বাংলায় বারো মাসে তেরো পার্বন। তার অন্যতম বিষয় দুর্গাপূজা। আবার এই দুর্গাপূজার মধ্যে আছে কত বৈচিত্র। তেমনই এক পুজোর কথা আজ আপনাদের শোনাবো। “আশ্বিনের শারদ প্রাতে, বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জির…” বীরন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের বলিষ্ঠ কন্ঠে শুনলেই মনে হয় সত্যি এসে গিয়েছে দুর্গাপুজো। হাতে মাত্র ৬ দিন। তবে এই বাংলাতেই এমন এক জায়গা আছে যেখানে কিন্তু পুজো শুরু হয়ে যায় মহালয়া থেকেই। আবার পুজো শেষও হয়ে যায় এই মহালয়ায়। দামোদর নদের তীরে পশ্চিম বর্ধমানের বার্নপুরের ধেনুয়া গ্রাম। সেখানেই নদীর তীরে রয়েছে কালীকৃষ্ণ আশ্রম। সেই আশ্রমেই প্রচলিত আছে এই অভিনব নিয়মে দুর্গাপুজোর। কথিত ১৯৭৮ সালে তেজনন্দ ব্রহ্মচারী স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই পুজোর শুরু করেন। সেই থেকেই মহালয়ার দিন এই আশ্রমে পুজিত হন দেবী। প্রতি বছর মহালয়ার দিনে দেবীকে নানা উপায়ে তুষ্ট করা হয়। এই দিনে হয় ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী এবং দশমীর পুজো। শোনা যায় কালীকৃষ্ণ সরস্বতী ঠাকুরের হাত ধরে প্রথম সূচনা হয়েছিল এই পুজোর। কালীকৃষ্ণ ছিলেন ব্রাহ্মণ পণ্ডিত। অত্যন্ত ধার্মিক এই মানুষটি ছিলেন বড় পরোপকারী।
গ্রামবাসীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে তৈরি হয় ছোট একটি মন্দির। সেখানে নিজেই মূর্তি তৈরি করে প্রতিষ্ঠা করেন কালীকৃষ্ণ। শুরু হয় দুর্গাপুজো। বিশেষত্ব শুধু এখানেই শেষ নয়। এখানে মা যে রূপে পূজিত হন তা আর পাঁচটা জায়গার সঙ্গে মেলে না। চার ছেলেমেয়েকে নিয়ে আসেন না দেবী। বরং তিনি পূজিত হন তাঁর দুই সখী জয়া-বিজয়ার সঙ্গে। মা এখানে সিংহবাহিনী, মহিষমর্দিনী নন। একদিনের পুজো মানেই যে সারাদিন ধরেই দুর্গাপুজো চলে এমনটা মোটেই নয়। বরং মাত্র এক ঘণ্টায় সব বিধি সম্পন্ন করে শেষ করা হয় পুজো। স্থানীয় শিল্পীরাই তৈরি করেন প্রতিমা। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসেন এই বিশেষ পুজো দেখার জন্য।