www.machinnamasta.in

ওঁ শ্রীং হ্রীং ক্লী গং গণপতয়ে বর বরদ সর্বজনস্ময়ী বশমানয় ঠঃ ঠঃ

May 9, 2024 7:28 pm
karam puja

সেপ্টেম্বর মাসের দিকে ভাদো একাদশীতে এই উৎসবটি কর্মপর্ব হিসেবে পালিত হয়। পূজার নয় দিন আগে, নদীর বালি ঝুড়িতে রাখা হয়, সাজানো হয় এবং সাত ধরনের শস্য বপন করা হয়, যা পুজোর দিন অঙ্কুরিত হয়। যাকে বলা হয় ‘জাভা’ ফুল। পাতা ও ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে পূজার স্থানগুলি। যে ভক্ত পূজায় অংশগ্রহণ করেন, তাঁরা স্নান করেন, সন্ধ্যায় নতুন পোশাক পরে পূজায় যোগ দেন। যুবকরা করম ডাল কেটে সন্ধ্যায় নিয়ে আসেন। পুরোহিত পূজার স্থানে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে স্থাপন করেন। পূজার সঙ্গে সঙ্গে কর্ম-ধর্ম কাহিনি বর্ণনা করা হয়।

করম প্রধানত সৃষ্টির উৎসব। কর্ম থেকে করমের উৎপত্তি। ঝাড়খণ্ডের কিছু জায়গায় এই উৎসব কর্মা নামেও পরিচিত। আরও ভালো করে দেখলে বোঝা যায় এই পরবের মূল আচার যে জাওয়া পাতা, তার মধ্যেও লুকিয়ে আছে এই সৃজনশীলতার ইঙ্গিত। বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ এই কথাটা তো আমরা সবাই জানি। এমন কিছু পার্বণ বা পূজা আছে যা আমাদের অনেকেই জানেন না। তেমনই গ্রাম বাংলার এক অজানা অথচ সু প্রচলিত পার্বণ হলো করম পরব বা করম পূজা। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে এই উৎসব উপলক্ষে পূর্ণাঙ্গ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু কী এই উৎসব? কারাই বা এই উৎসব পালন করেন? চলুন দেখে নেয়া যাক।

করম পূজা কী? (What is Karam Puja?)

করম প্রধানত সৃষ্টির উৎসব,সৃজনের উৎসব। কর্ম থেকে করমের উৎপত্তি। ঝাড়খণ্ডের কিছু জায়গায় এই উৎসব কর্মা নামেও পরিচিত। আরও ভালো করে দেখলে বোঝা যায় এই পরবের মূল আচার যে জাওয়া পাতা, তার মধ্যেও লুকিয়ে আছে এই সৃজনশীলতার ইঙ্গিত।

করম পূজা কোথায় পালন করা হয়? (Who Celebrates Karam Puja?)

করম পূজা ঝাড়খণ্ড (Jharkhand), বিহার (Bihar), মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, আসাম (Assam), ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য এবং বাংলাদেশ ও নেপালে পালিত একটি ফসল কাটার উৎসব। পশ্চিমবঙ্গের মানভূম এলাকার (পুরুলিয়া,বাঁকুড়া,পশ্চিম মেদিনীপুর) (Purulia, Bankura, Paschim Midnapur) বাসিন্দাদের প্রাণের উৎসব হল এই করম পূজা। এই উৎসবের মাধ্যমে আদিবাসীদের জল-জমিন-জঙ্গলকেন্দ্রিক জীবন ধারার প্রতিফলন দেখা যায়।

করম উত্সব আবার ঝাড়খণ্ডের একটি জনপ্রিয় উত্সব এবং সেখানকার মানুষ সারা বছর এই উৎসবের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন। ঠিক যেমন রাখিবন্ধনের দিন বোনেরা তাদের ভাইয়ের হাতে রাখি বেঁধে দীর্ঘায়ু কামনা করেন, ঠিক একইভাবে করমও ভাই-বোনের সম্পর্ককে মজবুত করে। এই দিনে, বোনেরা সারাদিন উপবাস করে এবং ভগবান কর্মের পূজা করেন এবং তাঁর কাছে তাঁদের ভাইয়ের দীর্ঘায়ু এবং সুখ ও সমৃদ্ধির আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন।

এই উপলক্ষ্যে পূজা করে আদিবাসীরা ভালো ফসল কামনা করেন। করম উপলক্ষ্যে, পূজা প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরেমানুষ ঢোল মন্দার ও নাগারার তালে নাচেন। এই উত্সবটি ঐতিহ্য রক্ষার পাশাপাশি সমস্ত মানুষের বিনোদনের একটি ভালো মাধ্যম যেখানে পুরুষরা সারা রাত পানীয় পান করেন, গান গান এবং নাচেন।

সেপ্টেম্বর মাসের দিকে ভাদো একাদশীতে এই উৎসবটি কর্মপর্ব হিসেবে পালিত হয়। পূজার নয় দিন আগে, নদীর বালি ঝুড়িতে রাখা হয়, সাজানো হয় এবং সাত ধরনের শস্য বপন করা হয়, যা পুজোর দিন অঙ্কুরিত হয়। যাকে বলা হয় ‘জাভা’ ফুল। পাতা ও ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে পূজার স্থানগুলি। যে ভক্ত পূজায় অংশগ্রহণ করেন, তাঁরা স্নান করেন, সন্ধ্যায় নতুন পোশাক পরে পূজায় যোগ দেন। যুবকরা করম ডাল কেটে সন্ধ্যায় নিয়ে আসেন। পুরোহিত পূজার স্থানে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে স্থাপন করেন। পূজার সঙ্গে সঙ্গে কর্ম-ধর্ম কাহিনি বর্ণনা করা হয়।

করম পূজা কখন পালন করা হয়?

