লালন ফকির ছিলেন একজন মানবতাবাদী সাধক, যিনি ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে মানবতাকে সর্বোচ্চ স্থান দিয়েছিলেন। তিনি জাতিভেদ ও ধর্মীয় গোঁড়ামির ঊর্ধ্বে উঠে মানবতাবাদী দর্শন প্রচার করেছেন এবং তাঁর গানে এই দর্শনের প্রতিফলন ঘটেছে।
লালন ফকিরের ধর্মবোধ মূলত মানবতাবাদী এবং অসাম্প্রদায়িক ছিল। তিনি কোনো বিশেষ ধর্মের গণ্ডির মধ্যে নিজেকে আবদ্ধ রাখেননি, বরং সকল ধর্মের সারবত্তা গ্রহণ করে মানবধর্মের জয়গান গেয়েছেন। তার গানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে সকল মানুষের প্রতি গভীর মমত্ববোধ ও ভালোবাসার প্রকাশ ঘটেছে।
- লালনের ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির মূল বৈশিষ্ট্যগুলি হলো:
- মানবতাবাদী দর্শন:
লালন ছিলেন মানবতাবাদী, যিনি মানুষের ভেদাভেদকে অস্বীকার করে মানবতাকে গুরুত্ব দিয়েছেন। - অসাম্প্রদায়িকতা:
তিনি ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সকল মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রসার ঘটিয়েছেন। - সৃষ্টির ঐক্য:
লালনের গানে সৃষ্টির ঐক্য ও অদ্বৈতবাদের ধারণা প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ঈশ্বরকে বিভিন্ন নামে ডাকলেও সকল ধর্মের মানুষের একই ঈশ্বরের উপাসনা করেন বলে মনে করতেন। - আধ্যাত্মিকতা:
লালন ফকির ছিলেন একজন বাউল সাধক, যিনি আধ্যাত্মিক জ্ঞানের মাধ্যমে আত্ম-অনুসন্ধান ও আত্ম-উপলব্ধিকে গুরুত্ব দিয়েছেন। - বাউল দর্শন:
বাউল দর্শনের অনুসারী হিসেবে তিনি সহজ-সরল জীবনযাপন, প্রেম ও ভক্তির মাধ্যমে ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের পথ দেখিয়েছিলেন। - সমাজ সংস্কার:
লালন ফকির তৎকালীন সমাজের কুসংস্কার ও ধর্মের নামে প্রচলিত বিভেদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তিনি সমাজের মঙ্গল ও মানুষের মুক্তির জন্য কাজ করেছেন। লালনের গান ও দর্শনে মানবতাবাদী চেতনার প্রকাশ ঘটেছে, যা আজও মানুষকে অনুপ্রাণিত করে।