মিথিলার সীতামারী মহকুমার বিসফি গ্রামে এক বিদগ্ধ শৈব ব্রাহ্মণ পরিবারে তাঁর জন্ম। তাঁদের পারিবারিক উপাধি ছিল ঠক্কর বা ঠাকুর। তাঁর পিতার নাম গণপতি ঠাকুর। বংশপরম্পরায় তাঁরা মিথিলার রাজপরিবারে উচ্চপদে চাকরি করতেন। বিদ্যাপতি নিজেও মিথিলারাজ দেবসিংহ ও শিবসিংহের সভাসদ ছিলেন। শ্রীহরি মিশ্রের অধীনে বিদ্যাপতি শিক্ষাগ্রহণ করেন। শস্ত্র, শাস্ত্র, রাজনীতি এবং সংস্কৃত সাহিত্যে তাঁদের পারিবারিক অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বিদ্যাপতি মৈথিলী, অবহট্ঠ ও সংস্কৃত ভাষায় বহু গ্রন্থ ও পদ রচনা করেন। শৈব বংশে জন্ম বলে তিনি বহু শৈবসঙ্গীতও রচনা করেন। কিন্তু ব্রজবুলিতে রচিত রাধাকৃষ্ণ-বিষয়ক পদগুলিই তাঁর শ্রেষ্ঠ কীর্তি। সুমধুর এই বৈষ্ণব পদাবলির জন্যই তিনি বাংলা সাহিত্যে অমর হয়ে আছেন।
মৈথিলী ভাষায় রচিত বিদ্যাপতির এই পদসঙ্গীত কালক্রমে বঙ্গদেশে বিস্তার লাভ করে এবং স্থানীয় ভাষার প্রভাব ও কীর্তন গায়কদের দ্বারা বিকৃত ও রূপান্তরিত হয়। এ থেকেই ব্রজবুলি নামে আখ্যায়িত এক শ্রেণির বৈষ্ণব পদভাষার উদ্ভব ঘটে। প্রধানত বাংলা ও মৈথিলী ভাষার মিশ্রণে এটি গঠিত হলেও এতে কিছু হিন্দি শব্দও অনুপ্রবেশ করে। উনিশ শতক পর্যন্ত এই ব্রজবুলিতে বৈষ্ণব পদ রচিত হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এ ভাষায়ই ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী রচনা করেন। চৈতন্যদেব স্বয়ং বিদ্যাপতির পদ মুগ্ধ হয়ে শুনতেন। কীর্তন ও পদসঙ্গীত ছিল চৈতন্য প্রবর্তিত বৈষ্ণবধর্মের মূল স্তম্ভস্বরূপ। তাই চৈতন্যদেব আস্বাদন করতেন বলেই বিদ্যাপতির পদের মর্যাদা ও বিস্তার বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। পরবর্তীকালে একাধিক বাঙালি ও অবাঙালি কবিও ‘বিদ্যাপতি’ ভণিতায় পদ রচনা করেন। বিদ্যাপতি কবিতা ছাড়াও আখ্যায়িকা, ইতিহাস, ভূ-বৃত্তান্ত, ধর্ম ও ন্যায়শাস্ত্র বিষয়ক গ্রন্থ রচনা করেছেন।