প্রতিবছর ভাদ্র মাসের শুক্ল একাদশী তিথিতে করম পূজা উৎসব পালিত হয়ে থাকে। এই বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের এই উৎসব অনুষ্ঠিত হবে ২৫ সেপ্টেম্বর, সোমবার।

কিভাবে করম পূজা উৎসব পালন করা হয়?

এই উৎসবে করম দেবতার উপাসনা করা হয়। করম পূজা উৎসব ভাদ্র মাসের শুক্ল একাদশী তিথিতে পালিত হয়। এর সাত দিন আগে মেয়েরা ভোরবেলায় শালের দাঁতন কাঠি ভেঙে নদী বা পুকুরে স্নান করে এবং বাঁশ ও ডাল দিয়ে বোনা ছোট টুপা ও ডালায় বালি দিয়ে ভর্তি করে। তারপর সে ডালাগুলিকে গ্রামের প্রান্তে একটা জায়গায় রাখে এবং জাওয়া গান গাইতে গাইতে তিন পাক ঘোরে।

এরপর তাতে তেল ও হলুদ দিয়ে মটর, মুগ, বুট, জুনার ও কুত্থির বীজ মাখানো হয়। অবিবাহিত মেয়েরা স্নান করে ভিজে কাপড়ে ছোট শাল পাতার থালায় বীজগুলিকে বুনা দেন ও তাতে সিঁদুর ও কাজলের তিনটি দাগ টানা হয়, যাকে বাগাল জাওয়া বলা হয়। এরপর ডালাতে ও টুপাতে বীজ বোনা হয়। এরপর প্রত্যেকের জাওয়া চিহ্নিত করার জন্য কাশকাঠি পুঁতে দেওয়া হয়। একে জাওয়া পাতা বলা হয়।

যে ডালায় একাধিক বীজ পোঁতা হয়, তাকে সাঙ্গী জাওয়া ডালা এবং যে ডালায় একটি বীজ পোঁতা হয়, তাকে একাঙ্গী জাওয়া ডালা বলা হয়। যে সমস্ত কুমারী মেয়েরা এই কাজ করেন, তাদের জাওয়ার মা বলা হয়। বাগাল জাওয়াগুলিকে লুকিয়ে রেখে টুপা ও ডালার জাওয়াগুলিকে নিয়ে তারা গ্রামে ফিরে আসেন। দিনের স্নান সেরে পাঁচটি ঝিঙাপাতা উলটো করে বিছিয়ে প্রতি পাতায় একটি দাঁতনকাঠি রাখা হয়।

পরদিন গোবর দিয়ে পরিষ্কার করে আলপনা দেওয়া হয় ও দেওয়ালে সিঁদুরের দাগ দিয়ে কাজলের ফোঁটা দেওয়া হয়। পুরুষেরা শাল গাছের ডাল বা ছাতাডাল সংগ্রহ করে আনেন। গ্রামের বয়স্কদের একটি নির্দিষ্ট করা স্থানে দুইটি করম ডাল এনে পুঁতে রাখা হয়, যা সন্ধ্যার পরে করম ঠাকুর বা করম গোঁলায় এবং ধরম ঠাকুর হিসেবে পূজিত হন। কুমারী মেয়েরা সারাদিন উপোষ করে সন্ধ্যার পরে থালায় ফুল, ফল সহকারে নৈবেদ্য সাজিয়ে এই স্থানে গিয়ে পূজা করেন।

মেয়েরা জাওয়া থেকে অঙ্কুরিত বীজগুলিকে উপড়ে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিয়ে বাড়িতে বিভিন্ন স্থানে সেগুলিকে ছড়িয়ে দেন। এরপর করম ডালটিকে জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। পূজার পরে মেয়েরা পরস্পরকে করমডোর বা রাখী পরিয়ে দেয়। এই করমসখীরা, কর্মস্থলে একে অপরকে রক্ষা করে। জঙ্গলে পাখির ডাকের নকলে ‘করমড্যের’ ডেকে বিপদ জানায়।

করম গান ও নাচ

এই পরবের মূল সম্পদ হল জাওয়া-গান। এই গানগুলোর কোনো লিখিত রূপ না পাওয়া গেলেও প্রতিটি গ্রামে বংশ পরম্পরায় মুখে মুখে প্রচলিত। এই গানগুলো র মাধ্যমে নারী মনের সূক্ষ্ম অনুভূতির পরিচয় পাওয়া যায়। এই গানের সাথে সাথে চলে করম নাচ। জাওয়াকে কেন্দ্র করে মেয়েরা চক্রাকারে নাচে। এই নাচ গানের মধ্যে দিয়ে প্রতিফলিত হয় তাদের দৈনন্দিন জীবনের হাসি-কান্না,সুখ-দুঃখ। এই গানগুলো বাংলার লোকসাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদও বলা যেতে পারে।

administrator

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *