www.machinnamasta.in

ওঁ শ্রীং হ্রীং ক্লী গং গণপতয়ে বর বরদ সর্বজনস্ময়ী বশমানয় ঠঃ ঠঃ

November 22, 2025 1:30 pm
maa laxmi

তাঁর অসংখ্য নাম। তাঁর এইসব অসংখ্য নামের মধ্যে শ্রী এবং লক্ষ্মী সবচেয়ে প্রসিদ্ধ। শ্রী ও লক্ষ্মী আসলে দুই পৃথক দেবী ছিলেন। কিন্তু তাঁরা পরে মিলেমিশে একাকার হয়ে যান। শ্রীসূক্তে তো শ্রী এবং লক্ষ্মী অভিন্ন। গৃহস্থ বাঙালি বাড়িতে প্রতি বৃহস্পতিবার তাঁর পুজোর আয়োজন করা হয়। কিন্তু এই দেবী লক্ষ্মীর পুজোর জন্য কোজাগরী পূর্ণিমা একটি বিশেষ তিথি। ধূমধামে এই পুজোর মাহাত্ম্য এবং বিস্তার প্রতিদিনের বা প্রতি বৃহস্পতিবারের লক্ষ্মীপুজোর থেকে আলাদা।

ড.শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

ঋগ্বেদে শ্রী এবং লক্ষ্মী শব্দের উল্লেখ আছে। তবে দেবী – রূপ নেই। যজুর্বেদে শ্রী অবশ্য দেবী। শতপথ ব্রাহ্মণে বলা হয়েছে, শ্রী প্রজাপতি থেকে সঞ্জাত। ইনি সৌন্দর্য এবং সমৃদ্ধির দেবী। বাজসনেয়ী সংহিতাতে আবার লক্ষ্মী এবং শ্রী আদিত্যের দুই পত্নী। রামায়ণে লক্ষ্মী অথবা শ্রী বিষ্ণুর পত্নী। মহাভারতের শ্রী ভাগ্যদেবী। তিনিই ভগবান শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রী এবং প্রদ্যুম্ন জননী। লক্ষ্মী তন্ত্র ও পদ্ম সংহিতায় লক্ষ্মী বিষ্ণু-নারায়ণের শক্তি। আবার ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে আছে, প্রকৃতি কৃষ্ণের আজ্ঞায় পঞ্চ রূপে বিভক্ত হন। এঁদের মধ্যে দুর্গা, সরস্বতী, সাবিত্রী এবং রাধার সঙ্গে লক্ষ্মীও আছেন।

দেবী পীত বর্ণের। তাঁর আসন পদ্ম। তিনি তাঁর হাতেও পদ্ম ধারণ করেন। এছাড়াও দেবীর হাতে শোভিত হয় কখনও শঙ্খ, কখনও বা গদা। অবশ্য বিষ্ণু ধর্মোত্তরের মতে দেবী কৃষ্ণবর্ণের। দেবীর অবয়ব কুমারীর মতো। তাঁর চার হাত। বলা হয় এই চারটি হাত বোঝায় – ধর্ম, কর্ম, অর্থ ও মোক্ষ।

এই দেবী লক্ষ্মীকে কখনও বলা হয়েছে প্রসূতি গর্ভে দক্ষ কন্যা, কখনও বা বলা হয়েছে খ্যাতির গর্ভে ভৃগুর কন্যা। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে আছে, গণেশকে দেবী লক্ষী ক্ষীরোদ সমুদ্রজাত শ্রেষ্ঠ রত্ন খচিত বলয় প্রদান করেছিলেন। মার্কণ্ডেয় পুরাণে আছে, গুপ্ত রূপী দেবী তিনটি রূপে প্রকাশিত – লক্ষ্মী, মহাকালী এবং সরস্বতী।

দুর্বাসা মুনির অভিশাপে ইন্দ্র লক্ষ্মী ভ্রষ্ট হলে দেবতারা অসুরদের কাছে পরাজিত হয়ে স্বর্গভ্রষ্ট হন। পরে সমুদ্র মন্থন কালে দেবী আবির্ভূত হলে বিষ্ণু মায়া বিস্তার করে দেবী লক্ষ্মীকে গ্রহণ করেন।

বলা হয়, এই দেবী হচ্ছেন বিষ্ণু শক্তির সৃজনশীল রূপ। জগৎ রূপে যেহেতু তিনি লক্ষ্যমানা – তাই তিনি লক্ষ্মী। দেবী সৃষ্টিরূপিণী। তাই সৃজনী শক্তির প্রতীক পদ্মের সঙ্গে তিনি সংশ্লিষ্ট। আবার ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে বলা হয়েছে, তিনি সর্ব প্রাণী এবং দ্রব্যের শোভাস্বরূপ।

সাধারণ ভাবে বাঙালির ঘরে লক্ষ্মীপুজো সকাল থেকেই করা হয়। কিন্তু কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে রাত্রি জাগরণ। কারণ: “নিশীথে বরদা লক্ষ্মীঃ জাগরত্তীতিভাষিণী/তস্মৈ বিত্তং প্রযচ্ছামি অক্ষৈঃ ক্রীড়াং করোতি যঃ।” প্রচলিত বিশ্বাস, এই পূর্ণিমা রাতে দেবী পৃথিবী পরিক্রমায় বের হন। এই কোজাগরী পূর্ণিমা রাতে যিনি না ঘুমিয়ে জেগে থাকেন এবং পাশাখেলা করেন তাঁকে মা লক্ষ্মী কৃপা করেন। তাই দেবী লক্ষ্মীর আগমন প্রতীক্ষায় এদিন সারারাত ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালান হয়।

এই বিষ্ণুমায়া লক্ষ্মীই মহামায়া। তাঁর কৃপা পেলে ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষ – সবই পাওয়া যায়। তিনি যে চতুর্বর্গ ফলদায়িনী।

administrator

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *