তিনি ছিলেন হিন্দি সিনেমার আধুনিক যুগের সূচনা পর্বের অন্যতম একজন আইকন। তিনি থামতে জানেন না। তাঁর একটাই সুর – এগিয়ে চলো। কিন্তু একটা জায়গায় এসে তো থামতেই হয়। আমাদের সকলকে কষ্ট দিয়ে সোমবার বিদায় নিলেন হিন্দি ছবির ‘হি-ম্যান’ ধর্মেন্দ্র। ৯০ হওয়ার ঠিক এক মাস আগেই বিদায় নিলেন। যে বিদায় বলিউডের অন্যতম একশন হিরোর, যে বিদায় পঞ্জাবের সেই কৃষক পরিবারের ডাকাবুকো ছেলেটির, যার বলিউড স্বপ্ন উড়ান ছুঁয়েছিল। পুরো নাম ধর্মেন্দ্র সিং দেওল। বলিউডের হিম্যান আর শোলের বীরু। তিনি সুঠাম, পেশিবহুল চেহারায় ছয়, সাতের দশকের সিনেমার পর্দায় এসে দাঁড়ালে পুরুষরা হতেন অনুপ্রাণিত আর নারীরা দুমদাম প্রেমে পড়তেন। পঞ্জাবের লুধিয়ানার কৃষক পরিবারের সন্তান। যৌবনকাল থেকেই তাঁর টল ডার্ক হ্যান্ডসাম চেহারার জন্য পাড়া প্রতিবেশিরা সিনেমার নায়ক বলেই ডাকতেন।
সময়টা ছয়ের দশক জনপ্রিয় একটি ফিল্ম ম্য়াগাজিনের ‘নিউ ট্য়ালেন্ট’ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ছিলেন ধর্মেন্দ্র। বলাই বাহুল্য, তাঁর স্টারসুলভ চেহারা জিতে নিয়েছিল বিচারকদের মন। প্রথম প্রতিযোগিতাতেই প্রথম হলেন ধর্মেন্দ্র। ব্যস, প্রতিযোগিতার মঞ্চ থেকে সোজা সিনেমায় সুযোগ। প্রথম ছবি ১৯৬১ সালের দিল ভি তেরা, হাম ভি তেরে। প্রথম ছবি থেকেই ধর্মেন্দ্র বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তিনি লম্বা রেসের ঘোড়া। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ধর্মেন্দ্রকে। সুরত অউর সিরাত, বন্দিনী, দিলনে ফির ইয়াদ কিয়া, অনপড়, পুজা কে ফুল, আঁখে, ফুল অউর পত্থর, আয়া মিলন কি বেলা, আয়া সাওয়ান ঝুমকে, মেরে হামদম মেরে দোস্ত, একের পর এক সুপারহিট ছবি। কখনও পুরোদস্তুর প্রেমিক হিরো, তো কখনও অ্য়াকশনপ্যাকড নায়ক। সবেতেই বক্স অফিসকে হাতের মুঠোয় নিয়েছিলেন। যার প্রমাণ হেমা মালিনীর সঙ্গে জুটি বেঁধে সীতা অউর গীতা এবং অমিতাভের সঙ্গে শোলে। শোলের জয়-ভীরু তো বলিউডের আইকন।
শুধু সিনেমার পর্দা নয়, ধর্মেন্দ্র বাস্তব জীবনও ছিল রঙিন। ১৯৫৪ সালে ধর্মেন্দ্রর বাবা-মা ধর্মেন্দ্রর সঙ্গে প্রকাশ কর নামক উনিশ বছর বয়সী এক তরুণীর বিয়ে দেন, তখন ধর্মেন্দ্রর বয়সও ছিল উনিশ, এই প্রকাশ কর এবং ধর্মেন্দ্রর চারজন সন্তান হয়, দুই ছেলে সানি দেওল এবং ববি দেওল মেয়ে বিজেতা এবং অজিতা। দুই ছেলে বলিউডে পা দিলেও, মেয়েরা সিনেমার থেকে দূরে থেকেছেন। তবে বলিউডে পা রাখার পর, সিনেপর্দার সঙ্গে সঙ্গে বাস্তব জীবনেও সুপারহিট হয় ধর্মেন্দ্র ও হেমার জুটি। শোনা যায়, ১৯৮০ সালে গোপনে হেমা মালিনীকে বিয়ে করেছিলেন ধর্মেন্দ্র। যদিও প্রথম স্ত্রী প্রকাশ করকে তিনি ডিভোর্স দিতে চাননি। এমনকী, শেষ জীবনে প্রথম স্ত্রীর কাছেই ছিলেন ধর্মেন্দ্র। অন্যদিকে, হেমা ও ধর্মেন্দ্রর দুই কন্যা সন্তান এষা দেওল ও আহানা দেওল। আগামী ডিসেম্বর মাসে ৯০ বছরে পা রাখতেন ধর্মেন্দ্র। ৯০ বছর বয়স হলেও, বলিউডে এখনও দাপটের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছিলেন। জয়া বচ্চন ও শাবানা আজমির সঙ্গে জুটি বেঁধে করণ জোহরে রকি অউর রানি কি প্রেমে কাহানি ছবিতে তো তাঁর অভিনয় সিনেমার পর্দায় ম্যাজিক তৈরি করেছিল। ধর্মেন্দ্র প্রয়াণ স্বাভাবিক ভাবেই বলিউডের একটি যুগের অবসান। বলিউডের হিম্যানকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ গোটা দেশ।
