মনসাকে অনেকেই লৌকিক দেবী বললেও বেদের সঙ্গে মনসার একরা সম্পর্ক আছে। তবে মধ্যযুগে অনেক পুজোর মতোই মনসা পুজো কিন্তু প্রধানত ভয়ের থেকে সৃষ্টি হয়েছে। পুরাণ অনুযায়ী, তিনি কশ্যপ ঋষির কন্যা বা শিব ও চণ্ডীর কন্যা এবং জরৎকারু ঋষির স্ত্রী ও আস্তিক ঋষির মা। মনসামঙ্গল কাব্যের মাধ্যমে তাঁর পূজা মর্ত্যলোকে প্রচার লাভ করে, যেখানে চাঁদ সদাগরের মতো শিবভক্তও তাঁকে পূজা করতে বাধ্য হয়েছিল। তাঁর উপাসনা প্রধানত সাপের কামড় থেকে রক্ষা এবং উর্বরতা ও সমৃদ্ধির জন্য করা হয়।
- মনসা পূজার উৎপত্তি ও ইতিহাস –
পুরাণ অনুযায়ী জন্ম: মনসা দেবী কশ্যপ ঋষির মানসপুত্র অথবা শিব ও চণ্ডীর কন্যা। যখন সাপের উৎপাত শুরু হয়, তখন কশ্যপ ঋষি নিজের মন থেকে তাঁর জন্ম দেন, তাই তাঁর নাম হয় মনসা। পূজার প্রচলন: মনসামঙ্গল কাব্যে বর্ণিত আছে যে, মনসাকে মর্ত্যলোকে পূজা পেতে এবং স্বর্গে স্থান করে নিতে হয়। এর জন্য তিনি চাঁদ সদাগরের মতো একজন ঘোরতর শিবভক্তকে পূজা করতে বাধ্য করেন। পৌরাণিক কাহিনী: চাঁদ সদাগর মনসার পূজা না করায়, মনসা তাঁর পুত্র লখিন্দরকে সাপের কামড়ে মেরে ফেলেন। বেহুলা তাঁর স্বামীর জীবন ফিরে পেতে মনসার পূজা করেন এবং অবশেষে চাঁদ সদাগরেরও মনসা পূজা করতে হয়। এই ঘটনার মাধ্যমে মনসার পূজা প্রচার লাভ করে। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: ইতিহাসবিদদের মতে, মনসা দেবীর বর্তমান রূপে পূজা দশম-একাদশ শতকে শুরু হয়। এই পূজা মূলত গ্রামীণ জীবনে সাপের ভয় থেকে বাঁচতে এবং উর্বরতা ও সমৃদ্ধি লাভের জন্য প্রচলিত ছিল। - মনসা দেবীর পরিচয় ও উপাসনা সর্পদেবী: মনসা মূলত সর্পদেবী হিসেবে পরিচিত, যিনি সাপের কামড় থেকে রক্ষা করেন।
কৃষি ও সমৃদ্ধির দেবী: তাঁকে উর্বরতা এবং সমৃদ্ধির দেবী হিসেবেও পূজা করা হয়। উপাসনার স্থান: মূলত পূর্ব ভারত, বিশেষ করে বাংলা, আসাম, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড এবং উত্তর-পূর্ব ভারতে তাঁর পূজা প্রচলিত। পূজার সময়: শ্রাবণ মাসের সংক্রান্তিতে মনসা পূজা করা হয়। এইভাবে, মনসা দেবীর পূজা একটি লৌকিক পূজা হিসেবে শুরু হয়ে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুরাণের মাধ্যমে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
