www.machinnamasta.in

ওঁ শ্রীং হ্রীং ক্লী গং গণপতয়ে বর বরদ সর্বজনস্ময়ী বশমানয় ঠঃ ঠঃ

April 29, 2024 10:19 am
raksha bandhan

১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ প্রতিরোধ করার জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাখী বন্ধন উৎসব পালন করেছিলেন। তিনি কলকাতা, ঢাকা ও সিলেট থেকে হাজার হাজার হিন্দু ও মুসলিম ভাই ও বোনকে আহ্বান করেছিলেন একতার প্রতীক হিসাবে রাখী বন্ধন উৎসব পালন করার জন্য। সেই সময় দেশে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা চরম পর্যায়ে ছিল।

ভাই এবং বোনের মধ্যে পবিত্র সম্পর্কের উত্সব রক্ষাবন্ধন শীঘ্রই আসছে। এবার অগাস্টের শেষের দিকে পড়বে রক্ষা বন্ধনের শুভ উৎসব। রক্ষাবন্ধনে বোনেরা তাদের ভাইয়ের কব্জিতে রাখি বাঁধেন এবং ভাইরাও তাদের রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দেন। শ্রাবণ মাসে আসা এই উৎসবের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। এবার রক্ষা বন্ধন উপলক্ষে পঞ্চক ও ভদ্রা যোগ তৈরি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ২০২৩ সালে ২ দিন ধরে পালিত হতে চলেছে রক্ষা বন্ধন উৎসব। আসুন জেনে নিই রক্ষা বন্ধনের সঠিক তারিখ এবং রাখি বাঁধার শুভ সময় কী।

এদিন পালিত হবে রক্ষাবন্ধন (Raksha Bandhan)

শ্রাবণ মাসের শুক্লপক্ষের পূর্ণিমা তিথিতে যা ৩০ আগস্ট সকাল ১০টা ৫৮ মিনিট থেকে শুরু হবে, যা চলবে পরের দিন ৩১ আগস্ট সকাল ৭টা ৫ মিনিট পর্যন্ত।

ভদ্রার ছায়া (Vadra)

রক্ষা বন্ধনের দিনে ভদ্রার শেষ রাত ০৯:০১ মিনিটে।

রক্ষা বন্ধনে ভদ্রার পুচ্ছের সময় বিকেল ৫:৩০ থেকে ০৬ :৩১ পর্যন্ত।

ভদ্রার মুখের সময় সন্ধ্যা ০৬ : ৩১ থেকে রাত ০৮ : ১১ মিনিট পর্যন্ত।

জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুসারে ভদ্রার কালে কোনও শুভ কাজ করা হয় না। ভদ্রাকালের কাজ অশুভ প্রভাব ফেলে। বিশ্বাস অনুসারে, শূর্পণখা ভদ্রাকালেই রাবণকে রাখি বেঁধেছিলেন, যার ফলে রাবণের সমগ্র বংশ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। ভদ্রাকালে রাখি বাঁধা নিষিদ্ধ।

রাখি বন্ধনের শুভ সময় (Raksha Bandhan 2023)

রাখি বাঁধার শুভ সময়, রক্ষাবন্ধনের দিনে, ভদ্রাকাল ও পঞ্চক সৃষ্টির কারণে, এই উত্সবটি দু’দিন ধরে পালিত হবে। ৩০ আগস্ট রাখি বাঁধার শুভ সময় রাত ০৯ :০১ থেকে শুরু এবং পরের দিন সকাল ০৭ :০৫ পর্যন্ত রাখি বাঁধা যেতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে ২ দিন ধরে পালিত হবে রক্ষাবন্ধন উৎসব।

পৌরাণিক ইতিহাস (History of Raksha Bandhan)

রাখি বন্ধন ভারতীয়দের মধ্যে একটি উৎসব । ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, কলকাতার রাস্তায় রাস্তায় ৩০ আশ্বিন রবীন্দ্রনাথের নেতৃত্বে রাখি বন্ধন উৎসব পালিত হয়। তিন সাম্প্রদায়িকতা মেটাতে রবীন্দ্রনাথ জাতি ধর্ম নির্বিশেষে রাখি বন্ধন উৎসব প্রচলন করেন।এখন অবশ্য জায়গায় জায়গায় বিভিন্ন ধরনের রাখি উৎসব পালন করা হয় ,সেটা জাতি ধর্ম নির্বিশেষে।

রক্ষা বন্ধন উৎসবে ভাইবোনের মধ্যকার স্বর্গীয় সম্পর্ক উদযাপন করা হয়। এই রক্ষা বন্ধন প্রতি বছর শ্রাবন মাসের পূর্ণিমার দিন পালন করা হয়। বোনেরা তাদের ভাইদের হাতের কব্জিতে সুন্দর সুন্দর পবিত্র সূতো বেঁধে দেন যা ‘নিরাপত্তা ও রক্ষা বন্ধন’ প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তাঁরা তাদের ভাইদের মঙ্গল কামনা করে এবং ভাইয়েরা বোনদের রক্ষা করা প্রতিশ্রুতি প্রদান করে। মনে করা হয়, এই বিশেষ দিনে পরিবেশে “যম” বা দুষ্টু ও অশুভ তত্ত্ব বেশি থাকে, এতে ভাইয়ের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে, কিন্তু রাখি বন্ধনের ফলে তা দূর হয়ে যায়।

রাখী পূর্ণিমাকে ঘিরে রয়েছে নানান পৌরাণিক কাহিনি। রামায়ণ (Ramayan) অনুযায়ী, ভগবান রাম (Sri Ram) সমস্ত বানর সেনাদের ফুল দিয়ে রাখি বেঁধে ছিলেন। এছাড়া, লক্ষ্মী বলিকে ভাই হিসেবে মেনে রাখি পরিয়েছিলেন যাতে সে উপহার স্বরূপ বিষ্ণুকে স্বর্গে তার কাছে ফিরে যেতে বলে।

