ড. শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
তিনি নবদুর্গার তৃতীয় রূপ। দুর্গাপ্রদীপ টীকাতে আছে তাঁর কথা। সেখানে বলা হয়েছে চন্দ্রবৎ নির্মল ঘণ্টা যাঁর অথবা যিনি চন্দ্রের চেয়েও বেশি লাবণ্যময়ী তিনিই চন্দ্রঘণ্টা।
তাঁর মস্তকে ঘণ্টার আকারবিশিষ্ট একটি অর্ধ্বচন্দ্র শোভিত। তাই তাঁর নাম চন্দ্রঘণ্টা। তবে আমরা এ কথাও পাচ্ছি যে – “চন্দ্র ঘণ্টা যস্যাঃ” – যাঁর হাতে ধরা ঘণ্টা প্রচণ্ড শব্দ উৎপাদন করে তিনিই চন্দ্রঘণ্টা। বলা হয়, মহাবিশ্বের মূলে আছে যে শব্দব্রহ্ম বা নাদব্রহ্ম – তা দেবীর এই মহাঘণ্টা ধ্বনি থেকেই উদ্ভূত হয়েছে। অবশ্য তিনি ‘চণ্ডঘণ্টা’ বা ‘চিত্রঘণ্টা’ নামেও বন্দিতা।
দেবীর তৃতীয় চক্ষু সর্বদা উন্মীলিত। দেবী স্বর্ণবর্ণা। বিশ্বেশ্বরী, বিশ্বেশবন্দ্যা। সিংহবাহিনী। অবশ্য কোথাও কোথাও তিনি ব্যাঘ্রবাহনা। দেবী দশভুজা। তাঁর দশ হাতে শোভিত অস্ত্র এবং শস্ত্র। দেবীর সঙ্গে রয়েছেন শিব। চন্দ্রেশ্বর রূপে। কারণ – “শিব এব কেবলঃ”।
আশ্বিন এবং চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের নবরাত্রির তৃতীয় দিনে দেবী আরাধনা করা হয়। বলা হয় এই দেবীর আরাধনা করলে সাধকের সমস্ত ইচ্ছা পূর্ণ হয়। দৃঢ় হয় ভক্তি। আবার সাধক পরাক্রমও লাভ করেন। শুধু তাই নয় – অকাল মৃত্যুর ভয় দূর হয়, সাংসারিক দুঃখ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, ইহলোক ও পরলোকের মঙ্গল সাধিত হয়। আর সাধক যদি তাঁর মনকে মণিপুর চক্রে প্রবেশ করাতে পারেন তাহলে তো কথাই নেই। তিনি দিব্যদর্শনের সৌভাগ্য অর্জনে ধন্য হন। সাধক তখন দর্শন পান দেবীর সেই রূপের :
” সহস্রনয়না রামা সহস্রকরসংযুতা।
সহস্রবদনা রম্যা ভাতি দুরাদসংশয়ম্।।”
-অলৌকিক দর্শন শুধু নয়, দেবীর কৃপায় অলৌকিক শ্রবণেরও অধিকারী হন তিনি। এই কারণেই বলা হয় এই দেবীর আরাধনা সর্বফলপ্রদ।