www.machinnamasta.in

ওঁ শ্রীং হ্রীং ক্লী গং গণপতয়ে বর বরদ সর্বজনস্ময়ী বশমানয় ঠঃ ঠঃ

July 2, 2025 6:07 am

এই সুরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যেরই (Surendranath Bhattacharjee) পুত্র স্বর্ণকণ্ঠশিল্পী ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য (Dhannajay Bhattacharjee)। সাধক শিল্পী পান্নালাল ভট্টাচার্য (Pannalal Bhattacharjee) যখন সাত মাসের মাতৃগর্ভে তখন হঠাৎই সুরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য প্রয়াত হন। পিতার এই অকাল মৃত্যুর পর পরিবারের দায় দায়িত্ব অনেক অল্প বয়সেই নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন দু ভাই - সুরকার প্রফুল্ল ভট্টাচার্য এবং স্বর্ণকণ্ঠশিল্পী ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য। সুরেন্দ্রনাথের অকাল মৃত্যুতে পরিবার বিপর্যস্ত হয়েছিল কিন্তু মা অন্নপূর্ণা তাঁর সন্তানদের নিয়ে স্বামী সুরেন্দ্রনাথের পায়রাটুঙির জমিদার বাড়িতে ফিরে যাওয়ার কথা একবারও ভাবেননি। এতোটাই ছিল তাঁরও আত্মমর্যাদা বোধ। এই দৃঢ়তা এবং আত্মমর্যাদাবোধ বহন করেছিলেন ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যও। ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যের এই আত্মমর্যাদা বোধের পরিচয় পেয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন স্বয়ং ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ও।

শিবানী ভট্টাচার্য বন্দ্যোপাধ্যায়

প্রবল আত্মমর্যাদা বোধ ছিল ভট্টাচার্য পরিবারের রক্তে। তাই পারিবারিক কলহের কারণে পায়রাটুঙির জমিদারি ছেড়ে হাওড়ার বালিতে চলে আসতে সামান্যতম দ্বিধা করেননি সুরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। এই দৃঢ়তা এবং আত্মমর্যাদা বোধ উত্তরাধিকার সূত্রে এসেছিল তাঁর সন্তানদের মধ্যেও।

এই ভট্টাচার্য পরিবার আসলে ভাদুড়ী। পৌরোহিত্যের কারণে এঁরা ভট্টাচার্য উপাধি পান। তবে এটাও শোনা যায় যে – বর্ধমানের মহারাজা এই পরিবারের কোনও এক পুরুষকে ভট্টাচার্য উপাধি প্রদান করেছিলেন।

এই পরিবার ছিল একই সঙ্গে দেবী সরস্বতী এবং দেবী লক্ষ্মীর আশীর্বাদে ধন্য। জমিদার পরিবারের সন্তান হলেও এঁরা সর্বদাই মগ্ন থেকেছেন শাস্ত্র চর্চা এবং সংগীত চর্চায়।

এই পরিবারেরই মহান সন্তান “The Levitating Saint” – ভাদুড়ী মহাশয় অর্থাৎ পরমহংস মহর্ষি নগেন্দ্রনাথও জমিদারির ঐশ্বর্য ছেড়ে দিয়ে নিমগ্ন হয়েছিলেন যোগ সাধনায়। শুধু যোগে নয়, সংগীতেও সিদ্ধি ছিল মহর্ষি নগেন্দ্রনাথের। তাঁর লিখিত এবং সুরারোপিত পরমার্থ সংগীতগুলি তারই প্রমাণ। সুরেন্দ্রনাথও তাঁর এই কাকার উত্তরাধিকার বহন করেছিলেন। সংগীতে রীতিমতো পারদর্শী ছিলেন সুরেন্দ্রনাথ। তাঁর স্পর্শে সুরে সুরে জীবন্ত হয়ে উঠতো কখনও সেতার, কখনও এস্রাজ। তাই শুধু আত্মমর্যাদা বোধ নয়, এক আশ্চর্য রকমের নির্মোহ মানসিকতা, সাঙ্গীতিক প্রজ্ঞা এবং ধর্মীয় চেতনাও ছিল এই পরিবারের রক্তস্রোতে।

এই সুরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যেরই (Surendranath Bhattacharjee) পুত্র স্বর্ণকণ্ঠশিল্পী ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য (Dhannajay Bhattacharjee)। সাধক শিল্পী পান্নালাল ভট্টাচার্য (Pannalal Bhattacharjee) যখন সাত মাসের মাতৃগর্ভে তখন হঠাৎই সুরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য প্রয়াত হন। পিতার এই অকাল মৃত্যুর পর পরিবারের দায় দায়িত্ব অনেক অল্প বয়সেই নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন দু ভাই – সুরকার প্রফুল্ল ভট্টাচার্য এবং স্বর্ণকণ্ঠশিল্পী ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য। সুরেন্দ্রনাথের অকাল মৃত্যুতে পরিবার বিপর্যস্ত হয়েছিল কিন্তু মা অন্নপূর্ণা তাঁর সন্তানদের নিয়ে স্বামী সুরেন্দ্রনাথের পায়রাটুঙির জমিদার বাড়িতে ফিরে যাওয়ার কথা একবারও ভাবেননি। এতোটাই ছিল তাঁরও আত্মমর্যাদা বোধ। এই দৃঢ়তা এবং আত্মমর্যাদাবোধ বহন করেছিলেন ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যও। ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যের এই আত্মমর্যাদা বোধের পরিচয় পেয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন স্বয়ং ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ও।

প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের জন্য একবার এক বিরাট বিচিত্রানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। বাংলা সংগীতের স্বর্ণযুগের সমস্ত নক্ষত্র শিল্পীরাই সে অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করার জন্য আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যও। কিন্তু তিনি স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর চিঠি না পেলে তিনি গাইতে যাবেন না। স্বাভাবিকভাবেই এ কথা শুনে উদ্যোক্তারা অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। সবচেয়ে বড়ো সমস্যা ছিল প্রধানমন্ত্রীর চিঠি আনা। এদিকে সেই সময় ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য জীবন্ত কিংবদন্তি। তাঁকে ছাড়া অনুষ্ঠান ভাবাই যেত না। সুতরাং উদ্যোক্তারা পড়লেন মহা সমস্যায়। শেষ পর্যন্ত এই সমস্যার সমাধান করলেন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় (Dr Bidhan Chandra Roy)।

ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যের গানে মুগ্ধ ছিলেন ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ও। ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যের সঙ্গে দেখা হলেই বিধানচন্দ্র শুনতে চাইতেন ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যের গাওয়া ‘‘গয়া গঙ্গা প্রভাসাদি” গানটি। ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য অনুষ্ঠানে গান গাইতে যাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর চিঠি চেয়েছেন শুনে বিধানচন্দ্র রায় অবাক হয়ে গেলেন। এক শিল্পীর এই আত্মমর্যাদা বোধ তাঁকে মুগ্ধ করল। তিনি বললেন, ‘‘এ ছেলের গাটস আছে! বাঙালির এই চরিত্রটারই বড় অভাব। ওকে বল গান গাইতে। আমি জওহরলালের চিঠি আনিয়ে দেব।’’ শেষ পর্যন্ত চিঠি এল প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর। গানও গাইলেন ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য।

বিধানচন্দ্র রায় তাঁর শেষ জীবনে একবার ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যকে গাইতে ডেকেছিলেন তাঁর বাড়িতে। কিন্তু সেদিন পুত্রের অসুস্থতার জন্য আমন্ত্রণ রক্ষা করতে পারেননি ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য। আর গান শোনানোও হয়নি তাঁর। ডা. বিধানচন্দ্র রায় যে তখন চির বিদায় নিয়েছেন!

লেখিকার মেজো কাকা স্বর্ণকণ্ঠশিল্পী ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য।

administrator

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *