www.machinnamasta.in

ওঁ শ্রীং হ্রীং ক্লী গং গণপতয়ে বর বরদ সর্বজনস্ময়ী বশমানয় ঠঃ ঠঃ

July 19, 2025 4:09 am

বৈদিক সন্ধ্যায় বসেছেন হরিপদ। প্রতিদিনের মতো সেদিনও মহর্ষি নগেন্দ্রনাথের শেষ জীবনের সাধন ভূমিতে একাগ্র চিত্তে গায়ত্রী উপাসনা করছেন তিনি। কিন্তু গায়ত্রী জপে ভুল হচ্ছে। হঠাৎই সেখানে আবির্ভাব ঘটল ভাদুড়ী মহাশয় অর্থাৎ পরমহংস নগেন্দ্রনাথের। তিনি সংশোধন করে দিলেন হরিপদর ভুল। অথচ তার অনেক আগেই পার্থিব দেহ পরিত্যাগ করেছেন পরমহংস মহর্ষি নগেন্দ্রনাথ!

ড. শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

তিনি নিজে ছিলেন যোগপুরুষ। ললাটের অর্ধচন্দ্রাকৃতি বিন্দুচক্র ছিল তাঁর নিত্য ধ্যেয় বস্তু। যোগ-শক্তিতেই ছিল তাঁর পরম প্রকাশ। দেহে থাকতে অলৌকিক যোগবলে তিনি কৃপা করেছেন অজস্র মানুষকে। কিন্তু যিনি স্বয়ং বহিরঙ্গে শিব এবং অন্তরঙ্গে বিষ্ণু – তাঁর পক্ষে যে দেহে থাকা এবং না থাকা – দুটোই সমান!

তখন তিনি অর্থাৎ পরমহংস মহর্ষি নগেন্দ্রনাথ দেহ রেখেছেন। তাঁর শেষ জীবনের সাধন ভূমিতে নির্মিত হয়েছে শ্রীশ্রীনগেন্দ্র মঠ। মঠে তিনি নিত্য পূজিত হন। ভাদুড়ী মহাশয় অর্থাৎ পরমহংস মহর্ষি নগেন্দ্রনাথ ভাদুড়ীর এই মন্দির দর্শনে আসেন অসংখ্য মানুষ। মহর্ষিদেবের কৃপায় পূর্ণ হয় তাঁদের কামনা। ধন্য হয় জীবন।

এই মঠেই থাকেন হরিপদ। ১৯৩৪ খ্রীঃ ১১ই নভেম্বর থেকে এখানেই কাটে হরিপদর আবাসিক জীবন। এখানে তিনি রয়েছেন মহর্ষি নগেন্দ্রনাথের মানসপুত্র, শ্রীশ্রীনগেন্দ্র মঠের প্রথম মোহন্ত, সিদ্ধ যোগী ধ্যানপ্রকাশ ব্রহ্মচারীর আশ্রয়ে।

ভক্তিপ্রকাশ ব্রহ্মচারী

এখানেই একদিন ঘটলো এক আশ্চর্য ঘটনা। অন্যদিনের মতো সেদিনও হরিপদ গায়ত্রী জপ করছিলেন। সময়টা সন্ধ্যাকাল। এক মনে বৈদিক সন্ধ্যা করছেন হরিপদ। হঠাৎই তিনি অনুভব করলেন এক আশ্চর্য স্পর্শ। এ স্পর্শ আর কারও নয়, এ স্পর্শ পরমহংস মহর্ষি নগেন্দ্রনাথের। তিনি স্পর্শ করলেন হরিপদর শীর্ষ। হরিপদ কোনও কারণে গায়ত্রী ভুল জপ করছিলেন। সেই ভুল ধরিয়ে দিয়ে ভুল সংশোধন করে দিলেন স্বয়ং মহর্ষিদেব। দেখিয়ে দিলেন গায়ত্রী মন্ত্রের শুদ্ধরূপ জপ। তখনও আশ্চর্যের ঘোর কাটেনি হরিপদর। কারণ মহর্ষিদেব যে শরীরে নেই ২ নভেম্বর ১৯২৬ থেকেই!

আসলে তিনি বাহ্যতঃ দূরে থাকতে পারেন, কিন্তু তাঁর অবস্থান – সর্বদা যে ধামেই। তিনি এবং তাঁর ধাম যে একই।

গায়ত্রী উপাসনার পথ এবং পদ্ধতি সহজ, সরল নয়। এক্ষেত্রে নিয়ম মেনে প্রাণায়াম দ্বারা প্রাণবায়ুকে রুদ্ধ করে অগ্রসর হতে হয়। গায়ত্রী মধ্যস্থ অক্ষর সকলের চব্বিশ দেবতা আছেন। তাছাড়া পঞ্চ কর্মেন্দ্রিয়, পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয় ইত্যাদি চব্বিশ পদার্থ গায়ত্রীর অক্ষরে চিন্তা করতে হয়। তাই প্রয়োজন পথপ্রদর্শকের। আধার উপযুক্ত হলে কৃপা আসেই। তাঁকে যে পথ দেখাতেই হয়। তিনি যে স্বয়ং গুরুতত্ত্ব। এ কারণেই কৃপালাপে ধন্য হলেন হরিপদ। এ অলৌকিক, কিন্তু সত্য!

এই হরিপদই পরবর্তীকালে মহান সাধক ভক্তিপ্রকাশ ব্রহ্মচারী – দণ্ডীস্বামী হরিভক্তি দেবতীর্থ। মহর্ষি নগেন্দ্রনাথ প্রবর্তিত যোগ-ভক্তি মার্গের সিদ্ধ সাধক, মহর্ষিদেবের ত্যাগী শিষ্য ধ্যানপ্রকাশ ব্রহ্মচারীর শিষ্য। ১৯৬৪ খ্রীঃ ইনিই শ্রীশ্রীনগেন্দ্র মঠের দ্বিতীয় মোহন্ত পদে অধিষ্ঠিত হন।

administrator

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *