সর্বমঙ্গলা মঙ্গল্যে শিবে সর্বার্থ সাধিকে ।
শরণ্যে ত্রম্ব্যকে গৌরি নারায়নী নমস্তুতেঃ।।
সৃষ্টি-স্থিতি বিনাশানাং শক্তিভূতে সনাতনি।
গুণাশ্রয়ে গুণময়ে নারায়ণি নমোহস্তুতে॥
শরণাগত দীনার্ত পরিত্রাণ পরায়ণে।
সর্বস্যার্তি হরে দেবী নারায়ণী নমস্তুতে ।।
জয় নারায়ণী নমস্তুতে ।।
যার অর্থ, হে দেবী শিবের পত্নী সকল মঙ্গলে তুমি মঙ্গল স্বরূপা,কল্যাণদাত্রী,সর্বসিদ্ধি প্রদায়িনী, আশ্রয়দাত্রী, ত্রিনয়না,গৌরবর্ণা, নারায়নী তোমাকে প্রনাম জানাই।

সামনেই কৌশিকী অমাবস্যা। আর এই বিশেষ তিথিতে বর্ধমানের মা সর্বমঙ্গলা মন্দিরে রাতভোর পুজোর আয়োজন করা হয়েছে। বিশ্ব চরাচর যাঁর আশীর্বাদ ও মঙ্গল প্রার্থনা করেন, সেই ত্রিনয়না, গৌরবর্ণা, নারায়নী মা সর্বমঙ্গলার বিশেষ পুজো হবে আগামী শুক্রবার। ষোড়সপচারে পুজোর সঙ্গে থাকছে বিশেষ হোম। মন্দিরের প্রধান পুরোহিত অরুন ভট্টাচার্য বলেন, মায়ের আশীর্বাদ প্রার্থনার জন্য সন্ধ্য়ে থেকে বিশেষ পুজো ও যজ্ঞ হবে। পুজো শেষে সকলের জন্য থাকবে প্রসাদ, ভোগ। আমার সকলের উপস্থিতি প্রার্থনা করছি।
দেবী সর্বমঙ্গলা হল দেবী দুর্গার একটি রূপ, যা মূলত ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে পূজা করা হয় । বর্ধমানে অবস্থিত সর্বমঙ্গলা মন্দিরটি তাকে উৎসর্গ করা হয়েছে এবং এটি একটি উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় স্থান । সোববাংলের মতে , এটি অবিভক্ত বাংলার প্রথম নবরন্ত শৈলীর মন্দির হিসেবেও পরিচিত ।

দেবী সর্বমঙ্গলা এবং মন্দির সম্পর্কে আরও তথ্য এখানে:
দেবী সর্বমঙ্গলা:
- তাঁকে দেবী দুর্গার এক রূপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, বিশেষ করে বর্ধমানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী হিসেবে পূজিত হন।
- মন্দিরের মূর্তিটি দুর্গার ১৮টি হাত (অষ্টদশভূজা) রূপ বলে জানা যায়।
- একটি ইউটিউব ভিডিও অনুসারে , তিনি সিংহবাহিনী (সিংহের উপর চড়ে) এবং মহিষাসুরমর্দিনী (মহিষের রাক্ষসের বধকারী) নামেও পরিচিত।
সর্বমঙ্গলা মন্দির:
- মন্দিরটি ১৭০২ সালে মহারাজা কীর্তিচাঁদ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল।
- সোববাংলের মতে, এটি অবিভক্ত বাংলার প্রথম নবরন্ত শৈলীর মন্দির।
- মন্দিরটি বর্ধমানের সর্বমঙ্গলা রোডে অবস্থিত।
- এটি ভক্ত এবং পর্যটকদের কাছে একটি জনপ্রিয় গন্তব্য, উৎসবের সময়, বিশেষ করে দুর্গাপূজার সময় এখানে প্রচুর ভিড় হয়।
- মন্দিরের স্থাপত্য এবং পোড়ামাটির অলংকরণ উল্লেখযোগ্য।
- মন্দিরটি পূর্বে বর্ধমান রাজপরিবার দ্বারা রক্ষণাবেক্ষণ করা হত, এবং পরে বর্ধমানের শেষ রাজা কর্তৃক গঠিত একটি ট্রাস্ট বোর্ড দ্বারা রক্ষণাবেক্ষণ করা হত।

কথিত আছে, প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগে বর্ধমানের (Burdwan) উত্তরাংশে বাহির সর্বমঙ্গলা পাড়ায় পুকুরে মাছ ধরতে গিয়ে একটি শিলামূর্তি পেয়েছিলেন মৎস্যজীবীরা । কিছু দিন পর স্বপ্নাদেশ পান তৎকালীন রাজা সঙ্গম রায়। এরপর শিলামূর্তিটিকে নিয়ে এসে সর্বমঙ্গলা নামে পুজো শুরু করেন তিনি। পরবর্তীতে ১৭০২ সালে টেরাকোটার নিপুণ কারুকার্য করে সর্বমঙ্গলা মন্দির নির্মাণ করেন মহারাজাধিরাজ কীর্তিচাঁদ মহতাব।
রাঢ়বঙ্গের অধিষ্ঠাত্রী এই দেবী সর্বমঙ্গলার (Sarbamangala Devi) সূত্রে দুর্গাপুজো জনপ্রিয় হয়ে ওঠে বর্ধমান জেলা জুড়ে। কষ্টিপাথরের অষ্টাদশভুজা। সিংহবাহিনী দুর্গাই পুজিত হন সর্বমঙ্গলা রূপে।
বছরের প্রতিদিনই সর্বমঙ্গলা মন্দিরে হয় রাজকীয় আয়োজন। রাজবেশ ও দামী গয়নায় সাজিয়ে তোলা হয় সর্বমঙ্গলাকে। এরপর তোলা হয় সিংহাসনে। পুজো, মঙ্গলারতির মাঝেই চার বেলা দান করা হয় ভোগ।