www.machinnamasta.in

ওঁ শ্রীং হ্রীং ক্লী গং গণপতয়ে বর বরদ সর্বজনস্ময়ী বশমানয় ঠঃ ঠঃ

August 13, 2025 11:12 pm

বদলেছে সময়। বদলেছে ভাষাও। কিন্তু বাংলা ভাষার নানা পরিবর্তনের পরেও চরিত্র গঠনের প্রয়োজনীয়তায় আজও বেঁচে থাকতে পারে মহর্ষি নগেন্দ্রনাথের 'প্রতিজ্ঞা শতক'।

ড. শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

বর্ণ পরিচয়ের পালা শেষ করার পর যখন শব্দ এবং বাক্য সামনে রেখে চলত এগিয়ে যাওয়ার পালা তখন ছাত্র পাঠ্য হিসেবে অনেক বাঙালি শিক্ষার্থীর হাতেই উঠত একটি ক্ষীণকায় বই। বইয়ের পাতায় কালো কালো অক্ষরের বিন্যাস একসময় মুখস্ত করত শিক্ষার্থীরা। নিত প্রতিজ্ঞা। আগামী দিনে চলার প্রস্তুতির জন্য। অন্ত্যমিলের জন্য মগজেও রয়ে যেত সহজে।

এই গ্রন্থটি লিখেছিলেন মহর্ষি নগেন্দ্রনাথ অর্থাৎ ভাদুড়ী মহাশয়। বাংলার ছাত্র পাঠ্য বাংলা নীতি শিক্ষা বিষয়ভিত্তিক প্রাথমিক পুস্তিকা হিসেবে।

ভাদুড়ী মহাশয় অর্থাৎ মহর্ষি নগেন্দ্রনাথের সারা পৃথিবীতে পরিচিতি যোগ-ভক্তি মার্গের সিদ্ধ সাধক, একজন লঘিমাসিদ্ধ যোগী হিসেবে। কিন্তু ধর্ম জগতের মানুষ হলেও কলকাতার ডাফ কলেজে সিনিয়র স্কলারশিপ পাওয়া মেধাবী ছাত্র – ইংরেজী, বাংলা, সংস্কৃত, হিন্দী, ফারসী, আরবী, ল্যাতিন, গ্ৰীক প্রভৃতি আটটি ভাষায় সুপণ্ডিত নগেন্দ্রনাথের এ এক অমর কীর্তি।

মহর্ষি নগেন্দ্রনাথ তাঁর জীবনের একটি পর্বে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন জনাই ইংরেজী বিদ্যালয়ে ও পরে বালি হাইস্কুলে। শিক্ষার প্রসারের লক্ষ্যে ১৮৯৪ খ্রী. তিনি কলকাতায় ‘পেট্রিয়টিক ইনস্টিটিউশন’ নামে একটি ইংরেজী স্কুলও স্থাপন করেন।

শিক্ষা জগতের সঙ্গে এই সংযোগের নিরিখেই সম্ভবত মহর্ষি নগেন্দ্রনাথ ছাত্রদের চরিত্র গঠনের উপযোগী একটি গ্রন্থের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। সেই প্রয়োজনীয়তা থেকেই তিনি রচনা করেন এই ‘প্রতিজ্ঞা শতক’।

মহর্ষি নগেন্দ্রনাথের রচিত এই ‘প্রতিজ্ঞা শতক’ নীতি গ্রন্থটিকে মহাকালী পাঠশালার প্রতিষ্ঠাত্রী মাতাজী গঙ্গাবাঈ পাঠ্য পুস্তক হিসেবে মনোনীত করেছিলেন।

শ্রীশ্রীনগেন্দ্র মঠের দ্বিতীয় মোহন্ত ভক্তিপ্রকাশ ব্রহ্মচারীর লেখা থেকে জানা যায় – মহর্ষি নগেন্দ্রনাথ এটি ছাত্রদের মুখস্থ করাতেন এবং তাদের অভ্যাস করতে বলতেন। পাঠের উপযোগী হওয়ার কারণে সেকালের শিক্ষার্থী মহলে পাঠ্য পুস্তিকা হিসেবে এটি যথেষ্ট জনপ্রিয়তা পায়।

এই গ্রন্থটির জনপ্রিয়তা এবং প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে ভক্তিপ্রকাশ ব্রহ্মচারী ১৮৭৯ শকে সনাতন ধর্ম প্রচারিণী সভার পক্ষ থেকে এই গ্রন্থটির পঞ্চমবার মুদ্রণের ব্যবস্থা করেন। পরবর্তী সময়ে শ্রীশ্রীনগেন্দ্র মঠের আচার্য রঘুপতি মুখোপাধ্যায়ও গ্রন্থটির নব্য সংস্করণ প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

এই বইয়ের সাথে জড়িয়ে রয়েছে ফেলে আসা দিনের এক দীর্ঘ সময়ের স্মৃতি। চরিত্র গঠনের প্রয়াস এবং প্রতিজ্ঞা। বলাবাহুল্য, এই প্রয়াস এবং প্রতিজ্ঞার প্রয়োজন আজও শেষ হয়নি ।

administrator

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *