‘সোনাগাছি’ নামটাই অনেকের কাছে ব্রাত্য। কিন্তু বিশ্বের আদিমতম এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বহু মহিলার জীবন ও জীবিকার লড়াই এই পেশা।দিনের পর দিন উমার আরাধনায় ব্রাত্য ছিলেন তাঁরাই। বিশ্বে যেখানেই বাঙালি, সেখানেই দুর্গা আরাধনা! অথচ যৌনকর্মীদের সন্তানরা সেই আলো থেকে দূরেই থাকতেন। তবে সেই দিন ঘুচেছে। মায়ের পুজোয় মেতে ওঠে সোনাগাছি। এবার তাদের ত্রয়োদশ বর্ষের পুজো। এই তেরোটি বছর শুধু পুজোর তেরো বছর নয়, এই তেরো বছর অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের তেরো বছর। বর্ষা শেষে শরৎ এলে দেবীর বাপের বাড়ি আসার দিন এগিয়ে আসে। কিন্তু তেরো বছর আগে পর্যন্ত মাকে দেখতে মণ্ডপে যেতে পারতেন না সোনাগাছির মেয়েরা।
দেবীপক্ষে নারীশক্তির এই অপমান মানতে পারেনি তাঁরা। নিজেদের এলাকাতেই দুর্গার আরাধনার সিদ্ধান্ত নেন যৌনকর্মীরা। তাতেও আপত্তি। রাতে তাঁদের শরীর ছিঁড়ে খাওয়া ‘ভদ্রবাবুরা’ই প্রশ্ন তোলেন পতিতারা করবে মায়ের পুজো? টানা তিনবছর চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে পুজো হয়েছে। কিন্তু তা থামানো যায়নি। তাঁরা হার মানেন নি । তাঁদের রক্তে যে দুর্গার শক্তি। হাই কোর্টের দারস্থ হন তাঁরা। ২০১৭ সালে মেলে অনুমতি। চতুর্থীর দিন সোনাগাছির দুর্গাপুজোর সূচনা। শাস্ত্রীয় নিয়মে শুরু হয় দেবীর বোধন। সপ্তমীয় ভোরে গঙ্গা থেকে জল আনা হয়, কলাবউ স্নান করিয়ে দেবীর ডান পাশে স্থাপন করা হয়। এদিন থেকেই দেবীর পূজা শুরু হয়ে অষ্টমীর সকালে পুষ্পাঞ্জলি। সোনাগাছির দুর্গামণ্ডপে তখন এক অনন্য দৃশ্য দেখা যায়।