আজ, সোমবার বুদ্ধপূর্ণিমা। শুধু বৌদ্ধধর্মের মানুষদের কাছেই নয়, হিন্দু ধর্মের মানুষদের কাছেও এই দিনটি খুবই পবিত্র। বৈশাখী পূর্ণিমাতেই যিশু খ্রিস্টের জন্মের ৫৬৩ বছর আগে নেপালের লুম্বিনীতে জন্নগ্রহণ করেছিলেন বুদ্ধদেব। সন্ন্যাস গ্রহণের আগে মহারাজ শুদ্ধোদন ও মা যশোধরার এই পুত্রের নাম ছিল সিদ্ধার্থ। তিনি ক্ষমা, প্রেম ও অহিংসার বাণী প্রচার করেন। হিন্দুধর্মে গৌতম বুদ্ধকে বিষ্ণুর দশাবতারের অন্যতম বলে মনে করা হয়। ত্রিস্মৃতি বিজড়িত। এই পবিত্র তিথিতে বুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেছিলেন, বুদ্ধত্ব করেছিলেন এবং মহাপরিনির্বাণ লাভ করেছিলেন। এই দিনে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীগণ স্নান করেন, শুভ্রবস্ত্র পরিধান করে মন্দিরে বুদ্ধের বন্দনায় রত থাকেন। ভক্তগণ প্রতিটি মন্দিরে বহু প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত করেন, ফুলের মালা দিয়ে মন্দিরগৃহ সুশোভিত করে বুদ্ধের আরাধনায় নিমগ্ন হন। এছাড়া বৌদ্ধগণ এই দিনে বুদ্ধ পূজার পাশাপাশি পঞ্চশীল, অষ্টশীল, সূত্রপাঠ, সূত্রশ্রবণ, সমবেত প্রার্থনা করে থাকেন।
শাক্য বংশের রাজপুত্র হয়েও সংসার ত্যাগ করে তিনি সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। কঠোর কৃচ্ছসাধন করে তিনি তপস্যা করেন। মনে করা হয়, রাজপুত্র সিদ্ধার্থ ছোটবেলা থেকে জীবনের দুঃখ-কষ্টের বিষয়ে অজ্ঞান ছিলেন। ২৯ বছর বয়সে তিনি প্রথম রাজপ্রাসাদের বাইরে বেরিয়ে অসুস্থ, জরাগ্রস্ত ও শবদেহ দেখে জীবনের কঠোর বাস্তব সম্পর্কে অবহিত হন। এর ফলে সাংসারিক সুখ সম্পর্কে সম্পূর্ণ উদাসীন হয়ে আত্মপোলব্ধি করতে তিনি প্রাসাদা ত্যাগ করেন। এরপর বোধি অর্থাৎ জ্ঞান লাভ করে তিনি বুদ্ধ হন। আমাদের দেশে বুদ্ধগয়াতে এই দিনে বিশেষ উপাসনার আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া থাইল্যান্ড, চিন, কম্বোডিয়া, নেপাল, তিব্বত ও শ্রীলঙ্কায় বুদ্ধ পূর্ণিমা বিশেষ উৎসাহের সঙ্গে পালিত হয়। এই দিনটি দান-ধ্যান করে পালন করেন অনেকে।
আজকের দিনে আমরা গৌতম বুদ্ধের কয়েকটি মহান বাণীকে স্মরণ করবো –
- তোমার কাজই তোমার চিন্তা-ভাবনার পরিচয় দেয়।
- প্রদীপ যে ভাবে নিজেকে জ্বালায়, সেই ভাবে জ্ঞান ও শান্তির আলোয় নিজেকে প্রজ্জ্বলিত করুন।
- যে ব্যক্তি নিজের চিন্তা-ভাবনা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, তিনিই সত্যিকারের বিজয়ী।
- এই জগতে সবই সাময়িক, তাই কোনও কিছু আঁকড়ে না ধরে ছাড়তে শেখা জরুরি।
- যে শান্তি তোমার ভেতর থেকে আসে, তা গোটা দুনিয়ায় শান্তি নিয়ে আসতে পারে।
- জীবনে দুঃখ থাকবেই, কিন্তু নিজের ভেতরের দুঃখ দূর করার ক্ষমতা আমাদের মধ্যেই আছে।
- যে ব্যক্তি অন্যকে ক্ষমা করতে পারেন, তিনিই আসলে জিতে যান।