উত্তর ২৪ পরগনা জেলার খড়দা তথা পানিহাটিকে বলাহয় ‘মন্দির নগরি’। গঙ্গার পূর্বপ্রান্তে একদম খড়দা থেকে পানিহাটি পর্যন্ত অজস্র মন্দির আছে যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের ভিড় হয়। বহু দূর থেকে অনেক মানুষ এই মন্দির দর্শনে আসেন। তেমনই কয়েকটি মন্দির হলো –
১) হলদে কালীবাড়ি: ইতিহাস বলছে মন্দিরের বয়স ৩২৯ বছর। এলাকার তৎকালীন প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তি ঈশান চক্রবর্তী’র জামাই ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় ১৬৯৪ সালে মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন বলে জানা যায়। দেখলাম কালী পুজো উপলক্ষ্যে মন্দিরের গ্রিল রঙ করা হচ্ছে। কথা হল সুদীপ্ত ভৌমিকের সঙ্গে, তিনি মন্দিরের বর্তমান উত্তরাধিকারীদের আত্মীয়। তাঁর কথায় “মন্দিরে কালী দক্ষিণা কালী, আনন্দময়ী।” ইতিহাসের অনুসন্ধান করে জানলাম, মন্দির প্রতিষ্ঠার সময় কাশীধাম থেকে কষ্টিপাথরের কালী নিয়ে আসা হয়েছিল।
২) ত্রাণনাথবাবুর কালী মন্দির: এই কালী মন্দিরে যে বিষয়টা সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয়, তা হল মন্দিরের স্থাপত্যশৈলী। এমন পঞ্চরত্ন মন্দির আমি অন্তত কম দেখেছি। মন্দিরের কালী মূর্তি নিয়ে দু’টি কিংবদন্তি রয়েছে, ত্রয়োদশ শতকের গোড়ায় বেড়াচাঁপার রাজা চন্দ্রকেতু পানিহাটি অঞ্চলে গড় বা দুর্গ তৈরি করেন। দুর্গের মধ্যে মন্দির গড়ে করে মা ভবানী বা কালীর মূর্তি প্রতিষ্ঠা তৈরি করে পুজো করতেন। পরবর্তীতে মুসলমান আক্রমণের সময় মূর্তিটি চুরি যায় বলে শোনা যায়। দীর্ঘদিন ওই মূর্তি বাগবাজারে গঙ্গোপাধ্যায় পরিবারের কাছে ছিল। সেই মূর্তির খোঁজ পান পানিহাটির ত্রাণণাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। পানিহাটিতে গঙ্গার ধারে নতুন করে মন্দির নির্মান করে মায়ের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে নিয়মিত পুজোর বন্দোবস্ত করেন তিনি।
৩) সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির: পানিহাটি মহোৎসব তলা থেকে সোজা কয়েক পা হাঁটলেই দেখা মিলবে সিদ্ধেশ্বরী কালীর। তবে কালী পুজো উপলক্ষ্যে মূর্তির অঙ্গরাগ চলছে, ফলে মূর্তির দেখা পাওয়া যায়নি। মন্দিরের গর্ভগৃহের বন্ধ দরজার সামনে সিদ্ধেশ্বরীর একটি ছবি রাখা রয়েছে, তারই দেখা মিলল। কথা হল মন্দিরের পুরোহিত শম্ভুনাথ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। এই মুখোপাধ্যায় বংশই বিগত এক-দেড়শো বছর যাবৎ মন্দিরের দায়িত্ব সামলাচ্ছে। শম্ভুনাথবাবু জানালেন, তাঁদের আদি নিবাস ছিল কামারপুকুরে কিছু দূরে অবস্থিত শালিঞ্চা গ্রাম। তাঁর পিতামহ পরাণকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় পানিহাটিতে আসেন। তখন থেকেই তাঁদের পরিবার সিদ্ধেশ্বরীর পুজোর দায়িত্ব পালন করছেন।
