পরম পুরুষ রামকৃষ্ণদেবের সঙ্গে সাক্ষাৎ তাঁর জীবনে এনেছিল বিরাট পরিবর্তন। তিনি আত্মনিয়োগ করেছিলেন সারা ভারত জুড়ে সনাতন ধর্মের প্রচার এবং প্রসারে। কিন্তু ধর্ম প্রচারের কাজ করতে গিয়ে তিনি বুঝেছিলেন পরাধীন দেশে ধর্মের প্রকৃত বিকাশ কার্যত অসম্ভব। শিক্ষার এবং আত্মবিশ্বাসের অভাব এক্ষেত্রে বড়ো অন্তরায়। তাই মহর্ষি নগেন্দ্রনাথ ছাত্রদের চেতনায় বিকশিত করতে চেয়েছিলেন দেশাত্মবোধ। সেই ধারা বহন করেছিলেন তাঁর ত্যাগী শিষ্য ধ্যানপ্রকাশ ব্রহ্মচারীও।
জনাই ট্রেনিং হাই স্কুল এবং পরবর্তী সময়ে বালি ইংলিশ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করার সময় মহর্ষি নগেন্দ্রনাথ তাঁর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় বুঝেছিলেন দেশের কাজ করতে হলে সর্ব প্রথমে প্রয়োজন সর্বস্তরে শিক্ষার বিকাশ এবং ছাত্রদের চরিত্র গঠন। সেই উদ্দেশ্যেই তিনি শ্যামবাজার অঞ্চলে স্থাপন করেছিলেন পেট্রিয়টিক ইনস্টিটিউশন নামে একটি স্কুল। কলকাতার বিধান সরণি ও কৈলাস ঘোষ স্ট্রিটের সংযোগস্থলে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন পেট্রিয়টিক লাইব্রেরি। এখানে ছাত্রদের ভারতের সভ্যতা সংস্কৃতি সম্পর্কে শুধু অবহিত করা হতো না, দেশাত্মবোধেও দীক্ষিত করা হতো। এরই পাশাপাশি ছাত্রদের চরিত্র গঠনের জন্য তিনি আলোচনা সভার আয়োজন করতেন। ছাত্রদের চরিত্র গঠনের জন্য তিনি লিখেছিলেন ‘প্রতিজ্ঞা শতক’ নামে একটি পুস্তিকাও।
মহর্ষি নগেন্দ্রনাথের এবং পরবর্তী সময়ে ধ্যানপ্রকাশ ব্রহ্মচারীর এই আদর্শ অনুসরণ করে শ্রীশ্রীনগেন্দ্র মঠ এবং নগেন্দ্র মিশনে আবাসিক ছাত্রদের দিয়ে স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে এক নতুন মাত্রা আনেন মঠের প্রাক্তন আচার্য ডঃ রঘুপতি মুখোপাধ্যায়। তিনি প্রয়াত হলেও সেই ধারা আজও বহন করে চলেছেন মঠের বর্তমান এবং প্রাক্তন আবাসিক ছাত্ররা।
গতকাল ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন পর্বের পর সান্ধ্য অনুষ্ঠানে ছিল দেশাত্মবোধক সংগীত। সমবেত দেশাত্মবোধক সংগীত পরিচালনায় ছিলেন রাজা মুখোপাধ্যায়। এদিন বিভিন্ন পর্বে বিভক্ত সমগ্র অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন নগেন্দ্র মিশনের কোষাধ্যক্ষ সঞ্জয় ভট্টাচার্য। সহযোগিতায় ছিলেন শ্রীশ্রীনগেন্দ্র মঠের কোষাধ্যক্ষ দেবাশিস বোস।
এ প্রসঙ্গে শ্রীশ্রীনগেন্দ্র মঠের সম্পাদক ডঃ রবীন্দ্রনাথ কর জানান, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ক্ষেত্রে মহর্ষি নগেন্দ্রনাথ শিক্ষার বিস্তারে এবং ছাত্রদের চরিত্র গঠনে যে ভূমিকা নিয়েছিলেন তা ভোলার নয়। তাই আজও স্বাধীনতা দিবস উদযাপন মঠের আবাসিক ছাত্রদের মাধ্যমেই করা হয়।
মহর্ষিদেবের পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর প্রপৌত্রীর পুত্র ডঃ শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, মহর্ষি নগেন্দ্রনাথ এবং ধ্যানপ্রকাশ ব্রহ্মচারী স্বাদেশিকতার প্রচার এবং প্রসারে যে ভূমিকা নিয়েছিলেন সেই পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমাদের মঠে পালিত হয় স্বাধীনতা দিবস। এ বছরও সেই রীতি মেনেই ভারতের স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করা হয়েছে।