দেবীমাহাত্ম্যম্ গ্রন্থে “চণ্ডী” বা “চণ্ডিকা” দেবীকে সর্বোচ্চ দেবীর মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। কোবার্নের মতে,চণ্ডী বা চণ্ডিকা হলেন ভয়ংকরী ও ক্রোধোন্মত্তা দেবী। দেবী চণ্ডীর সমমনস্কা কন্যা হলেন সর্পদেবী মনসা। উল্লেখ্য, প্রাচীন সংস্কৃতে “চণ্ডিকা” শব্দটি কোথাও পাওয়া যায় না। বৈদিক সাহিত্যেও এই শব্দটির কোনো উল্লেখ নেই। তবে রামায়ণ ও মহাভারতেও শব্দটির উল্লেখ না থাকলেও, একটি স্তোত্রে “চণ্ড” ও “চণ্ডী” কথাদুটি বিশেষণ হিসেবে পাওয়া যায়। প্রাচীন সংস্কৃত রচনায় চণ্ডী কথাটির অনুপস্থিতির কারণ হল এই দেবী হিন্দুধর্মের অব্রাহ্মণ্য শাখার দেবতা। ইনি প্রকৃতপক্ষে বঙ্গদেশের অনার্য আদিবাসী সমাজের দেবী। দেবীমাহাত্ম্যম্ গ্রন্থে চণ্ডী বা চণ্ডিকা শব্দদুটি মোট ২৯ বার ব্যবহৃত হয়েছে। অনেক গবেষক মনে করেন এই দেবীর উৎস প্রাচীন বঙ্গদেশের শাক্ত সম্প্রদায়ের তন্ত্র সাধনায়। “চণ্ডী” শব্দটি দেবীর সর্বাপেক্ষা পরিচিত অভিধা। দেবীমাহাত্ম্যম্ গ্রন্থে চণ্ডী, চণ্ডিকা, অম্বিকা ও দুর্গা শব্দগুলি সমার্থক শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত।
দেবীমাহাত্ম্য গ্রন্থের দ্বিতীয় অধ্যায়ে দেবীর উৎস ব্যাখ্যা করা হয়েছে: “মহিষাসুরের নেতৃত্বে অসুরদের সঙ্গে দীর্ঘ যুদ্ধের পর দেবতারা পরাজিত হলে তাঁরা ব্রহ্মাকে পুরোধা করে বিষ্ণুসকাশে উপস্থিত হন, সেখানে তখন মহাদেবও অবস্থান করছিলেন। মহিষাসুরের কাছে তাঁদের নিগৃহীত হওয়ার বিবরণ দেবাদিদেব ও নারায়ণের ক্রোধাগ্নি প্রজ্জ্বলিত করে,যা গগনস্পর্শী তেজঃপুঞ্জের আকারে একত্রিত হয়। এর সঙ্গে যোজিত হয় ব্রহ্মা ও সমবেত অন্যান্য দেবতাদের তেজ। দেবগণের সেই শক্তি সম্মিলিত হয়ে এক মহাজ্যোতির সৃষ্টি করলে দশদিক আলোকে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। সেই অভূতপূর্ব ত্রিলোক-উদ্ভাসী আলোকবর্তী ক্রমে এক নারীমূর্তি ধারণ করে। এভাবেই দেবতাদের দেহসঞ্জাত তেজঃপুঞ্জ হতে মহাদেবীর উৎপত্তি হয়।”