পঞ্জিকা অনুযায়ী দেবীর বোধনপর্ব ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। বোধনের সঙ্গে সঙ্গেই আমরা প্রবেশ করলাম পুজোর ধৰ্মীয় অনুষতে। ষষ্ঠীর দিনে দেবীর বোধন। শাস্ত্রমতে, এই বোধনের মাধ্যমেই দক্ষিণায়নের নিদ্রিত দেবীর নিদ্রা ভঙ্গ করা হয়। যার পরই শুরু হয় দেবীর প্রকৃত আরাধনা। অর্থাৎ বোধনের গুরুত্ব অপরিসীম। যার অর্থ জাগরণ। এই জাগরনের পরেই পাপ নিধনের কাজ শুরু হবে। এক্ষেত্রে মাথায় রাখা দরকার, দেবীর এই সময় যে বোধন তা আসলে অকালবোধন। কৃত্তিবাস ওঝার অনুবাদে রামায়ণে পাচ্ছি ‘বিধি কন, বিধি আছে চণ্ডী-আরাধনে/ হইবে রাবণ বধ অকালবোধনে।।’ যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে যখন একে একে লঙ্কার বড় বড় বীররা ধরাশায়ী, তখন রাবণ মা দুর্গার স্তব করলেন। দুর্গা কালীরূপে রাবণকে অভয় দিলেন। মা কালীর কোলে আশ্রিত রাবণ যুদ্ধে অপরাজেয় হয়ে উঠতে লাগলেন। এই পরিস্থিতিতে দুর্গাকে তুষ্ট করতে অকালেই (বসন্তকালের বদলে শরৎকালে) তাঁর পুজো করতে মনস্থ করলেন রাম। এরপরই অকালবোধন। কেবল ষষ্ঠী নয়, অকালবোধন হয় নবমীতেও! কালিকাপুরাণ মতে, সেদিনই দেবীর মাধ্যমে রাবণবধ করেন রামচন্দ্র।
মহাকাব্য, বেদ ও পুরাণ বিশেষজ্ঞ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী বলেছেন, ”মূল রামায়ণে কিন্তু অকালবোধনও নেই, রামচন্দ্র দেবীর পূজা করছেন এটাও নেই।” আসলে বসন্তকালের বদলে শরৎকালে দেবীর পুজোই আজকের দুর্গাপুজোর কাহিনি হয়ে উঠলেও তা বাল্মীকি রামায়ণে নেই। পরে সংযোজিত হয়েছে। আবার অকালবোধনে রাবণের পৌরোহিত্যের কাহিনিও একই ভাবে ঢুকে পড়েছে কোনও কোনও রামায়ণের কাহিনিতে। আসলে রামায়ণের নানা সংস্করণ ছড়িয়ে রয়েছে। এই বিভিন্ন সংস্করণগুলির কথা ভাবতে বসলে সত্যিই অবাক হতে হয়। চেনা কাহিনি বদলে বদলে গিয়েছে ভিন্ন ভাষা, ভিন্ন সংস্কৃতির আঁচে! নৃসিংপ্রসাদ বলছেন, ”ষষ্ঠীতে যে বোধন হবে, সেই বোধন কিন্তু নতুন করে আবার নবমীতে তাকে জাগ্রত করতে হয়… কালিকাপুরাণে যেটা আছে, নবমীর বোধনের পরেই দেবী প্রবোধিত হলেন। এবং নিজের মায়ায় রামচন্দ্র এবং রাবণকে যুদ্ধে প্রবৃত্ত করলেন।” সেই সঙ্গেই তিনি মনে করিয়ে দিচ্ছেন, এই যে রাবণবধ এর নেপথ্যে কিন্তু দেবী দুর্গাই। তিনিই রামচন্দ্রের মাধ্যমে রাবণকে হত্যা করেন। এবং সেই দিনটা নবমী।