্ত নেতিবাচকতা এবং অন্ধকার দূরে সরিয়ে দেন।

২) যাদের জীবনে সমস্যা চলছে, তাদের উচিত দেবী কালরাত্রীর উপাসনা করা।

৩) তিনি তাঁর ভক্তদের সমস্ত আশা-আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করেন এবং তাদের আশীর্বাদ করেন।

মন্ত্র

ওঁ দেবী কালরাত্রৈ নমঃ।।

হ্রীং কালরাত্রি শ্রীং করালী চ ক্রীং কল্যাণী কলাবতী। কমলা কলিদর্পঘ্নী কপর্দীশকৃপান্বিতা ||

কামবীজজপানন্দা কামবীজস্বরূপিণী | কুমতিঘ্নী কুলীনার্তিনাশিনী কুলকামিনী ||

ক্রীং হ্রীং শ্রীং মন্ত্রবর্ণেন কালকণ্টকঘাতিনী | কৃপাময়ী কৃপাধারা কৃপাপারা কৃপাগমা |।

administrator

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *