‘মন্দির’ শব্দটির সঙ্গে জুড়ে আছে বাংলার ধর্মপ্রাণ মানুষের ভক্তি ও ভাবাবেগ। যুগে যুগে বাংলার বহু ধনাঢ্য মানুষ কখনো স্বপ্ন দেখে কখনোবা নিজের ভক্তি থেমেই মন্দির বানিয়েছেন। বাংলায় যে অজস্র মন্দির আছে, গঠন শৈলীর দিক থেকে তার বৈচিত্র অনেক।
সেই বৈচিত্র অনুযায়ী মন্দিরকে এক এক নামে ডাকা হয়। যেমন –
১) চালা মন্দির : বাংলার খড়ো চালের মাটির ঘরের আদলে তৈরী এই শ্রেণীর মন্দির । এই শৈলীর প্রধান বৈশিষ্ট চালার বাঁকানো শীর্ষ ও কার্নিস ।
২) দোচালা বা এক বাংলা মন্দির : সামনে পিছনে দুটি ঢালু চাল নামলে বলা হয় দোচালা বা এক বাংলা মন্দির বলে। যেমন নন্দদুলালের জগমোহন মন্দির (চন্দননগর)।
৩) জোড় বাংলা : ইমারতের অধিকতর স্থায়িত্বের জন্য দুটি দোচালা বা এক বাংলা পাশাপাশি জোড়া থাকলে বলা হয় জোড় বাংলা। যেমন – উলা বীরনগর মন্দির ( নদিয়া )।
৪) চারচালা মন্দির : চারচালা রীতি চারটি চালের সমাহার । দুচালার দুপাশ থেকে আরও দুটি চালা নামলে বলা হয় চারচালা । যেমন – শিব, দিগনগর মন্দির ( নদিয়া )।
৫) আটচালা মন্দির : আটচালা মন্দির চারচালারই পরিবর্তিত রূপ । নিচের চারটি চালার উপরে অল্পাধিক উচ্চতার চারটি দেওয়াল তুলে তার উপরে দ্বিতীয় স্তরের আরও চারটি অপেক্ষাকৃত ছোট আয়তনের চালা বিন্যস্ত হলে বলা হয় আটচালা। যেমন –
কাঞ্চনপল্লী, কল্যাণী রথতলা মন্দির ( নদিয়া )।
৬) বারচালা মন্দির : এই ভাবে আটচালার উপরে আরও ছোট চারচালা চাপালে হয় বারচালা।
যেমন – সেনহাট শিব মন্দির ( হুগলি )।
৭) রত্ন মন্দির : একটি চারচালা ছাদের উপরের মধ্যবর্তী স্থানে একটি ‘চূড়া’ বা ‘রত্ন’ বসালে হয় এক রত্ন মন্দির । বিশুদ্ধ রত্ন মন্দিরের বিশেষত্ত্ব হল চালার বাঁকানো কার্নিস। রত্ন মন্দির আবার পঞ্চ রত্ন, দ্বিতল পঞ্চ রত্ন এমন কয়েক ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন – দ্বিতল পঞ্চরত্ন মন্দির – অন্নপূর্ণা মন্দির (নদিয়া)।এমন ভাবে সংখ্যা বাড়িয়ে ৯ ১৩, ১৭, ২১, ২৫ অবধি বাড়ানো যায় । মুর্শিদাবাদ জেলার রত্ন মন্দির গুলিতে কেন্দ্রীয় চূড়াটি হয় অতি বৃহৎ। কিন্তু কোণের রত্ন গুলি অতি ক্ষুদ্র ।