অন্যদিকে, সুভদ্রা কৃষ্ণের ছোট বোন, কৃষ্ণ সুভদ্রাকে অত্যন্ত ভালবাসতেন। তবে আপন বোন না হয়েও দ্রৌপদী ছিলেন কৃষ্ণের অতীব স্নেহভাজন। একদিন সুভদ্রা কিছুটা অভিমান ভরে কৃষ্ণকে (sri Krishna) প্রশ্ন করেন, এর কারণ কী। উত্তরে কৃষ্ণ জানান, ‘যথা সময়ে এর কারন তুমি বুঝতে ‘এর কিছুদিন পর শ্রীকৃষ্ণের হাত কেটে রক্ত ঝরছিল, তা দেখে সুভদ্রা রক্ত বন্ধ করার জন্য কাপড় খুঁজছিলেন, কিন্তু কোথাও কোনও পাতলা সাধারণ কাপড় পাচ্ছিলেন না, এর মাঝে দ্রৌপদী সেখানে এসে দেখেন কৃষ্ণের হাত থেকে গলগ করে রক্ত পড়ছে।

সেই ঘটনা দেখামাত্রই বিন্দুমাত্র দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে নিজের মুল্যবান রেশম শাড়ি ছিঁড়ে কৃষ্ণের হাত বেধে দেন, কিছুক্ষণ পর রক্তপাত বন্ধ হয়। তখন শ্রীকৃষ্ণ বোন সুভদ্রাকে ডেকে বলেন-‘এখন বুঝতে পেরেছ কেন আমি দ্রৌপদীকে এত স্নেহ করি?’ সুভদ্রা তখন বুঝত পারলেন, ভক্তি ও পবিত্র ভালবাসা, শ্রদ্ধা কী জিনিস! দাদা কৃষ্ণের চেয়ে মুল্যবান বস্ত্র নিজের কাছে বেশি প্রিয়, এটা ভেবে সুভদ্রা দারুণ লজ্জিত হয়ে পড়েন।

কোন বোন তার ভাইয়ের কোনও রকম কষ্ট, অমঙ্গল সহ্য করতে পারে না। ভাইয়ের কষ্ট দুর করার জন্য সে সর্বত্তম চেষ্টা করে। অন্যদিকে ভাই ও তার বোনকে পৃথিবীতে সর্বাধিক স্নেহ করে, সারাজীবন তাঁকে রক্ষা করে থাকে, যে রকম শ্রীকৃষ্ণ দ্রৌপদীকে রাজসভায় চরম কলঙ্ক থেকে রক্ষা করেছিলেন। তাই, এই পবিত্র বন্ধনের দিনে, সকল ভাই-বোনের উচিত এরকম ভক্তিভাব ও ভালবাসা বজায় রাখা। কৃত্রিমতা, যান্ত্রিকতার এই বর্তমান যুগে ভাই-বোনের মাঝে ভালবাসা ও শ্রদ্ধার বড় অভাব। সনাতন ধর্মে বড় বোন বা দিদিকে মাতৃস্থানীয় এবং বড় ভাইকে পিতৃস্থানীয় সম্মান ও ভালবাসা দেওয়ার কথা বলা আছে।

রাখীবন্ধনের দিন গণেশের (Ganesha) বোন গণেশের হাতে একটি রাখি বেঁধে দেন। এতে গণেশের দুই ছেলে শুভ ও লাভের হিংসে হয়। তাদের কোনও বোন ছিল না। তারা বাবার কাছে একটা বোনের বায়না ধরে। গণেশ তখন তাঁর দুই ছেলের সন্তোষ বিধানের জন্য দিব্য আগুন থেকে একটি কন্যার জন্ম দেন। এই দেবী হলেন গণেশের মেয়ে সন্তোষী মা। সন্তোষী (Maa Santoshi) মা শুভ ও লাভের হাতে রাখি (Spirituality) বেঁধে দেন।

অন্য একটি কাহিনি রয়েছে, দৈত্যরাজা বলি ছিলেন বিষ্ণুর ভক্ত। বিষ্ণু বৈকুণ্ঠ ছেড়ে বালির রাজ্য রক্ষা করতে চলে এসেছিলেন। বিষ্ণুর স্ত্রী লক্ষ্মী (Maa Laxmi) স্বামীকে ফিরে পাওয়ার জন্য এক সাধারণ মেয়ের ছদ্মবেশে বলিরাজের কাছে আসেন। লক্ষ্মী বলিকে বলেন, তাঁর স্বামী নিরুদ্দেশ। যতদিন না স্বামী ফিরে আসেন, ততদিন যেন বলি তাঁকে আশ্রয় দেন। বলিরাজা ছদ্মবেশী লক্ষ্মীকে আশ্রয় দিতে রাজি হন। শ্রাবণ পূর্ণিমা উৎসবে লক্ষ্মী বলিরাজার হাতে একটি রাখী বেঁধে দেন। বলিরাজা এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে লক্ষ্মী আত্মপরিচয় দিয়ে সব কথা খুলে বলেন। এতে বলিরাজা মুগ্ধ হয়ে বিষ্ণুকে বৈকুণ্ঠে ফিরে যেতে অনুরোধ করেন। বলিরাজা বিষ্ণু VIshnu) ও লক্ষ্মীর জন্য সর্বস্ব ত্যাগ করেন। সেই থেকে শ্রাবণ পূর্ণিমা তিথিটি বোনেরা রাখীবন্ধন হিসেবে পালন করে (Spiritual)।

(Collected)

administrator

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *