পশ্চিমবঙ্গে লৌকিক দেবদেবীদের মধ্যে কেউ কেউ পৌরাণিক ও তান্ত্রিক দেবদেবীদের আঞ্চলিক রূপ (শিব, চণ্ডী, ষষ্ঠী, মনসা, শীতলা প্রমুখ), আবার কেউ কেউ পুরাণের সঙ্গে কোনওরূপ সম্পর্কবিহীন লোকসমাজে পূজিত দেবতা (ধর্মঠাকুর, দক্ষিণরায়, কালুরায়, মাকালঠাকুর, ভাদু, টুসু প্রমুখ)। লৌকিক দেবদেবীদের কারও কারও পূজা আদিবাসী সমাজেও প্রচলিত। লৌকিক দেবদেবীদের পূজার পাশাপাশি মছলন্দ-পির, বাবনগাজি, ছাবালপির, খোকাপির, মানিকপির, দেওয়ানগাজি, সত্যপির, গোরাচাঁদ পির প্রমুখের ন্যায় কিংবদন্তি পির ও গাজি এবং বনবিবি, ফতেমাবিবি, ওলাবিবি প্রমুখ বিবি মাও গ্রামীণ পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায় কর্তৃক পূজা-হাজত পেয়ে থাকেন।
পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসী ও লৌকিক দেবদেবীদের সঙ্গে রাজ্যের লোকসংস্কৃতির যোগ অবিচ্ছেদ্য। এই সব দেবদেবীকে কেন্দ্র করে আয়োজিত লোকউৎসব ও মেলাগুলি গ্রামীণ অর্থনীতিকে পুষ্ট করার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। লৌকিক দেবদেবীদের কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে লোকনাট্য ও লোকসংগীত, সৃষ্টি হয়ে লোকনৃত্য। মধ্যযুগে এই দেবদেবীদের মাহাত্ম্য কীর্তন করে রচিত মঙ্গলকাব্য বাংলা সাহিত্যের একটি বিশিষ্ট সাহিত্যধারা। পশ্চিমবঙ্গে পূজিত আদিবাসী ও লৌকিক দেবদেবীদের একটি বড়ো অংশের পূজা হয় অব্রাহ্মণ পুরোহিতের দ্বারা। কোথাও কোথাও মন্দির ও মূর্তি গড়ে পূজা হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লৌকিক দেবতাদের পূজা হয় গাছতলায় বা কুঁড়েঘরে শিলাখণ্ড, মাটির ঢিপি, পোড়ামাটির হাতিঘোড়া অথবা জীয়ন্ত গাছের প্রতীকে।