জীবনে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি লাভ করার জন্য আমরা নানা ভাবে চেষ্টা করে থাকি। জীবনে সুখ শান্তি পেতে জ্যোতিষে নানা উপায়ের কথা উল্লেখ আছে। আজ আমরা আপনাদের জানাবো রবিবার কোন কোন কাজ করলে সৌভাগ্যের দ্বার খুলে যায়। হিন্দুধর্মে সপ্তাহের এক একটি দিন এক একজন দেবতার উদ্দেশ্যে নিবেদিত। সেই হিসেবে রবিবার দিনটি হল রবি অর্থাত্ সূর্যদেবের উদ্দেশ্যে নিবেদিত।
সূর্যের (Sun God) আশীর্বাদ জীবনে লাভ করা সম্ভব হলে নানা সংকট কেটে যেতে পারে। সূর্যদেবের আনুকূল্যে জীবনে যেমন আর্থিক লাভ হবে, তেমনই খ্যাতি অর্জন করতে পারবেন। জেনে নিন রবিবার কোন কোন কাজ করলে সূর্যের কৃপা আপনার উপর বর্ষিত হবে।
সূর্য হিন্দুধর্মের প্রধান সৌর দেবতা (Spiritual)। তিনি আদিত্যগণের অন্যতম এবং কশ্যপ ও তাঁর অন্যতমা পত্নী অদিতির পুত্র। কোনও কোনও মতে তিনি ইন্দ্রের (Indra) পুত্র। সূর্যের কেশ ও বাহুর সোনার। তিনি সপ্তাশ্ববাহিত রথে আকাশপথে পরিভ্রমণ করেন। তাঁর রথের ঘোড়াগুলি সাতটি পৃথক পৃথক রঙের, যা রঙধনুর সাত রঙের প্রতীক। তিনি রবিবারের অধিপতি। হিন্দু ধর্মীয় সাহিত্যে সূর্যকে যথেষ্ট গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। কারণ তিনিই একমাত্র দেবতা যাঁকে মানুষ প্রত্যহ প্রত্যক্ষ করতে পারেন। এছাড়াও, শৈব (Siva) ও বৈষ্ণবেরা সূর্যকে যথাক্রমে শিব ও বিষ্ণুর রূপভেদ মনে করেন। উদাহরণস্বরূপ, বৈষ্ণবেরা সূর্যকে সূর্যনারায়ণ বলে থাকেন। শৈব ধর্মতত্ত্বে, শিবের অষ্টমূর্তি রূপের অন্যতম হলেন সূর্য।
সূর্য দেবতা প্রধান দেবতা (Spirituality) । তার হাত উজ্জ্বল বর্ণের । মাথায় উজ্জ্বল মুকুট । সাতটি ঘোড়া চালিত রথে তার অবস্থান । কথিত আছে , সূর্য দেবের রথ কখনো থামে না । সূর্য দেবতা ঋক বেদের বিখ্যাত দেবতা । তার সারথির নাম হল অরুণ । কথিত আছে যে , সূর্য দেবতার রথের চাকা একটি । সমস্ত হিন্দুরা সকালে সূর্যদেবকে জল নিবেদন করেন। গৃহ এবং ঈশ্বর উভয় হিসাবেই পূজিত হন। যিনি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন বা বলেন যে তিনি আস্তিক, তিনি সূর্য ঈশ্বরের উপাসনা করেন। সূর্য দেবতার দুই স্ত্রী, সাঙ্গ্যা ও ছায়া। একটি কিংবদন্তি অনুসারে, ভগবান সূর্য তার স্ত্রী সাঙ্গ্যাকে ত্যাগ করেছিলেন, কারণ তিনি সূর্য দেবতার তেজ ও দৃঢ়তা সহ্য করতে পারেননি। আর এই ঘটনার পর সূর্যদেবের রশ্মির তপস্যা কমে যায়। এই কারণে, সূর্যের স্ত্রী সাঙ্গ্যা অশ্বনী (ঘোড়া) রূপে পৃথ্বীতে বাস করতে শুরু করেন এবং তার আনুগত্য করার জন্য, সূর্যদেবও অশ্ব (ঘোড়া) রূপে পৃথ্বীতে বসবাস শুরু করেন। এবং এই সময়ে তার ২ পুত্রের জন্ম হয়, যাদের আমরা অশ্বিনী কুমার নামে চিনি।
কথিত আছে, ভগবান সূর্য অত্যন্ত শক্তিশালী, তাই তিনি তার পুত্র ন্যায়ের দেবতা শনিকেও আক্রমণ করে পুড়িয়ে দিয়েছিলেন। এর পর শনি তিল দিয়ে সূর্য দেবতার আরাধনা করলে পুত্রের ওপর পিতার প্রকোপ শেষ হয়। আমরা সবাই জানি যে প্রাচীনকালে ভারতে সূর্য দেবতার অনেক মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আর এসব মন্দিরের অনেকগুলোই বিশ্ব বিখ্যাত। হিন্দু ধর্মে সূর্য দেবতার ১২টি নাম অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সুখ ও সমৃদ্ধি লাভের জন্য সূর্য দেবতার নাম জপ করুন-
ওম সূর্য নমহা। ওম মিত্রায় নমহা। ওম রাবায়ে নমহা। ওম ভানভে নমহা। ওম খগাই নমহা। ওম পুষনে নমহা। ওম হিরণ্যগর্ভায় নমঃ ওম মারিচে নমহা। ওম আদিত্য নমহা। ওম সাবিত্রে নমহা। ওম আরকে নমহা। ওম ভাস্করায় নমহা।

Surya Pranam Mantra In Bengali (সূর্য প্রণাম মন্ত্র)
ওঁ জবাকুসুমসঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম
ধান্তারীং সর্বপাপঘ্নং প্রণতোহস্মি দিবাকরম্
সূর্য বৈদিক মন্ত্র
ওং আকর্ষেণ রজসা বর্তমানো
নিবেশায়নামর্তন মার্তণ্ড
হিরণ্যায়েন সবিতা রথে
দেব যাত্রী ভুবানানি পশ্যন
সূর্যের জন্য তান্ত্রিক মন্ত্র
ওং ঘৃণিঃ সূর্যাদিত্তম
ওং ঘৃণিঃ সূর্য আদিত্য শ্রী
ওং হ্রাং হ্রীং হ্রৌং সঃ সূর্যাং নমঃ
ওং হ্রীং হ্রীং সূর্যায় নমঃ
সূর্য নাম মন্ত্র
ওং ঘৃণি সূর্যায় নমঃ
সূর্য গায়ত্রী মন্ত্র
ওং আদিত্য ভিদ্মহে সহস্র কিরণায়
ধিমাহি তন্নো সূর্য প্রচোদয়াৎ
জীবনের সাফল্য মন্ত্র
ওং নমো শ্রী সূর্যায়া সহস্র কিরণায়
সিদ্ধি সিদ্ধি কারায়া মন বঞ্চিত পুরায়া
কষ্টম চুরায়াম ওং হ্রীং সূর্যায়া নমো নমাহা

সূর্য দেবতার পুজোর পদ্ধতি (Surya Puja)
সূর্য পুজো র জন্য তামার থালা ও তামার পাত্র ব্যবহার করুন। লাল চন্দন ও লাল ফুলের ব্যবস্থা রাখুন। একটি প্রদীপ নিন। একটি পাত্রে জল নিয়ে তাতে এক চিমটি লাল চন্দনের গুঁড়া ও লাল ফুল দিন। থালায় প্রদীপ ও ঘট রাখুন। ওম সূর্যায় নমঃ মন্ত্র জপ করে সূর্যকে নমস্কার করুন। একটি পাত্র দিয়ে সূর্যদেবকে জল নিবেদন করুন। সূর্য মন্ত্র জপ করতে থাকুন। অর্ঘ্য উৎসর্গ করার সময় পাত্র থেকে জলের স্রোতের দিকে চোখ রাখুন। জলের স্রোতে সূর্যের প্রতিচ্ছবি বিন্দু হিসাবে ফুটে উঠবে।
সূর্যকে অর্ঘ্য নিবেদন করার সময়, উভয় বাহু এত উঁচু করুন যাতে জলের স্রোতে সূর্যের প্রতিফলন দেখা যায়। সূর্য দেবতার পুজো করুন। এরপর হাত জোড় করে নমস্কার করুন। উদীয়মান সূর্যকে নমস্কার ও দর্শন করলে আমাদের শরীরে ইতিবাচক শক্তি সঞ্চারিত হয়। ব্যবসায় কেরিয়ারে সাফল্য অর্জিত হয়।
সূর্য পুজোর কিছু গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্র রয়েছে। এই মন্ত্রগুলি জপ করলে সূর্যের কৃপা সর্বদা আমাদের সঙ্গে থাকে। প্রতিদিন সকালে বা সন্ধ্যায় অস্ত যাওয়ার সময় সূর্য মন্ত্র জপ করলে সূর্যের কৃপা সর্বদা আমাদের সঙ্গে থাকে। সূর্যের কৃপায় আমরা স্বাস্থ্য, সম্পদ, সমৃদ্ধি, বুদ্ধি এবং সাফল্য পাই।
সূর্যদেবকে জলের অর্ঘ্য দিন
প্রতি রবিবার ভোরে ঘুম থেকে উঠে সূর্যদেবকে জলের অর্ঘ্য দিন। প্রতিদিনই সূর্যকে জলের অর্ঘ্য দেওয়া খুবই ভালো। তবে বিশেষ করে রবিবারে সূর্যদেবের উদ্দেশ্যে জলের অর্ঘ্য নিবেদন করুন। সকালে উঠে স্নান সেরে তারপর সূর্যকে জলের অর্ঘ্য দিন। তামার পাত্র থেকে সূর্যকে জলের অর্ঘ্য নিবেদন করুন। তার মধ্য একটি লাল ফুল, রোলি, অক্ষত ও মিছরি রাখুন। এরপর ওই জল সূর্যের উদ্দেশ্যে নিবেদন করুন।
ঝাঁটা কিনুন
রবিবার ঝাঁটা কেনা অত্যন্ত শুভ বলে জ্যোতিষমতে মনে করা হয়। যে কোনও রবিবার বাজার থেকে একসঙ্গে তিনটি ঝাঁটা কিনুন। তারপর সোমবার কোনও মন্দিরে ওই তিনটি ঝাঁটা দান করে দিন। এর ফলে সূর্য দেবতার আশীর্বাদ আপনার উপর বর্ষিত হবে।
কলাপাতায় মনের ইচ্ছে লিখুন
মনের সব ইচ্ছে পূরণ করতে রবিবার সকালে একটি কলাপাতা থেকে এক টুকরো ছিঁড়ে নিয়ে তাতে নিজের মনের ইচ্ছে লিখে ফেলুন। তারপর নদীর জলে এই কলাপাতাটি ভাসিয়ে দিন। প্রতি রবিবার এই কাজ করলে আপনার মনের ইচ্ছে পূরণ হবে।
একটি প্রদীপ জ্বালান
জীবনে সুখ, সমৃদ্ধি ও খ্যাতি লাভ করতে প্রতি রবিবার সন্ধেবেলা অশ্বত্থ গাছের নীচে একটি প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখুন। এর জন্য রবিবার আটা দিয়ে একটি গোলাকার প্রদীপ নিজের হাতে বানান। এরপর এই চতুর্মুখী প্রদীপ কোনও অশ্বত্থ গাছের নীচে জ্বালিয়ে দিন। এর ফলে আপনার জীবন আনন্দে ভরে উঠবে।
দুধ নিবেদন করুন
প্রতি সোমবার বাবলা গাছের গোড়ায় একটু করে দুধ ঢেলে দিন। এর জন্য় রবিবার রাতে শুতে যাওয়ার আগে বালিশের পাশে এক গ্লাস দুধ রেখে দিন। পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বাবলা গাছের গোড়ায় ওই দুধ ঢেলে দিন। এর ফলে আপনার জীবন সুখ ও সমৃদ্ধিতে ভরে উঠবে।
(Collected)