যুধিষ্টিরের রথের রহস্য
প্রথমেই বলে রাখা দরকার যে যুধিষ্টিরের রথের চাকা মাটি স্পর্শ করতো না। মাটি থেকে কয়েক আঙ্গুল উপরে থাকতো। এভাবেই যুধিষ্টিরের রথেকে ব্যাখ্যা করেছেন ব্যাসদেব।
দ্বাপর যুগের মহাভারতের কাহিনি প্রত্যেকেরই জানা। তবে মহাভারতে এমন অনেক রহস্য ছিল যা অনেকেই জানেন না। মহাভারতের একাধিক রহস্যের মধ্যে একটি হল যুধিষ্ঠিরের রথ মাটি থেকে চার আঙুল ওপরে থাকার ঘটনা। পঞ্চ পাণ্ডবদের মধ্যে জ্যৈষ্ঠ ছিলেন যুধিষ্ঠির। তিনি ধর্মের পথে চলতেন ও কখনও মিথ্যা বলতেন না, এ কারণে তাঁরে ধর্মরাজ বলা হত। কথিত আছে তাঁর রথের চাকা সবসময় ভূমি থেকে ৪ আঙুল ওপরে থাকত। কিন্তু একবার সেটিও মাটি স্পর্শ করেছিল।
যুধিষ্ঠিরের রথের সারথি ছিলেন ইন্দ্রসেন। তবে ইন্দ্রসেনের আগে নকুল, সহদেব ও মদ্ররাজ শল্যও তাঁর বাহন ছিলেন। মহাভারত অনুযায়ী যুধিষ্ঠিরের রথ সবসময় মাটি থেকে ৪ আঙুল ওপরে থাকত। সত্যবাদী ও ধর্মের আশ্রয়ে থাকতেন বলেনই যুধিষ্ঠিরের রথ সবসময় হাওয়ায় উড়ত। উল্লেখ্য যুধিষ্ঠিরের রথের নামই ছিল ধর্মপদ। ভীষ্ম পিতামহ কৌরবদের পক্ষ থেকে যুদ্ধ করেন ও তিনিই ছিলেন তাঁদের সেনাপতি। কিন্তু পরে ভীষ্ম শরশয্যায় থাকার ফলে গুরু দ্রোণাচার্যকে সেনাপতি করা হয়। নিজের অসাধারণ যুদ্ধ কৌশলের সাহায্যে পাণ্ডব সেনাকে ধ্বংস করতে শুরু করেন দ্রোণাচার্য। তাই তাঁকে আটকানো জরুরি হয়ে ওঠে। কিন্তু দ্রোণাচার্যকে পরাজিত করা অর্জুনের পক্ষেও কঠিন হয়ে পড়ে। এদিকে নিজের পুত্র অশ্বত্থামাকে প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন দ্রোণ। তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, কেউ যদি তাঁকে বিশ্বাস করিয়ে দিতে পারে যে অশ্বত্থামার যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করেছে, তা হলে অস্ত্র ত্যাগ করবেন তিনি। একমাত্র তখনই তাঁর বধ সম্ভব।
এমন সময় কৃষ্ণ ষড়যন্ত্র করেন। তিনি এ-ও জানতেন যে যুধিষ্ঠির ছাড়া অন্য কারও কথায় দ্রোণাচার্য বিশ্বাস করবেন না। কৃষ্ণ ভীমকে বলেন অশ্বত্থামা নামক এক হাতির বধ করতে বলেন ও যুধিষ্ঠিরকে সেই বধের সময় সেখানে উপস্থিত থাকতে বলেন। অশ্বত্থামা নামক হাতির বধ করে ভীম দ্রোণাচার্যকে এ কথা জানান। কিন্তু তিনি তা বিশ্বাস করেন না। যুধিষ্ঠিরকে এ কথা জিগ্যেস করায় ধর্মরাজ দ্রোণাচার্যকে বলেন, ‘অশ্বত্থামা হত’, কিন্তু এর পর ক্ষীণ স্বরে ‘ইতি গজ’ বলেন যুধিষ্ঠির। এর পরই অস্ত্র ত্যাগ করে ধ্যানমগ্ন অবস্থায় বসে পড়েন গুরু দ্রোণাচার্য। নিজের প্রতিজ্ঞাপূরণ করে পাঞ্চাল যুবরাজ ধৃষ্টদ্যুম্ন দ্রোণাচার্যের বধ করেন। কিন্তু যুধিষ্ঠির এই মিথ্যা বলেছিলেন বলে তাঁর রথের চাকা মাটিতে পড়ে যায়। যা দেখে অনেকেই চমকে উঠেছিলেন।