সোশ্যাল মিডিয়ার দাপটের যুগে মনকে কি নিয়ন্ত্রণে রাখা আদৌ সম্ভব? digital distraction তরুণ প্রজন্ম বিশেষত ছাত্রছাত্রীদের কতটা ক্ষতি করতে পারে? আলোকপাত করলেন নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন রেসিডেন্সিয়াল কলেজের প্লেসমেন্ট বিভাগের দায়িত্বে থাকা স্বামী ত্যাগীন্দ্রানন্দ মহারাজ।
গীতা – অধ্যায় ০৬ – শ্লোক ৩৪
চঞ্চলং হি মনঃ কৃষ্ণ প্রমাথি বলবদ্ দৃঢম্ ।
তস্যাহং নিগ্রহং মন্যে বায়োরিব সুদুষ্করম্ ॥
(হে কৃষ্ণ, মন অত্যন্ত অস্থির, চঞ্চল, প্রবল ও দুর্দমনীয়। আমার কাছে মনে হয়, বায়ুর চেয়েও মনকে নিয়ন্ত্রণ করা অধিক কঠিন।)
গীতা – অধ্যায় ০৬ – শ্লোক ৩৫
শ্রীভগবানুবাচ
অসংশয়ং মহাবাহো মনো দুর্নিগ্রহং চলম্ ।
অভ্যাসেন তু কৌন্তেয় বৈরাগ্যেণ চ গৃহ্যতে ॥
(শ্রীকৃষ্ণ বললেন: হে মহাবাহু কুন্তীপুত্র, তুমি যা বলছ তা সত্য; মনকে নিয়ন্ত্রণ করা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত কঠিন। কিন্তু অনুশীলন ও বৈরাগ্যের মাধ্যমে একে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।)
কথায় বলে, মানুষের মন বাতাসের আগে ছোটে। ভগবদ্গীতাতেও অর্জুনের গলায় সেই একই উদ্বেগ। তবে দিশা দেখিয়েছিলেন শ্রীকৃষ্ণ (Sri Krishna)। মনকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যে জীবনের অন্যতম বড় শর্ত। কারণ মন যোগ না হলে সমস্ত কাজই অসমাপ্ত থেকে যায়। কিন্তু বাইরের এতরকম হাতছানি, বিশেষত সোশ্যাল মিডিয়ার (Social Media) দাপটের যুগে মনকে কি নিয়ন্ত্রণে রাখা আদৌ সম্ভব? digital distraction তরুণ প্রজন্ম বিশেষত ছাত্রছাত্রীদের কতটা ক্ষতি করতে পারে? আলোকপাত করলেন নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন রেসিডেন্সিয়াল কলেজের প্লেসমেন্ট বিভাগের দায়িত্বে থাকা স্বামী ত্যাগীন্দ্রানন্দ মহারাজ (Swami Tyagendranath)।
তাঁর কথায়, “আজ যে প্রশ্নটা প্রতিটা মানুষের মনে, প্রতিটা ছাত্রের মনে ঘুরে বেড়ায়, সেই একই প্রশ্ন হাজার হাজার বছর আগে অর্জুন জানতে চেয়েছিলেন শ্রীকৃষ্ণের কাছে। বলেছিলেন, “হে কৃষ্ণ, মন অত্যন্ত অস্থির, চঞ্চল, প্রবল ও দুর্দমনীয়। আমার কাছে মনে হয়, বায়ুর চেয়েও মনকে নিয়ন্ত্রণ করা অধিক কঠিন।” শ্রীকৃষ্ণ উত্তর দিয়েছিলেন, “হে মহাবাহু কুন্তীপুত্র, তুমি যা বলছ তা সত্য; মনকে নিয়ন্ত্রণ করা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত কঠিন। কিন্তু অনুশীলন ও বৈরাগ্যের মাধ্যমে একে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।”
তাঁর মত, যেভাবে শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য শরীর চর্চা করতে হয়, সেভাবে মনকে স্থিতধী রাখতেও অনুশীলন দরকার। নিত্য অনুশীলনে মন একাগ্র হয়। বিবেকানন্দ বলেছিলেন, মনোযোগ একজন মানুষকে আরও পাঁচটা সাধারণ মানুষের থেকে আলাদা করতে পারে। অভ্যেস আর ছাড়তে শেখা এই দুই পাশাপাশি চললে মন বশে আসতে বাধ্য।
আমেরিকান মনোবিজ্ঞানী গ্লোরিয়া জ্যানেট মার্কের গবেষণার প্রসঙ্গটি তুলে স্বামী ত্যাগীন্দ্রানন্দ মহারাজ জানান, ‘অ্যাটেনশন স্প্যান’ (Attention Span) বইতে কয়েক দশকের গবেষণা লিপিবদ্ধ করেছেন। সেখানে গ্লোরিয়া জ্যানেট মার্ক প্রমাণ করেছেন, ডিজিটাল বিভ্রান্তির (digital distraction) কারণে মানুষের মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা ক্রমশ কমে যাচ্ছে। স্বামী ত্যাগীন্দ্রানন্দের কথায়, “কোনও ছাত্র খুব মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করছে। হঠাৎই মোবাইলে নোটিফিকেশন। সঙ্গে সঙ্গে দেখার ইচ্ছে কে আমাকে মনে করল? দেখার পর আবার আগের জায়গায় ফিরতে সময় লাগবে অন্তত ২৩ মিনিট ১৫ সেকেন্ড। ডিজিটাল দুনিয়ার এই হাতছানি এড়িয়ে যাওয়াই এখনকার ছাত্রদের কাছে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ।”
তিনি মনে করেন, একমাত্র ধ্যান এই ‘অ্যাটেনশনাল ব্লিঙ্কস’ বা মনোযোগের বিচ্যুতি কমাতে সাহায্য করে। শ্বাস-প্রশ্বাসের ওপর মনোযোগ নিবদ্ধ করে, মনের মধ্যে উদয় হওয়া চিন্তাগুলোতে জড়িয়ে না পড়ে একজন নির্লিপ্ত পর্যবেক্ষকের মতো আচরণ করার শক্তি অর্জন করা যায়। ২০১১ সালে হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল প্রকাশিত মাইন্ডফুলনেস ধ্যানের উপর একটি গবেষণা পত্রে দেখা গেছে যে, মাত্র কয়েক মিনিটের মাইন্ডফুলনেস মস্তিষ্কের গঠন পরিবর্তন করতে পারে এবং মস্তিষ্কের ধূসর পদার্থ বৃদ্ধি করে স্মৃতিশক্তি, ইচ্ছাশক্তি, আবেগ নিয়ন্ত্রণ এবং মনোযোগ বৃদ্ধি করতে পারে। এটি অ্যামিগডালার আকারও পরিবর্তন করে এবং কর্টিসল হরমোনের প্রবাহ হ্রাস করে, যা চাপ, উদ্বেগ, ভয় এই তিন অনুভূতিকেই নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করে।
